Lafarge-Cementদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডাররা বিশেষ সাধারণ সভায় ১১ কোটি ৭০ লাখ ডলারে (৯০০ কোটি টাকার বেশি) হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের শতভাগ শেয়ার কেনার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছিলেন।

বিধি মোতাবেক তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির শেয়ার বিক্রির এ অর্থ বিদেশে বিক্রেতা কোম্পানির হেডকোয়ার্টারে পাঠাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি চেয়েছিল লাফার্জ সুরমা। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি তাদের এ অধিগ্রহণ বাবদ ৫০৪ কোটি ৭৮ লাখ ১৯ হাজার ৯৪০ টাকা বিদেশে পাঠানোর অনুমোদন দেয়।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকারান্তরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হোলসিম বাংলাদেশের ৮৮ হাজার ২৪৪টি (শতভাগ) শেয়ারের জন্য এ মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক লাফার্জ সুরমা কর্তৃক প্রস্তাবিত ৪৬ শতাংশ কম দর অনুমোদন করলো হোলসিম বাংলাদেশের শতভাগ শেয়ার দর। এতে বোধহয় বিষয়টি জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতার পথে পড়ে গেল।

উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ মারফত লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জানায়, এ বিষয়ে তাদের অথরাইজড ডিলার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংককে দেয়া এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট ৬ কোটি ২৫ লাখ ২৭ হাজার ১৮৮ ডলারে (১৭ সেপ্টেম্বরের বিনিময় হারের ভিত্তিতে) হোলসিম বাংলাদেশের সব শেয়ার অধিগ্রহণ এবং সে অর্থ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হোল্ডারফিন বি.ভির নামে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে।

এদিকে ক্রেতা ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ঐকমত্যের চেয়ে প্রায় ৪৬ শতাংশ কম দামে হোল্ডারফিন বি.ভি লাফার্জ সুরমার কাছে হোলসিম বাংলাদেশের সব শেয়ার বিক্রি করতে সম্মত হবে কিনা, সে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি জানিয়েছে, এ বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আবারো আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানি দুটি একীভূতকরণের পথে আবার হয়তো জটিলতাই তৈরী হলো।

এদিকে, অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সামনে রেখে লাফার্জ সুরমা তাদের কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রাখে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড। যদিও স্টক এক্সচেঞ্জে এখনো কোম্পানিটির পুরনো নামই ব্যবহার হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে গ্রুপ পর্যায়ে ফরাসি সিমেন্ট জায়ান্ট লাফার্জ ও সুইস হোলসিম একত্র হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী দুই গ্রুপের ব্যবসা একীভূত হয়ে আসে। বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত লাফার্জ সুরমা সিমেন্টের মুখ্য শেয়ারহোল্ডার লাফার্জ গ্রুপ।

অন্যদিকে পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের ৭৪ শতাংশ শেয়ার ছিল হোলসিম গ্রুপ তথা হোল্ডারফিন বি.ভির হাতে। ২১ শতাংশ সিয়াম সিটি ও সিয়াম সিমেন্ট এবং বাকি ৫ শতাংশ ছিল স্থানীয় ট্রান্সকম গ্রুপের হাতে। একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সহজ করতে হোল্ডারফিন বি.ভি দুই গ্রুপের হাতে থাকা ২৬ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, তখন হোলসিম বাংলাদেশের সব শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

সিমেন্ট খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত আমলে নিয়ে হোলসিম শেয়ারের ভ্যালুয়েশন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সিমেন্ট খাতের মুনাফায় নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। হোলসিম বাংলাদেশের পূর্ববর্তী ভ্যালুয়েশনগুলোর সময় সিমেন্ট খাতের চিত্রটি আরো ভালো ছিল।

এ কারণেই অংশীদারদের মধ্যে শেয়ার হস্তান্তরে কোম্পানির ভ্যালুয়েশন হয় ১৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার, পরবর্তীতে আন্তঃগ্রুপ অধিগ্রহণে তা নেমে আসে ১১ কোটি ৭০ লাখ ডলারে এবং সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিবেচনায় তা সাড়ে ৬ কোটি ডলারেরও নিচে নেমে আসে।