textile lagoআমিনুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের শেয়ারের প্রতি হঠাৎ করে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। সামনে ডিভিডেন্ড মৌসুমকে বেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের একটু বাড়তি আগ্রহ বেড়েছে। ফলে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে বস্ত্র খাতের শেয়ারে উল্লম্ফন লক্ষ্য করা গেছে। আজ বস্ত্র খাতের ৮৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। অন্যদিকে ব্যাংক খাতের ৭০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে দর পতন ঘটেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের ৪৮টি কোম্পানির মধ্যে ৪০টি বা ৮৩.৩৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। আর ৫টি বা ১০.৪২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ও ৩টি বা ৬.২৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিন টাকার অঙ্কে বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ‘জেড’ ক্যাটাগরির অনুৎপাদনশীল মডার্ণ ডাইং অ্যান্ড স্ক্রিন প্রিন্টিং। কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৮.২০ টাকা।

অন্যদিকে জাহিন স্পিনিংয়ের সর্বোচ্চ ৩.২০ টাকা দর কমেছে। আর অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, এনভয় টেক্সটাইল ও মেট্রো স্পিনিংয়ের শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

প্রথমত, অন্যদিকে ডিভিডেন্ড মৌসুমকে কেন্দ্র করে হাওয়া লেগেছে বস্ত্র খাতেও। বেশ কিছুদিন ধরেই বস্ত্র খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। এ কারণে এ খাতটি লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে বেশ কয়েকবার। সময়ের সাথে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় সেক্টর টেক্সটাইল খাত। তবে হঠাৎ করে ফুলেফেপে ওঠেনি এ খাতটি।

গত কয়েক কার্যদিবস ধরে ধারাবাহিক ভাবে ভাল করেছে এ খাতটি। কখনও দর বৃদ্ধির শীর্ষে আবার কখনও লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলো। এবং এর পেছনে যথাযথ কারন রয়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।

বস্ত্র খাতের মোট ৪৮টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। জুনে কোম্পানিগুলোর হিসাববছর শেষ হয়েছে। আগের বছর দু’একটি ছাড়া বেশিরভাগ কোম্পানিই বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছে।  সে হিসেবে সামনে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আরও ভাল ডিভিডেন্ড আসতে পারে বলে ধারণা বিনিয়োগকারীদের। আর এ জন্যই হয়ত দর বাড়ছে এ খাতের কোম্পানিগুলোর এমনটিই মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

দ্বিতীয়ত, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশী বিনিয়োগ উভয়ই বেড়েছে বস্ত্র খাতে।  তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের ১৫ কোম্পানির শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে, কমেছে ১৮টি কোম্পানিতে। অপরদিকে ৪টি কোম্পানিতে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে আর কমেছে ২টি কোম্পানিতে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীলতা থাকায় অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যে এই খাতটিকে নিয়ে ধীরে ধীরে আস্থার সঞ্চার হচ্ছে।

ধারাবাহিক উত্থানের কারণে দেশের শেয়ারবাজার অনেকটাই বিনিয়োগ উপযোগী হয়ে উঠেছে। যার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশিরাও বিনিয়োগে সক্রিয় হচ্ছেন এই খাতে। আর এসকল বিষয় আকৃষ্ট করছে দেশের সাধারন বিনিয়োগকারীদের। কয়েকটি কোম্পানি ইতিমধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দিয়েছে।সবকিছু মিলে বস্ত্রখাতের জয়জয়কার।তবে বাজার নিয়ে যারা নিয়মিত গবেষণা করেন তাদের ধারনা, বাজারে বেড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা।

আর যখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর প্রবেশ ঘটে, তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি হয়। কারণ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সাধারণত সব সময়ই বিনিয়োগ করার আগে সেই প্রতিষ্ঠান নিয়ে গবেষণা করে। সে কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থার সঞ্চার হয়। সেদিক থেকে বস্ত্রখাতে গত মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে একথা কারো অজানা নয়।

তৃতীয়ত, ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ২০২০ সালের মধ্যেই চীনকে টপকে যাবে বাংলাদেশ। ড্র্যাপার্স নামক ব্রিটিশ দৈনিকে এ সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ড্র্যাপার্স জানাচ্ছে, গত ৯ বছরের তুলনায় শুধু ২০১৬ সালেই বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। টেক্সটাইল ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টে দেখা গেছে, গত নয় বছরে এ হার ১২.২ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩.৪ শতাংশে।

তবে, গত ছয় বছরে ইইউভূক্ত দেশগুলোয় চীনের রপ্তানিকৃত পোশাকের পরিমাণ হচ্ছে ৩৭.৯৯ শতাংশ। যদিও ২০১০ সালের দিকে সেখানকার বাজারে অর্ধেকেরও বেশি পোশাক আমদানি হয়েছিলো চীন থেকে। কিন্তু ২০১৬ সালে আগের অবস্থান হারিয়ে তিন এ নেমে এসেছে চীন। ২০১৩ সালের পর থেকে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখে ইউরোপের দেশগুলোতে সবচেয়ে সস্তায় তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে বাংলাদেশ।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ ও দেশ প্রতিক্ষণ ডটকমকে বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য সব কোম্পানির ক্লোজিং জুনে। ক্লোজিংয়ের প্রভাব পড়ছে কোম্পানিগুলোয়। লভ্যাংশের আশায় এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করছেন তিনি। আর তাই ডিভিডেন্ড আশায় বিনিয়োগকারীরা এসব কোম্পানির দিকে আগ্রহী হয়ে শেয়ার বেচাকেনা করছেন। আর এরই প্রভাব পড়েছে বস্ত্র খাতে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন বাজারে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করায় বেশিরভাগ সাধারণ বিনিয়োগকারী ডে ট্রেডারের ভূমিকা পালন করছিলেন। তাদের পাশাপাশি কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও চুপ ছিলেন। এতে বাজার দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারিয়েছে। তবে বাজেটের পরপরই ঘুড়ে দাড়িয়েছে সব সেক্টর। জুন ক্লোজিংয়ের প্রভাবে বাজার ভবিষ্যতে ইতিবাচক ধারা বজায় থাকবে বলে আশা করছেন তিনি।

এ বিষয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, টেক্সটাইল খাত বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত। এ খাতকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকার অনেক চেষ্টা করছে। তবে কয়েক কার্যদিবস নয় এ খাত যেন সবসময় দেশের পুঁজিবাজার এগিয়ে নিতে সহায়ক হয় সে বিষয়টি মাথায় নিয়ে এগোতে হবে। শুধু পুঁজিবাজার নয় দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সম্বাবনাময় খাতগিুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের প্রেসিডেন্ট মিজান-উর-রশিদ-চৌধুরি বলেন, এখন পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। অন্যদিকে অন্যান্য খাতের মতে, বস্ত্র খাতেরও বেশিরভাগ শেয়ারে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে, যা এসব শেয়ারের দর বৃদ্ধির একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। তবে ভাল কোম্পানিগুলোর দাম বাড়ুক এটা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই কারন ভাল কোম্পানিগুলো বাজার উন্নয়নে ভূমিকা রাখে সবসময়। কিন্তু খারাপ কোম্পানিগুলোর দামও যে এ সুযোগে বাড়ছে এটাকে ঠেকাতে হবে ।কারন এরা বাজারের জন্য ক্ষতিকর।