dse-up-dowenমোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যাংক খাতে বইছে সুবাতাস। আজ বোরবার লেনদেন শুরু থেকেই ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার ক্রয় করা নিয়ে হুলস্থুল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। তবে ব্যাংকের এরকম উল্লফন দর বাড়া বাজারের জন্য ভাল লক্ষণ নয় বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। কারন বাজার একটানা বাড়া যেমন ভাল লক্ষণ, নয় তেমনি একটানা দর বাড়া ভাল লক্ষণ নয়। গত এক মাসের ব্যবধানে অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ারের দর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দর বাড়ছে।

এদিকে আজ ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে একচেটিয়া দাপট দেখিয়েছে ব্যাংকিং খাতের কোম্পানিগুলো। ফলে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমার পরও মূল্য সূচক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।

এদিকে ব্যাংক খাতের শেয়ারের দর বাড়লেও ৯ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালদের (এমডি) বেতন ও ফি অনেক কমে এসেছে। ব্যাংকের পারফরমেন্স সন্তোষজনক না হওয়ার কারণে এমন হতে পারে বলে মনে করছেন ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা। ২০১৬ সালের একই সময়ের তুলনায় ২০১৭ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) এই বেতনাদি কমেছে। ব্যাংকগুলো থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ায় কিছু ব্যাংকের নিট মুনাফা কমেছে। হয়তো এ কারণে ব্যাংকের এমডিদের বেতদনাদি কমেছে।

বেতনাদি কমে যাওয়া ব্যাংকগুলো হল: ন্যাশনাল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ইউসিবি, সাউথইস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, উত্তরা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও দি সিটি ব্যাংক।

দেখা গেছে, আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথমার্ধে এমডির পেছনে সবচেয়ে বেশি হারে ব্যয় কমেছে ন্যাশনাল ব্যাংকের। ২০১৬ সালের প্রথমার্ধে এমডির পেছনে ৩১ লাখ ১ হাজার টাকা ব্যয় করা ব্যাংকটির ২০১৭ সালের একই সময়ে হয়েছে ৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

এ হিসাবে এমডির বেতনাদি বাবদ ব্যয় কমেছে ৭৩ শতাংশ। ৪০ শতাংশ কমে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এবি ব্যাংক ও এনসিসি ব্যাংক। এছাড়া তৃতীয় স্থানে থাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ২৮ শতাংশ ব্যয় কমেছে।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী এ্যাড. মাহামুদুল আলম বলেন, পুঁজিবাজার আপন গতিতে চলছে না। বর্তমানে যে হারে ব্যাংক খাতের শেয়ার বাড়ছে তাতে বাজারের ভবিষ্যত অবস্থা সুখবর নয়। কারন শেয়ারের দর বাড়বে এটা ভাল লক্ষণ। তবে একটানা বাড়া যেমন ভাল লক্ষণ নয়, তেমনি একটানা দরপতন কাম্য নয়। তাই বিনিয়োগকারীদের বুঝে মুনে বিনিয়োগ করা উচিত।

গত এক মাসের ব্যাংক খাতের শেয়ারের পরিসংখ্যান দেখলে বুঝা যায় যে, এই সময়ের ব্যাংক খাতের শেয়ারের দর ৩০ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশ দর বাড়ছে।

এর মধ্যে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ২০ আগষ্ঠ ২৫ টাকা দর থাকলেও আজ ১৭ সেপ্টেম্বর এ কোম্পানির শেয়ারের দর ৩৩.৫০ টাকা পর্যন্ত উঠানামা করে। ফলে এসআইবিএল ব্যাংকের শেয়ারের দর এক মাসে প্রায় ৩৭ শতাংশ বাড়ছে। এর মধ্যে অধিকাংশ দিনই এ ব্যাংকের লেনদেন ব্লক মার্কেটে লেনদেন হয়।

আলআরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ২০ আগষ্ঠ ২০ টাকা দর থাকলেও আজ ১৭ সেপ্টেম্বর এ কোম্পানির শেয়ারের দর ২৭ টাকা পর্যন্ত উঠানামা করে। ফলে আল আরাফাহ ব্যাংকের শেয়ারের দর এক মাসে প্রায় ৩৫ শতাংশ বাড়ছে।

ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ২০ আগষ্ঠ ১৩.৫০ টাকা দর থাকলেও আজ ১৭ সেপ্টেম্বর এ কোম্পানির শেয়ারের দর ১৭.৭০ টাকা পর্যন্ত উঠানামা করে। ফলে এ ব্যাংকের শেয়ারের দর এক মাসে প্রায় ৩২ শতাংশ বাড়ছে।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ২০ আগষ্ঠ ১৮ টাকা দর থাকলেও আজ ১৭ সেপ্টেম্বর এ কোম্পানির শেয়ারের দর ২৩.৫০ টাকা পর্যন্ত উঠানামা করে। ফলে এ ব্যাংকের শেয়ারের দর এক মাসে প্রায় ৩১ শতাংশ বাড়ছে।

প্রিমিয়ার ব্যাংক ২০ আগষ্ঠ ১৩.৫০ টাকা দর থাকলেও আজ ১৭ সেপ্টেম্বর এ কোম্পানির শেয়ারের দর ১৭.৫০ টাকা পর্যন্ত উঠানামা করে। ফলে এ ব্যাংকের শেয়ারের দর এক মাসে প্রায় ৩১ শতাংশ বাড়ছে।

এক্সিম ব্যাংক ২০ আগষ্ঠ ১৩.৫০ টাকা দর থাকলেও আজ ১৭ সেপ্টেম্বর এ কোম্পানির শেয়ারের দর ১৭ টাকা পর্যন্ত উঠানামা করে। ফলে ব্যাংকের শেয়ারের দর এক মাসে প্রায় ২৮ শতাংশ বাড়ছে।

এদিন লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধি উভয় ক্ষেত্রেই আধিপত্য বিস্তার করে ব্যাংকিং খাতের কোম্পানিগুলো। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষ ২০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের প্রতিষ্ঠানই ১১টি। আর শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় রয়েছে সাতটি ব্যাংক। অপরদিকে দাম বাড়ার শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাংক রয়েছে পাঁচটি।

ব্যাংকিং খাতের এমন দাপটে এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে ৩৬ পয়েন্ট। আর লেনদেন বেড়েছে ৮৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএসসিএক্স বেড়েছে ৫৭ পয়েন্ট। আর লেনদেন বেড়েছে ২৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোববার ডিএসইতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স’র উত্থানের মাধ্যমে লেনদেন শুরু হয়। লেনদেনের প্রথম ৫ মিনিটেই ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর সূচক নিম্নমুখী হয়ে পড়ে। বেলা সাড়ে ১১টায় ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে যায়।

তবে আধা ঘণ্টার ব্যবধানেই ঊর্ধ্বমুখী হয় সূচক, যা দিনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফলে সূচকের বড় উত্থানের মাধ্যমে লেনদেন শেষ হয়। লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৬ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে অপর দুটি মূল্য সূচক। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৯১ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২০৮ কোটি ৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ১২৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৮৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বাজারে লেনদেন হওয়া ১৩৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। অপরদিকে দাম কমেছে ১৫১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪১টির দাম।

টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার। এদিন কোম্পানির ৪৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ৪৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।