nbr lagoবিশেষ প্রতিনিধি, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর রাজস্ব সংক্রান্ত ফাঁকি বা অনিয়ম ধরতে বিশেষায়িত নিরীক্ষা শুরু করেছে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তালিকাভুক্ত  শীর্ষ ৯ কোম্পানির ভ্যাট পরিশোধের হার কমে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন ও বিপণন বাড়লেও সঠিক হারে ভ্যাট দিচ্ছে না।

সম্প্রতি পুঁজিবাজারে এমন ৯ কোম্পানিকে চিহ্নিত করে তালিকা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) শাখা। ভ্যাট পরিশোধের হার কমে যাওয়ার ফলে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা গেছে। তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিতেও শিগগিরই এ ধরনের অডিট শুরু হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট বা এলটিইউ-ভ্যাটের একটি বিশেষজ্ঞ দল এ অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এর আগে এলটিইউ-ভ্যাট বিভাগ থেকে এ ধরনের বিশেষায়িত কোনো অডিট পরিচালনা করা হয়নি।

বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করত। আর প্রতিমাসে কোম্পানিগুলোর জমা দেওয়া রিটার্নের তথ্য যাচাই-বাছাই করত ভ্যাট বিভাগ। কিন্তু এবারই প্রথম কোম্পানির যাবতীয় হিসাবপত্র বিশেষভাবে অডিটের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রেয়াত নেওয়ার তথ্য, বিভিন্ন কারিগরি ও প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যারের নামে ব্যয় হওয়া অর্থ কিংবা অন্য যে কোনো উপায়ে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে কি না তা যাচাই করছে এ দল।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৯ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবাগ সিমেন্ট লিমিটেড, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাটা সু কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। ঔষুধ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে রেনেটা লিমিটেড, ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড, লিবরা ইনফিউশন লিমিটেড ও ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড, বেসরকারি ব্রাক ব্যাংক রয়েছে । এগুলো নিরীক্ষার  তালিকায় রয়েছে।

সূত্র জানায়, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে এর আগে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে এনবিআর। এছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সময় ভ্যাট ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে এলটিইউ এর একজন কর্মকর্তা বলেন, আগামী সপ্তাহে তালিকা অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে। কাগজপত্র পেলে টিম কাজ শুরু করবে। অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী নিরীক্ষায় ভ্যাট ফাঁকি পাওয়া যাবে।

এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এসব কোম্পানির ক্ষেত্রে ভ্যাট বিভাগের এ ধরনের অডিট এটিই প্রথম। এতদিন এ ধরনের কোম্পানির ক্ষেত্রে বিটিআরসি অডিট পরিচালনা করত। কিন্তু ভ্যাট বিভাগের আইন ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অবৈধভাবে কোনো রেয়াত নেওয়া হয়েছে কি না কিংবা অন্য কোনো উপায়ে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে কি না তা যাচাই করা হচ্ছে অডিটের মাধ্যমে।

সূত্র জানায়, বিগত ৫ বছর প্রতিষ্ঠান কী পরিমাণ ভ্যাট প্রদান করেছে, কোন কোন উৎস থেকে ভ্যাট দিয়েছে তা নিরীক্ষা করা হবে। তবে পূর্ববর্তী নিরীক্ষা সময় হতে হালনাগাদ সময় পর্যন্ত নিরীক্ষা করা হবে।

আগামী সপ্তাহে এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন প্রক্রিয়া, মজুদ পণ্য ও সেবা, উপকরণ পরিদর্শন, মূসক পুস্তক, বাণিজ্যিক দলিল, হিসাব ও নথিপত্র, ব্যাংক লেনদেন, অডিট রিপোর্টসহ নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিতে এলটিইউ থেকে চিঠি দেওয়া হবে। চিঠি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় এসব তথ্যাদি এলটিইউতে জমা দিতে হবে।

জানা গেছে এইসব প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা খতিয়ে দেখতে ২ জন সহকারি কমিশনার ও ৪ জন উপ কমিশনারের নেতৃত্বে ৬টি টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এ টিমের তত্ত্বাবধান করবেন এলটিইউ এর অতিরিক্ত কমিশনার।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আমদানি-রপ্তানি, স্থানীয় ক্রয় সংক্রান্ত হিসাবের কাগজপত্র, প্রাসঙ্গিক দলিল, আয়কর বিভাগসহ অন্যান্য সংস্থার সাথে আড়াআড়িভাবে যাচাইপূর্বক সম্ভাব্য ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক পরিহার করে বছরভিত্তিক ভ্যাট ফাঁকি উৎঘাটন করা হবে।

ক্ষেত্র বিশেষে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স সেল (সিআইসি) থেকে আমদানি-রপ্তানির তথ্য সংগ্রহ করে আড়াআড়িভাবে যাচাই করে মূসক বা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে কিনা তা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমদানির তথ্য কাস্টম হাউস বা শুল্ক স্টেশন থেকে সংগ্রহ করা হবে।

নিরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবে কর্মকর্তারা। কোন প্রতিষ্ঠানের গৃহীত রেয়াতের অনুপাতে উপকরণের মজুদ রয়েছে কিনা কায়িক পরীক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হবে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন ৩০ কার্য দিবস বা এক মাসের মধ্যে জমা দিতে হবে।