mjl lagoবিশেষ প্রতিবেদক, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি মবিল যমুনা বাংলাদেশ লিমিটেড নানা প্রতিকুলতার মাঝেও ব্যবসায় ভালোই যাচ্ছে। ফলে এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেডের তৃতীয় প্রান্তিকের কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫ টাকা ১১ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৬৪ পয়সা। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্য (এনএভি) হয়েছে ৩২ টাকা ৮৭ পয়সা।

গত বছরে এনএভি ছিল ৩০ টাকা ৫২ পয়সা। সর্বশেষ ৩ মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানির সমন্বিতভাবে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৯৬ পয়সা । যা এর আগের বছর শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় ছিল (কনসোলিডেটেড ইপিএস) ১ টাকা ৩৭ পয়সা। তবে কোম্পানির জুন ক্লোজিং ডিভিডেন্ড ঘোষনার মৌসুম। বিনিয়ো্গকারীরা অধীর আগ্রহে আছে কোম্পানির লভ্যাংশের অপেক্ষায়।

সম্প্রতি অত্যাধুনিক তেলের ট্যাঙ্কার কিনছে এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, এতে কোম্পানিটির ব্যয় হয় ১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। ট্যাঙ্কারটি হবে ১ লাখ ৭ হাজার ১৬৯ মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন। জুন ক্লোজিংয়ের বাধ্যবাধকতায় ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১৮ মাসে হিসাব বছর গণনা করেছে এমজেএল বাংলাদেশ।

৩০ জুন পর্যন্ত ১৮ মাসের জন্য অন্তর্বর্তী ৩০ শতাংশসহ মোট ৬০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ পেয়েছেন এর শেয়ারহোল্ডাররা। সে সময়ে ১৮ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয়  (ইপিএস) হয়েছে ৭ টাকা ৭২ পয়সা, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে যা ছিল ৪ টাকা ১৮ পয়সা।

এদিকে সদ্য সমাপ্ত ২০১৭ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) ৫ টাকা ১১ পয়সা ইপিএস দেখিয়েছে এমজেএল বিডি, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৩ টাকা ৬৪ পয়সা। ৩১ মার্চ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৩২ টাকা ৮৭ পয়সায়।

এদিকে সাম্প্রতিক রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার ঘটনায় বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছে। দেশটি থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশিও রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও মিয়ানমারে ভালো ব্যবসা করছে বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মবিল যমুনা লিমিটেড। পেট্রোলিয়াম খাতের এই প্রতিষ্ঠানটি মিয়ানমারে পাঁচ লাখ ১০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এক্সপোর্টার রিটেনশন কোটায় (ইআরকিউ) ওই অর্থ মিয়ানমারের এ কে টি অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে খাটাচ্ছে মবিল যমুনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মিয়ানমারে অ্যাকশন মবিল নামে লুব্রিকেন্ট উৎপাদন ও বাজারজাত করছে মবিল যমুনা। ওই যৌথ উদ্যোগে মবিল যমুনার ৫৫ শতাংশ এবং এ কে টি অ্যান্ড কোম্পানির রয়েছে ৪৫ শতাংশ শেয়ার। মিয়ানমারে এই যৌথ বিনিয়োগের অধিকাংশ মালিকানা মবিল যমুনার হাতে থাকার পাশাপাশি প্রযুক্তি সহায়তাও দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য ওই কোম্পানি রয়্যালিটিও মবিল যমুনাই পাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে মবিল যুমনা কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ রকিব দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সহিংসতা থাকলেও মিয়ানমারে মবিল যমুনার ব্যবসায়ে কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘সহিংসতা হচ্ছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে। আমাদের ব্যবসা গাড়ি সংশ্লিষ্ট। মিয়ানমারের গাড়িগুলোতে আমরা তেল সরবরাহ করি। সে দেশে আগের মতোই গাড়ি চলছে। আমাদের ব্যবসাও আগের মতো চলছে।’

এর আগে ২০১৩ সালে মিয়ানমারে বিনিয়োগের জন্য মবিল যমুনাকে নিজেদের মূলধন থেকে সাড়ে ৫ লাখ ডলার নিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে মবিল যমুনাই প্রথম বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ পায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান ২০১৩ সালের ১৩ মে কোম্পানিটিকে সহজ শর্তে ওই পরিমাণ অর্থ নিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দেন।

জানা গেছে, কয়েক বছর আগে মিয়ানমার অ্যাকশন মবিল বাজারজাত করার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের মবিল যমুনাও তাতে অংশ নেয়।

সরকারি মালিকানাধীন যমুনা অয়েল কোম্পানি ও ইস্টকোস্ট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড ১৯৯৮ সালে যৌথভাবে মবিল যমুনা গঠন করে। এই কোম্পানি মধ্যপ্রাচ্য থেকে লুব্রিকেন্ট আমদানি করে দেশে ‘প্যাকিং’ ও বাজারজাত করার পাশাপাশি চট্টগ্রামে স্থাপিত প্ল্যান্টের মাধ্যমে অল্প পরিমাণে জ্বালানি উৎপাদনও করে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা চীনের। এর পরেই রয়েছে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, জাপান ও ভারতের।