newsweekদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার কর্তৃক বারবার বাংলাদেশের আকাশসীমা লংঘনের জের ধরে দুই দেশ যুদ্ধে জড়াতে পারে কিনা -সেই প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিউজ উইক। যুক্তরাষ্ট্রের এ সংবাদ সমায়িকীতে মিয়ানমার কর্তৃক কয়েক দফায় বাংলাদেশের আকাশসীমা লংঘন ও তার প্রতিবাদের বিষয় উল্লেখ করে এ প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছে।

মিয়ানমারের উসকানিমূলক এ ধরনের কাজের জন্য ‘অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি’ দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে; রোহিঙ্গা সংকটের জেরে যা এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়েছে।

রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অভিযানে ‘জাতিগত নিধনের পাঠ্য বইয়ের’ উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।

বাংলাদেশ বলছে, গত ১০, ১২ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের ড্রোন এবং হেলিকপ্টার তিন দফায় বাংলাদেশের আকাশসীমা লংঘন করেছে। এ অভিযোগে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের দূতাবাসের শীর্ষ এক কর্মকর্তাকে তলব করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

শুক্রবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলছে, বার বার এ ধরনের উসকানিমূলক কাজের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা। একইসঙ্গে এ ধরনের সার্বভৌমত্বের লংঘন যাতে আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

মিয়ানমারের সরকারের মুখপাত্র জ্য তে বলেছেন, বাংলাদেশের অভিযোগের ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে এর আগে বাংলাদেশের এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিয়ানমার।

জ্য তে বলেন, বাংলাদেশ যে তথ্য দিয়েছে- তা পরীক্ষা করে দেখবে মিয়ানমার। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, আমাদের দুই দেশ শরণার্থী সংকট মোকাবেলা করছে। ভালো বোঝাপড়ার মাধ্যমে আমাদের সমন্বয় প্রয়োজন।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রাখাইনে পুলিশের ৩০টি তল্লাশি চৌকি ও একটি সেনাক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় ১২ পুলিশ নিহত হওয়ার পর ওই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ও রাখাইনের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করে। মানবাধিকার পর্যবেক্ষক ও রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতেই সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী ও বৌদ্ধ ভিক্ষুরা।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে যোগ দিতে শনিবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা ত্যাগ করেছেন। প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে ও ‘জাতিগত নিধন’ বন্ধ করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগে জাতিসংঘের এই অধিবেশনের আহ্বান জানাবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

রাখাইনে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুটেরাস ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। জাতিসংঘ মহাসচিব বলছেন, রাখাইনে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে মিয়ানমার।

তবে মিয়ানমার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলছে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন পরিচালনা করছে আইনশৃংখলা বাহিনী। গত ২৫ আগস্ট পুলিশি তল্লাশি চৌকি ও সেনা ক্যাম্পে হামলার দায় স্বীকার করেছে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের এই সংগঠন। গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে একই ধরনের হামলার অভিযোগ ছিল সংগঠনটির বিরুদ্ধে।

তবে এআরএসএ বলছে, তারা রোহিঙ্গাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছেন। একইসঙ্গে বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন। মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং বলেছেন, ২৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ৯৩ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিদ্রোহীরা তাদের ঘাঁটি গড়ার চেষ্টা করেছে।

এদিকে বেসামরিক ব্যক্তিদের সুরক্ষায় মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। উপমার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্যাট্রিক মারফি আগামী সপ্তাহে মিয়ানমার সফরে আসার কথা রয়েছে। তবে চীন মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদ দমনে দেশটির অভ্যন্তরীণ পদক্ষেপে সমর্থন জানিয়েছে। একইসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদেও মিয়ানমারের পক্ষে সাফাই গেয়েছে চীন।