ricepicবিশেষ প্রতিবেদক, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বেড়েইে চলেছে চালের দাম। কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। গত এক সপ্তাহে চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) বেড়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। খুচরা, পাইকারি ও মাঠপর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের বাজারের এ অস্থিরতার পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ রয়েছে।

এগুলো হচ্ছে মিল মালিক ও বড় কৃষকদের মজুদদারি, দফায় দফায় বন্যা এবং রফতানিকারক দেশগুলোর চালের দাম বাড়িয়ে দেয়া। এছাড়া কৃত্রিমভাবে এসব সংকট তৈরি করে চালের দাম বাড়ানো হলেও এগুলো নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। ঢাকা, রাজশাহী, যশোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শেরপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এসব তথ্য।

রাজধানীর বাজারে গতকাল মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ৩,১০০ থেকে ৩,২০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ২,৮০০ টাকা। বস্তা প্রতি বেড়েছে ৩শ’-৪শ’ টাকা। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৬৪-৬৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬৩-৬৪ টাকা। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি বস্তা ৩,৫০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩,২০০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬৪-৬৫ টাকা। গুটি স্বর্ণা বস্তা বিক্রি হয়েছে ২,৬০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২,৩০০ টাকা। প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকায়,

যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫-৪৬ টাকা। বিআর-২৮ চালের বস্তা বিক্রি হয়েছে ২,৮০০ থেকে ২,৯০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২,৬০০ থেকে ২,৭০০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৬-৫৭ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৩-৫৪ টাকা। চিনিগুঁড়া চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি বস্তা ৪,৫০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪,৩০০ টাকা। খুচরা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৮৫-৯০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ টাকা।

দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কাওরানবাজারের মেসার্স মতলব ট্রেডার্সের মালিক আবু রায়হান জগলু বলেন, মিল মালিকরা চাল মজুদ করায় দাম বেড়েছে। তারাই সবকিছু বলতে পারেন, কেন চালের দাম বেড়েছে।

কাওরানবাজার কিচেন মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চাল ব্যবসায়ী হাজী লোকমান হোসেন বলেন, হাওর অঞ্চলে বন্যা ও উত্তরাঞ্চলে দ্বিতীয়বার বন্যা, মিল মালিক ও বড় কৃষকদের মজুদদারি মনোভাব এবং ধানের জমিতে পাট, অন্য ফসল ও মাছের ঘের তৈরির কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় চালের দাম বাড়ছে। এছাড়া সরকার চালের শুল্ক কমিয়ে দিলেও ভারত, থাইল্যান্ডসহ অন্য দেশগুলো চালের দাম বাড়িয়েছে। ফলে বেশি দামেই আমদানি করতে হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী কবির হাসান লিটন বলেন, দেশে চালের সংকট নেই। মিনিকেট চাল যে ধান দিয়ে তৈরি হয় সেই ধান মজুদ করেছেন মিলাররা। তাছাড়া গ্রামে মিলের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু সেই তুলনায় ধানের উৎপাদন বাড়েনি। ফলে প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় ধানের দাম বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে চালের ক্ষেত্রে।

খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামও দায়ী করেছেন একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের। তিনি বলেন, আমরা চালবাজি ও ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছি। কারণ বাংলাদেশেই এক কোটি টন চাল আছে, তারপরও এ অবস্থা।

হুশিয়ারি দিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, মজুদদার, আড়তদার, মিল মালিকসহ সবার প্রতি আহ্বান জানাব- এখনও সময় আছে ভালো হয়ে যান। আপনারা যেভাবে (চালের) দাম বাড়াচ্ছেন, যেভাবে সিন্ডিকেট করে চালবাজি শুরু করেছেন, চাল নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন, একটা বিভ্রাট সৃষ্টির চেষ্টা করছেন- এটা কোনো অবস্থাতেই বরদাস্ত করা হবে না। এখনই শেষ সুযোগ, আপনারা ভালো হয়ে যান। এদিকে চালের এমন লাগামহীন মূল বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের।

শেওড়াপাড়া বাজারের ক্রেতা আকতার হোসেন বলেন, যেভাবে লাগামছাড়া দাম বাড়ছে এতে ভাত খাওয়াই ছেড়ে দিতে হবে, যা আয় হয় তার বেশিরভাগই চলে যাচ্ছে চাল কিনতে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে তো সাধারণ মানুষের পুষ্টির অভাব দেখা দেবে। কেননা আমাদের মতো মানুষ এখন বাধ্য হয়েই তরকারি কম করে কিনছে।