shajalalদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক দখলের পর এবার শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের। ব্যাংকটি দখলে মরিয়া হয়ে ওঠেছে দেশের বড় দুই শিল্পগোষ্ঠীর। শাহজালাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আসতে আগ্রহী হয়ে বাজার থেকে ওই দুই শিল্পগোষ্ঠী তুলনামূলক উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে নিচ্ছেন। গত কয়েকদিনের ব্যাংকটির লেনদেনের চিত্র দেখে এমনটি মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের (ডিএসই) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত তিন মাসে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ১৭৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকায় ব্যাংকটির ৬ কোটি ৯৩ লাখ ৮৪ হাজার শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৯ শতাংশ। এর মধ্যে অক্টোবরেই ৬ কোটি ৫৪ লাখ ৮৬ হাজার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

ব্যাংকের পর্ষদে বড় রদবদলের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোয়ও দেখা গেছে, আগ্রহী পক্ষগুলো প্রথমে স্টক এক্সচেঞ্জের পাবলিক ও বøক মার্কেট থেকে শেয়ার কিনে দলগতভাবে নিজেদের একটি জোরালো অবস্থান করে নিচ্ছে। পরবর্তীতে ব্যাংকের সাধারণ সভার সময় পরিচালক পদে মনোনয়ন চেয়ে পর্ষদে যাওয়ার চেষ্টা করে।

সর্বশেষ সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা যায়। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজ গন্ডির বাইরে কাউকে নতুন সদস্য হিসেবে নিতে বিদ্যমান পর্ষদ সদস্যরা প্রবল অনিচ্ছা দেখান বলে জানান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত অনেক পর্যবেক্ষক ও ব্যাংকার।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার লেনদেনের নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এসব শেয়ারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কিনেছেন ইউনাইটেড গ্রুপ সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে গ্রুপটির চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা বলেন, দেশের বিদ্যুৎ, নির্মাণ, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে নিজেদের সাফল্য প্রমাণ করেছে ইউনাইটেড গ্রুপ। গ্রুপের উদ্যোক্তারা ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকেই শরিয়াহভিত্তিক আর্থিক সেবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ ঘরানার আর্থিক সেবার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করার আগ্রহটিও অনেক দিনের।

নিকটঅতীতেও আমরা সমমনা কয়েকজন শরিয়াহভিত্তিক দুটো ব্যাংকের পর্ষদে একটি জোরালো অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করেছি। তবে সংশ্লিষ্ট পর্ষদের অন্যরা সহযোগিতা না করায় তা হয়ে ওঠেনি। পরবর্তীতে আমরা শেয়ারগুলো অন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে দিই।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব ধরনের রেগুলেটরি বিধিবিধান মেনে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে আমরা শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির কিছু শেয়ার কিনেছি। সক্রিয় শেয়ারহোল্ডার হিসেবে আমরা ব্যাংকটির পর্ষদেও অন্তর্ভুক্ত হতে চাই। এজন্য সাধারণ শেয়ারহোল্ডার, বর্তমান পর্ষদ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সমানতালে শেয়ার না কিনলেও শাহজালাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও বর্তমান পরিচালকদের অনেকেই নিজেদের শেয়ার বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিধি মোতাবেক পর্ষদে সদস্যপদ ধরে রাখার জন্য অত্যাবশ্যকীয় শেয়ার থাকার পরও চলতি বছর নতুন করে ব্যাংকের ৬০ লাখ শেয়ার কিনেছে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মো. তৌহিদুর রহমানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান লিভাইস টেক্সটাইল লিমিটেড।

করপোরেট উদ্যোক্তা ইলেকট্রা ইন্টারন্যাশনালও চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাংকটির কিছু শেয়ার কিনেছে। এদিকে ব্যাংকের আরেক পরিচালক ফকির আখতারুজ্জামানের মালিকানাধীন কোম্পানি ফকির নিটওয়্যারস লিমিটেড ও জামান এগ্রো ফিশারিজ গেল মাসে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের অন্তত ১ কোটি ৩৫ লাখ শেয়ার কিনেছে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে শাহজালাল ব্যাংকের ৪১ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন। ২০০১ সালের ১০ মে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক হিসেবে শাহজালাল ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু। বর্তমানে এর পর্ষদে আটজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক রয়েছেন। ব্যাংকটির উদ্যোক্তা হিসেবে রয়েছেন হা-মীম গ্রæপের কর্ণধার এ কে আজাদ। সি ফুড রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ফ্রেশ ফুড লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌহিদুর রহমান ব্যাংকটির একজন উদ্যোক্তা।

তিনি বর্তমানে ব্যাংকের পর্ষদ চেয়ারম্যান। ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে রয়েছেন মডার্ন গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান। ব্যাংকটির আরেক পরিচালক আক্কাস উদ্দিন মোল্লাহ। তিনি রাসেল স্পিনিং মিলসের চেয়ারম্যান।

তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ফকির নিটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির আখতারুজ্জামান শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের একজন পরিচালক। জুয়াইরিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার সাকিব আহমেদ ব্যাংকটির একজন উদ্যোক্তা-পরিচালক। ইউনুস গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ ইউনুসও বর্তমানে ব্যাংকটির পরিচালকের দায়িত্বে আছেন।

অন্য উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছেন মো. আবুল বারেক, যিনি আরজু ইলেকট্রনিকস, জনি ইলেকট্রনিকস ও রনি ইলেকট্রনিকসের প্রতিষ্ঠাতা। হালিম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল হালিমও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের একজন উদ্যোক্তা। ব্যাংকের আরেকজন উদ্যোক্তা মহিউদ্দিন অটো হাউজ ও রূপসা ট্রেডিং করপোরেশনের কর্ণধার মহিউদ্দিন আহমেদ।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুসারে, গত পাঁচ বছরে ব্যাংকটির নিট মুনাফায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। ২০১২ সালে ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ১৭৪ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে তা ১৬৬ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ব্যাংকটির আমানত ২০১২ সালের ১০ হাজার ২১৭ কোটি থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে ১২ হাজার ৪৪১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

আর বিনিয়োগের পরিমাণ ২০১২ সালের ৯ হাজার ৬১৮ কোটি থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে ১২ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা হয়েছে। ২০১২ সালে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ২৮৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৩৯ কোটি টাকায়, যা বিতরণকৃত ঋণের ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ।