Premier-Cement-Bangladeshদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানি প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিডের মুনাফায় পতনের নেপথ্যের কারন রয়েছে।  সমাপ্ত হিসাব বছরে গ্রস মুনাফা কমেছে ১৪.৫৭ শতাংশ এবং করপরবর্তী মুনাফা কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, আর্ন্তজাতিক বাজারে গত এক বছরে ক্লিংকারের দাম ১০-১২ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় সিমেন্ট উৎপাদনে আনুষঙ্গিক খরচও বেড়েছে। তবে দেশের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোম্পানি সিমেন্টের দাম বাড়ায়নি। এ কারণে বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও বছর শেষে প্রিমিয়ার সিমেন্টের মুনাফা কমেছে। তবে সিমেন্টের দাম সমন্বয় হলে কোম্পানির মুনাফাও বাড়বে বলে আশাবাদী কোম্পানিটি।

প্রিমিয়ার সিমেন্টের কোম্পানি সচিব কাজী শফিকুর রহমান জানান, সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার। টানা নিম্নমুখী থাকার পর ২০১৬ সালের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করে। এক বছরের ব্যবধানে তা প্রায় ১১ শতাংশ বেড়েছে।

২০১৬ সালের শুরুতে প্রতি মেট্রিক টন ক্লিংকার কিনতে ৩৮-৩৯ ডলার খরচ হলেও বর্তমানে তাতে ৪২-৪৩ ডলার খরচ হয়। অন্যদিকে দেশে সিমেন্টের দাম অপরিবর্তিত রেখেছে প্রিমিয়ার সিমেন্ট। পাশাপাশি উত্পাদন ও আনুষঙ্গিক কিছু ব্যয় বাড়ায় গেল হিসাব বছরে কোম্পানির মুনাফা সামান্য কমেছে। তবে প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবসা প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক বলে জানিয়েছেন তিনি।

নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে প্রিমিয়ার সিমেন্টের নিট বিক্রি ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৩৩ কোটি ২৯ লাখে উন্নীত হয়েছে। এর আগের বছর তাদের মোট বিক্রি ছিল ৯৩৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

আগের বছর কোম্পানির উত্পাদন খরচ মেটাতে মোট রাজস্ব আয়ের ৭৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ ব্যয় করলেও সর্বশেষ বছরে তা ৮৩ দশমিক ৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ফলে কোম্পানিটির গ্রস মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ১৪. ৫৭ শতাংশ কমে গেছে। সর্বশেষ হিসাব বছরে প্রিমিয়ার সিমেন্টের গ্রস মুনাফা হয়েছে ১৬৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা, আগের বছর যা ছিল ১৯৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসার আনুষঙ্গিক খরচ বাড়ায় বছর শেষে প্রিমিয়ার সিমেন্টের নিট মুনাফা আরো বেশি হারে কমেছে । সর্বশেষ হিসাব বছরে নিট মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ১৮.৬৮ শতাংশ কমেছে। ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির করপরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৫৬ কোটি ২০ লাখ টাকা, আগের বছর যা ছিল ৬৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। শেয়ারপ্রতি বার্ষিক আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫.১৭ টাকা, আগের বছর যা ছিল ৬ .৪৮ টাকা। ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪০.৭১ টাকা।

এদিকে ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৭ হিসাব বছরের জন্য ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ করেছে প্রিমিয়ার সিমেন্টের পরিচালনা পর্ষদ। নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, লভ্যাংশ ও অন্যান্য এজেন্ডা অনুমোদনের জন্য ১৪ অক্টোবর বেলা ১১টায় চট্টগ্রামের চিটাগং ক্লাব অডিটোরিয়ামে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজন করবে প্রতিষ্ঠানটি। রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর।

২০১৬ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল প্রিমিয়ার সিমেন্ট। ২০১৫ হিসাব বছরে ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা। তখন ইপিএস ছিল ৩.৮৩ টাকা।

২০১৩ সালে শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত প্রিমিয়ার সিমেন্টের অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১০৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। রিজার্ভ ২২৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৮০.৮৩ শতাংশই এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, প্রতিষ্ঠান ১০.৪২ শতাংশ, বিদেশী বিনিয়োগকারী দশমিক ০.১ শতাংশ ও বাকি ৮.৭৪৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।