itদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: তথ্য ও প্রযুক্তি খাত একটি দ্রুত সম্প্রসারণশীল খাত। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা, সরকারের সুদৃষ্টি এবং তরুণ প্রতিভাদের এগিয়ে আসা সহ নানামুখী কারণে, এই খাতটির প্রতি সকলের আগ্রহ বাড়ছে। পুঁজিবাজারে এই খাতের মোট ৮টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে।

এরমধ্যে ৭টি কোম্পানি ৩০ জুন, ২০১৭ সমাপ্ত অর্থবছরের অনিরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বেড়েছে ৪টি কোম্পানির আর ইপিএস কমে গেছে ৩টি কোম্পানির।

বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে প্রতিটি কোম্পানিই। এবং কোনটিই ১০ শতাংশের কম নয়। অর্থাৎ এই ৭টি কোম্পানির প্রতিটি “এ” ক্যাটাগরিতে অধিভুক্ত হয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষনে দেখা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলো বিগত বছরগুলোতে বিনিয়োগকারীদের মোটামুটি ভাল ডিভিডেন্ডও দিয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের যেহেতু কোম্পানিগুলো আগের বছরের তুলনায় মুনাফার প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে, সেজন্য সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত ডিভিডেন্ড দেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে।

তাছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে আইটি খাত উন্নয়নের বিকল্প নেই। সে লক্ষ্যেই কাজও করছে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবাই। পাশাপাশি রপ্তানিমূখী পন্য হিসেবে আইটির চাহিদা বহিঃবিশ্বে দিন দিন বাড়ছে। আরও যাতে বাড়ে সেজন্য যথেষ্ট সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সরকার।

এমন ধারায় চলতে থাকলে এখাতটি খুব শিগগিরি নেতৃত্ব দেবে সারা বিশ্বকে এমনটিই আশা এখাতের সংশ্লিষ্টদের।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে বরাদ্দ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। এই বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় দুই হাজার ১৩৯ কোটি টাকা বেশি।

বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, বিদায়ী অর্থবছরে কোম্পানিগুলোর আয় বৃদ্ধি এবং এরই প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির মিল এসব মিলিয়ে এখাতের শেয়ারে লেনদেন এবং দরে বেশ উর্ধমূখী প্রবণতাও বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আইটি সেক্টর ভাল করছে তবে যদি ভাল ব্রান্ডের কোম্পানিগুলো এ সেক্টরে যোগ হয় তবে এ সেক্টরটি আরও ভাল করবে। যেহেতু ভাল মানের কোম্পানি নেই মার্কেটে, সেজন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক এ খাতে কম। তাই এ খাতকে আরও ভাল করার জন্য ভাল মানের আইটি কোম্পানি বাজারে আনা আবশ্যক।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই খাতে সরকারের ব্যাপক বিনিয়োগের কারণেই কোম্পানিগুলো ভালো অবস্থানে যেতে পারছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে আগের বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাজেটে এ খাতের জন্য মোট ১১ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। এই বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, রূপকল্প ২০২১ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে আইটি ও আইটিইএস সেবার দ্রæত প্রসারে গুরুত্ব দিচ্ছি।

এজন্য আইটি অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ১২টি আইটি পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া দেশের সাতটি স্থানে আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে উচ্চগতির ফাইবার অপটিক কেবল সম্প্রসারণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আইসিটি শিক্ষার সম্প্রসারণে দেশব্যাপী ২৩ হাজার ৩৩১টি মাধ্যমিক ও ১৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম’ স্থাপন করা হয়েছে। ই-ফাইলিং কার্যক্রম চালু হয়েছে। দেশব্যাপী প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ সরকারি অফিস একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। বিদ্যমান সাবমেরিন কেবলের সক্ষমতা ৪৪ জিবিপিএস হতে বাড়িয়ে ২০০ জিবিপিএস করা হয়েছে।

আইসিটি খাতের এ বরাদ্দ রাখা হয়েছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্য। এর মধ্যে বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ৩ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ বিভাগের উন্নয়ন ব্যয় বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য বাজেটে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব ও সেলফোনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আমদানিতে কর ও শুল্ক ছাড় দেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে এসব পণ্যের সংযোজন ও উৎপাদনে উৎসাহ দিতে বাজেটে এ ছাড় দেয়া হয়েছে।

আইসিটি খাতের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী শেয়ারপ্রতি আয় এবং লভ্যাংশের পরিমাণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩.২২ টাকা। ২০১৬ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩.১৯ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ০.০৩ টাকা। ২০১৭ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১.৫২ টাকা। ২০১৬ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১.৪৮ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ০.০৪ টাকা। ২০১৭ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে, ১.০২ টাকা। ২০১৬ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল, ১.০৮ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে কোম্পানিটির ইপিএস কমেছে ০.০৬ টাকা। ২০১৭ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ এবং ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

বিডিকম অনলাইন লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১.৪৫ টাকা। ২০১৬ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১.৫১ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে কোম্পানিটির ইপিএস কমেছে ০.০৬ টাকা। ২০১৭ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ এবং ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

ড্যাফোডিল কম্পিউটারস লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২.১৭ টাকা। ২০১৬ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১.৫৭ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ০.৬০ টাকা। ২০১৭ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৬০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

আইসিটি কনসালটেন্ট লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১.০৪ টাকা। ২০১৬ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ০.৮৮ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ০.১৬ টাকা। ২০১৭ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৬ শতাংশ নগদ এবং ৪ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

ইনটেক লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১.০৯ টাকা। ২০১৬ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১.১৬ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে কোম্পানিটির ইপিএস কমেছে ০.০৭ টাকা। ২০১৭ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।