hakjani-kpplদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কাগজ ও প্রকাশনা খাত কোম্পানিগুলোর সুদিনের হাতছানি দিচ্ছে। বর্তমান বাজারে টিস্যু পেপার জায়গা করে নিয়েছে নিত্যদিনের পণ্য হিসেবে। ফলে এ খাতের কোম্পানিগুলোর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি বসুন্ধরা পেপার মিলস পুঁজিবাজার আসার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।

বসুন্ধরা পেপার মিলসের কারখানায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে উৎপাদিত হচ্ছে টিস্যু হাতের স্পর্শ ছাড়াই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে উৎপাদন হচ্ছে বসুন্ধরা টিস্যু। এ কারণেই একধাপ এগিয়ে গেল বসুন্ধরা টিস্যু পেপার উৎপাদন পদ্ধতি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ২০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বসুন্ধরা টিস্যু।

দেশের কাগজ ও মুদ্রণ শিল্পের সবচেয়ে বড় অংশীদার বসুন্ধরা পেপার মিলস লি:। অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠানটির তালিকাভুক্তিতে বাজারে ভাল শেয়ারের পাশাপাশি গভীরতাও বাড়বে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বসুন্ধরা পেপারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ প্রতিক্ষণকে জানান, বিডিং এর আয়োজনের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আবেদন করা হয়েছে। শিগগিরই বিডিং এর তারিখ ঘোষণা করা হবে। কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে এএএ ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি: এবং রেজিস্ট্রার টু দ্যা ইস্যু হিসেবে কাজ করছে এএফসি ক্যাপিটাল এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি:।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে বসুন্ধরা পেপারের জেষ্ঠ্য নির্বাহী পরিচালক ও কোম্পানি সচিব মো: নাসিমুল হাই বলেন, পুঁজিবাজার থেকে শুধুমাত্র টাকা উত্তোলনই আমাদের উদ্দেশ্য নয়। দেশের মানুষ তথা বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু করার উদ্দেশ্যে আমাদের এই অংশগ্রহণ। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে আমরা ১০ শতাংশ ট্যাক্স ছাড় পাব।

এতে আমাদের ব্যবসায় মুনাফা আগের তুলনায় অনেক বাড়বে। যার ধারাবাহিকতায় বিনিয়োগকারীরাও আমাদের কোম্পানি থেকে ভাল ডিভিডেন্ড পাবেন। ইতিমধ্যে আমাদের একটি কোম্পানি মেঘনা সিমেন্ট পুঁজিবাজারে রয়েছে। কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে। আমরা মনে করি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে কোম্পানির স্থায়িত্ব ও গভীরতা অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে।

বসুন্ধরা গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (টিস্যু উৎপাদন) ইঞ্জিনিয়ার এস এম সারোয়ার বলেন, দেশি ও আন্তর্জাতিক বাজারে সমাদৃত বসুন্ধরা টিস্যুর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে হাতের স্পর্শ ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে উৎপাদন করছে বসুন্ধরা পেপার মিলস।

বসুন্ধরা পেপার মিলস কারখানায় বসুন্ধরা পেপার ন্যাপকিন, বসুন্ধরা টয়লেট টিস্যু, ফেসিয়াল ও বসুন্ধরা পকেট টিস্যু লাইনের স্বয়ংক্রিয়করণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। জার্মানি, তাইওয়ান, চীন ও ইতালি থেকে আমদানিকৃত অত্যাধুনিক মেশিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎপাদিত এসব টিস্যুপণ্য ভোক্তাদের দেবে আরো উন্নতমানের, স্বাস্থ্যসম্মত টিস্যুপণ্য ব্যবহারের অভিজ্ঞতা।

এদিকে বর্তমান তালিকাভুক্তি দুই কোম্পানির অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। একটি হলো হাক্কানী পাল্প, আরেকটি হলো কেপিপএল। এর মধ্যে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে অবশেষে উৎপাদনে ফিরছে । সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হস্তক্ষেপে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের (কেপিপিএল) দ্বন্দ্বের অবসান হচ্ছে।

তাছাড়া এনবিআরের বিরুদ্ধে কোম্পানির দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও ভবিষ্যতে নিয়ম পরিপালনের শর্তে কেপিপিএলের গুদাম, বন্ড লাইসেন্স এবং বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (বিআইএন) খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত মাসে ঢাকায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কার্যালয়ে কোম্পানি ও এনবিআরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে লকপুর গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও কেপিপিএলের এমডি, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট খুলনার কমিশনার, এনবিআরের মূসক নিরীক্ষা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অংশ নেন।

