cement lagoআসিফুজ্জামান পৃথিল , দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আবাসন খাতে গতি না থাকলেও বাড়তি গ্রামীণ চাহিদা ও সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে ভর করে সুদিন এসেছে দেশের সিমেন্ট খাতে। চাহিদা ভালো থাকায় সিমেন্ট খাতের বেশির ভাগ কারখানা এখন তাদের উৎপাদন ক্ষমতার বড় অংশ ব্যবহার করতে পারছে।

অন্যদিকে ভবিষ্যৎ বাজারকে মাথায় রেখে তারা বড় ধরনের সম্প্রসারণেও যাচ্ছে। এর প্রভাব পরেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ খাতের ৭টি কোম্পানির উপর। এক মাসের ব্যবধানে এই খাতের অধিকাংশ কোম্পানিতেই বেড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ।

২০১৭ সালের ৩১ জুলাই হতে ৩১ আগস্ট মেয়াদকালে ৪টি কোম্পানিতে বেড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ। আর এই খাতের ২টি বহুজাতিক কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে। মেঘনা সিমেন্ট মিলস লিমিটেডে কোন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ নেই। যদিও ২০১৬ সালের বছর সমাপনীতে এই কোম্পানিটির ২৮.৮৭ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে।

এ খাতের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, উৎপাদনক্ষমতার সম্প্রসারণে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার কাজ বছর খানেকের মধ্যে শেষ হবে। এতে নতুন বিনিয়োগ হবে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে সিমেন্ট উৎপাদনক্ষমতা এখনকার চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়বে।

বর্তমানে দেশে উৎপাদনে আছে ৩৪টি সিমেন্ট কারখানা। এদের মোট উৎপাদনক্ষমতা বছরে প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ টন। সিমেন্ট উৎপাদকদের সমিতির তথ্যমতে, এখন বছরে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টন সিমেন্ট উৎপাদিত হচ্ছে। এতে ব্যবহৃত হচ্ছে কারখানাগুলোর উৎপাদনক্ষমতার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বাধিক বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। তাঁদের হাতে রয়েছে বাংলাদেশের ৭.০৫ শতাংশ বাজারের নিয়ন্ত্রণ। এছাড়াও লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট ৬.৮৭ শতাংশ, এম আই সিমেন্ট ৬.৫৮ শতাংশ এবং প্রিমিয়ার সিমেন্ট ৬.৫৯ শতাংশ বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

বাংলাদেশ থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য, মিয়ানমার ও নেপালে সিমেন্ট রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ আছে। তবে যোগাযোগ অবকাঠামোর অভাব ও নানা শুল্ক-অশুল্ক বাধায় তা ধরা যাচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানে পণ্যের অবাধ যাতায়াত সম্ভব হলে বাংলাদেশের সিমেন্ট রপ্তানি বাড়তে পারে বলে আশা করছেন উদ্যোক্তারা।

সিমেন্ট রপ্তানিকারকেরা জানান, নেপালে সিমেন্ট রপ্তানি করা যাচ্ছে না, কারণ বাংলাবান্ধা থেকে নেপালের কাঁকরভিটা পর্যন্ত যেতে দুই দফা পণ্য ওঠাতে-নামাতে হয়। কারণ, বাংলাদেশের ট্রাক সরাসরি নেপাল যেতে পারে না। এতে খরচ বেড়ে যায়।

এসব বিপুল সম্ভাবনা আর উৎপাদন বৃদ্ধির খবরেই এই খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে বলে মত দিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। যেসকল কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে সেগুলো হলো আরামিট সিমেন্ট লিমিটেড, কনফিডেন্স সিমেন্ট লিমিটেড, এম আই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লিমিটেড এবং প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেড।

আরামিট সিমেন্ট লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই কোম্পানিটির ১৭.০১ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। ৩১ আগস্ট তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯.৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ ১ মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে ১.৫৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে। কোম্পানিটি ৩য় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ০.৯২ টাকা শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছে।
কনফিডেন্স সিমেন্ট লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই কোম্পানিটির ২৬.০৭ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। ৩১ আগস্ট তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬.১১ শতাংশ। অর্থাৎ ১ মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে ০.০৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে। কোম্পানিটি ৩য় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ৩.৬৫ টাকা শেয়ারপ্রতি আয় করেছে।

হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই কোম্পানিটির ২৬.৮৭ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। ৩১ আগস্ট তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬.৩১ শতাংশ। অর্থাৎ ১ মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে ০.৫৬ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে। কোম্পানিটি তাঁদের ২য় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ৬.৪ টাকা শেয়ারপ্রতি আয় করেছে।

লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই কোম্পানিটির ১৪.৫২ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। ৩১ আগস্ট তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪.৩২ শতাংশ। অর্থাৎ ১ মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে ০.২০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে। কোম্পানিটি তাঁদের ২য় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ০.০৭ টাকা শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছে। তবে কোম্পানিটি অর্ধবার্ষিকে ০.১৯ টাকা শেয়ারপ্রতি আয় করেছে।

এম আই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই কোম্পানিটির ১৭.১৮ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। ৩১ আগস্ট তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭.২২ শতাংশ। অর্থাৎ ১ মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে ০.০৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে। কোম্পানিটি ৩য় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ১.৩৬ টাকা শেয়ারপ্রতি আয় করেছে।

প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই কোম্পানিটির ১০.২০ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। ৩১ আগস্ট তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০.৪২ শতাংশ। অর্থাৎ ১ মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে ০.২২ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে। কোম্পানিটি ৩য় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ৩.৯৩ টাকা শেয়ারপ্রতি আয় করেছে।