Fu-Wang-foodদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডের পরিচালনা পর্ষদ পুনঃগঠনে হাইকোর্টের নির্দেশণার পর পদত্যাগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাবেক ক্রিকেটার ও সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এ. এম নাইমুর রহমান দূর্জয়। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পষর্দ সভায় পদত্যাগ পত্র জমা দেন সাবেক এই ক্রিকেটার। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর ফু-ওয়াং ফুডের চেয়ারম্যান হিসাবে যোগ দেন সাবেক এই ক্রিকেটার। কিন্তু সম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ পুনঃগঠনের নির্দেশনা দেয় হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের দ্বারা গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ।

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা কোম্পানির প্রকৃত মুনাফা গোপণ করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়াও উদ্যোক্তা পরিচালকদের পষর্দদের অনেকেরই সদস্য হওয়ার যোগ্যতা নাই। কিন্তু তারা সিকিউরিটিজ আইনের তোয়াক্কা না করেই পর্ষদের রয়েছে।

কোম্পানিটির নামমাত্র শেয়ারধারণ করে পরিচালনায় থাকা বোর্ডের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের রিট ও মহামান্য আদালতের আদেশের পর তিনি পদত্যাগ করলেন। বিষয়টিকে বিনিয়োগকারীরা নিজেদের জয় বলে মনে করছেন।

সম্প্রতি ফু-ওয়াং ফুডের উদ্যোক্তা পরিচালকদের বিভিন্ন অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইন যথাযথ ভাবে পরিপালন না করার অভিযোগে রিট করেন বিনিয়োগকারী জুয়েল শিকদার। রিটের আদেশে আদালত আগামী ১১ নভেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেন্জ কমিশনকে এ ব্যপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়। এরই মধ্যে কোম্পানি স্বাধীন পরিচালক দূর্জয় পদত্যাগ করলেন।

এ প্রসঙ্গে রিটকারী বিনিয়োগকারী জুয়েল শিকদার বলেন, আমি সহ লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীর স্বার্থে আমি এই রিট করেছি। আমি দীর্ঘদিন ধরে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার কিনে রেখেছি। দিনের পর দিন এই কোম্পানীটির সুনাম এবং প্রসার বেড়েই চলছে। সেই হিসেবে তাদের কোম্পানীর আর্থিক প্রতিবেদনে উন্নয়নের প্রতিফলন থাকার কথা। কিন্তু দেখছিলাম বরাবরই ফু-ওয়াং ফুডের প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে উন্নয়নের কোন ছোয়া নেই।

তাই আমি সিদ্ধান্ত নেই নিজ উদ্যোগে কোম্পানী সম্পর্কে খোজ খবর নিব। খোজ নিয়ে আমি যা জানতে পারি তাতে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই, লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীদের কিভাবে ঠকাচ্ছে ফু-ওয়াং ফুড। তাই বাধ্য হয়ে আদালতের শরনাপন্ন হই। আমি যতটুকু খোজ নিয়ে জানতে পেরেছি তার ভিত্তিতে আমি চ্যালেঞ্জ করছি আগামীতে নতুন পরিচালনা পর্ষদ আসলে ফু-ওয়াং ফুডের বাৎসরিক ইপিএস হবে ৮ টাকার উপরে।

পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার করা রিটের প্রেক্ষিতে আদালত বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেন্জ কমিশনকে ফু-ওয়াং ফুডের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চার সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছে যা আগামী ১১ নভেম্বর শেষ হবে। তার পরে আমি আবার আদালতের কাছে যাব ফু-ওয়াং ফুডের জন্য একটি নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্তের জন্য। আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণাদি আছে, এ ব্যাপারে আমি আমার আইনজীবির সাথে কথা বলে রেখেছি।

উল্লেখ্য, উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারণের ব্যর্থতাকে তুলে ধরে হাইকোর্টে রিট করেছে কোম্পানিটির বিনিয়োগকারী জুয়েল শিকদার । তার জবাবে হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের দ্বারা গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) ৪ সপ্তাহের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদ পুনঃগঠনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে বলেছে।গত ১১ অক্টোবর হাইকোর্টের পক্ষ থেকে বিএসইসিকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

রিটের বিপরীতে হাইকোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী ফু-ওয়াং ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আরিফ আহমেদ চৌধুরী, পরিচালক কামাল ক্রান্তি মন্ডল, বিপ্লব চক্রবর্তী, খাজা তোফাজ্জল হোসেনের মধ্যে যারা শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের কেন পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে না, কেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যাদের হাতে পর্যাপ্ত শেয়ার রয়েছে তাদের পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত করা হবে না এবং কেন সম্মিলিত পরিচালনা পর্ষদে ৩০% শেয়ার সংরক্ষিত রাখা হবে না তার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে।

রিটে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে, ৪ সপ্তাহের মধ্যে SEC/CMRRCD/2009-193/119/admin/34 dated 22.11.2011- নোটিফিকেশন পরিপালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
২০১১ সালের ২২ নভেম্বরের নির্দেশনা অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালককে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে।

ওই নির্দেশনায় বলা হয়, কোনো কোম্পানি এ শর্ত পূরণ না করা পর্যন্ত রাইট ইস্যুসহ বাজার থেকে নতুন করে মূলধন সংগ্রহ করতে পারবে না। আর কোনো পরিচালক এ শর্ত পূরণ করতে না পারলে তার পদ হারাতে হবে। এ নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরই ৪ কোম্পানির ১৪ জন পরিচালক আদালতে রিট করেন। আর শেষ পর্যন্ত আদালত পরিচালকদের রিট খারিজ করে বিএসইসির সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। পরে বিএসইসি এর নির্দেশনাকে কোম্পানি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফু-ওয়াং ফুডের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছে সংসদ সদস্য এ. এম. নাইমুর রহমান, আরিফ আহমেদ চৌধুরী, কামাল কান্তি মন্ডল, বিপ্লব চক্রবর্তী, খাজা তোফাজ্জল হোসেন।

এর মধ্যে চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশ দলের সাবেক ক্রিকেটার ও সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এ. এম নাইমুর রহমান, যিনি স্বাধীন পরিচালক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছেন (ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছন)। তার হাতে কোন শেয়ার নেই। এছাড়া, ফু-ওয়াং ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে থাকা আরিফ আহমেদ চৌধুরীর হাতে রয়েছে ৪.৪৯২ শতাংশ শেয়ার,

কামাল ক্রান্তি মন্ডলের নিকট রয়েছে ০.০০৫ শতাংশ শেয়ার, বিপ্লব চক্রবর্তীর নিকট রয়েছে ০.০৩৪ শতাংশ শেয়ার, তোফাজ্জল হোসেনের নিকট কোন শেয়ারই নাই। অর্থাৎ সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আহমেদ চৌধুরী ব্যতিত অন্য সকলেই পরিচালনা পর্ষদে থাকার যোগ্যতা নাই।