কেপিপিএলের উদ্যোগে এনবিআরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক শেষে উভয়পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে। এনবিআর এরই মধ্যে কোম্পানির গুদাম খুলে দিয়েছে। কাঁচামাল আমদানি ও ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিআইএন এবং বন্ড লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়েছে। নতুন বিআইএন হাতে পেলেই উত্পাদনে যাবে কেপিপিএল।

হাক্কানী পাল্প: তিন মাসের ব্যবধানে তালিকাভুক্ত হাক্কানী পাল্পের শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি। তিন মাস আগে এই শেয়ারের দর ছিল ৫২ টাকা ৯০ পয়সা। বর্তমান যে শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৮২ টাকা থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। বাজারে গুজব রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি খুব শীঘ্র একটি নতুন প্রজেক্ট চালু করবে। তবে এর কোন ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাদের ভাষ্য গুজব কাজে লাগিয়ে একটি শ্রেণী ফাইদা লুটছে।

জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের সচিব মোহাম্মদ মুসা বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর কেন বাড়ছে সেটা বলতে পারছি না। তবে আমাদের কাছে দর বৃদ্ধির কোন সংবেদনশীল তথ্য নেই। বিষয়টি ইতিমধ্যে স্টক এক্সচেজ্ঞ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আগামীতে নতুন টিস্যুর প্রজেক্ট চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের একটি প্রজেক্ট চালুর কথা রয়েছে তবে এর জন্য সময়ের প্রয়োজন। ফলে এর সঙ্গে দর বৃদ্ধির কোন যোগসূত্র রয়েছে কি না তা আমার জানা নেই।

হাক্কানী পাল্পের আর্থিক প্রতিদেনে দেখা যায় ব্যবসা মন্দা থাকার কারণে লোকসানের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৫ সালে এ প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা হয়েছিল ৮৫ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে লাভের বদলে ১ কোটি ৩৭ লাখ লোকসান করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডার দীর্ঘদিন যাবত ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়ে কোন রকমে বি ক্যটাগরির গৌরব ধরে রেখেছে। ২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের মধ্যে পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৫৫.৫২ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া ৩৬.১৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

বাকি ৮.৩২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। ২০১৬ এর ৩০ জুন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের কাছে শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৫৭.২৯ শতাংশ। পরবর্তীতে তারা ১.৭৭ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেন।

খুলনা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং: ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খুলনা প্রিন্টিং ২০১৫ সালে কোটি ২৩ লাখ টাকা মুনাফা করে। পরের বছরই প্রতিষ্ঠানির মুনাফায় কিছুটা ভাটা পড়ে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের আর্থিক হিসাবে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা প্রায় ৮ কোটি টাকা কমে গেছে। এ বছর প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কমে হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠাটি প্রথম বছর (২০১৪) শেয়ার হোল্ডারদের ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। এর পরের বছর জটিলতার কারণে জেড ক্যাটাগরিতে চলে যায় কোম্পানিটি।

জানা যায়, নির্দিষ্ট সময়ে লভ্যাংশ বণ্টন সংকান্ত জটিলতার কারণে এ থেকে জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে খুলনা প্রিন্টিং। ২০১৫ সালের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। যা টাকার অঙ্কে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ ডিভিডেন্ড কোম্পানিটির শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য প্রযোজ্য হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) বিনিয়োগকারীরা ঘোষিত ডিভিডেন্ডের অনুমোদন দিয়েছিল।

কিন্তু এজিএম সম্পন্ন হওয়ার পর প্রায় ৩০ কার্যদিবস পেরিয়ে গেলেও লভ্যাংশ প্রদানে ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি। ডিএসই লিস্টিং রেগুলেশনের ২৯ ধারা অনুযায়ী ডিভিডেন্ড পরিশোধ সংক্রান্ত কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদন সাত দিনের মধ্যে ডিএসই এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দিতে হয়। সেটি করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটির স্থান হয় জেড ক্যাটাগরিতে।

কেপিপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, কেপিপিএলের গুদাম ও বিআইএন খুলে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এনবিআরে চিঠি দেয়া হয়। পরবর্তীতে কেপিপিএলের উদ্যোগে এনবিআরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক শেষে উভয়পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে। এনবিআর এরই মধ্যে কোম্পানির গুদাম খুলে দিয়েছে। কাঁচামাল আমদানি ও ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিআইএন এবং বন্ড লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়েছে। নতুন বিআইএন হাতে পেলেই উত্পাদনে যাবে কেপিপিএল।

সুত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিনের দ্বন্ধের অবসান ঘটায় কেপিপিল ভাল অবস্থানে যাবে। আর উৎপাদনে ফিরলে কোম্পানিটি লাভজনক হবে বলে কোম্পানিটির এক পরিচালক জানিয়েছেন। পাশাপাশি কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদৈর জন্য ভাল ডিভিডেন্ড দিতে পারবে কোম্পানি সুত্রে জানা গেছে।