icb islami bankদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় বড় ধরনের পরর্বতন আসছে এরকম গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে। আর এ গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। তবে বিনিয়োগকালীদের মাঝে আগ্রহ বাড়ায় গত কার্যদিবসের ন্যায় আজও কয়েক দফায় বিক্রেতা সংকটে হল্টেড হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় শিগগির বড় পরিবর্তন আসছে এরকম গুজব আমরা শুনেছি। তবে এর কোন সত্যতা পায়নি। তবে বড় কোন গ্রুপ যদি কিনে তাহলে কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীরা সুফল পাবে।

কোম্পানির মালিকানায় পরিবর্তন আসছে এমন খবরে এরইমধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।  ব্যাংকটিকে আবারো বিদেশীরা অধিগ্রহণ করতে চাচ্ছে এবং পাশাপাশি দেশের বড় একটি গ্রুপও কিনে নিচ্ছে বলে বাজারে গুঞ্জন রটেছে।

আর এই গুঞ্জনের ওপর ভর করেই কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে কেউ কেউ ভিন্ন সুরে বলছেন, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের মালিকানা নিয়ে দেশের বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। দুটি ব্যাংকের শীর্ষপর্যায়ে ঘটনাবহুল রদবদলের পর এ ঘরানার অন্য ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান পরিচালকরাও নড়েচড়ে বসেছেন। তারা পর্ষদে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে নতুন করে পর্ষদে আসতে আগ্রহীরা বাজার থেকে তুলনামূলক উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে তাদের প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করছেন। ব্যাংকের পর্ষদে বড় রদবদলের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোয়ও দেখা গেছে, আগ্রহী পক্ষগুলো প্রথমে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে শেয়ার কিনে দলগতভাবে নিজেদের একটি জোরালো অবস্থান করে নিচ্ছে।

পরবর্তীতে ব্যাংকের সাধারণ সভার সময় পরিচালক পদে মনোনয়ন চেয়ে পর্ষদে যাওয়ার চেষ্টা করে। সর্বশেষ সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা যায়। আর আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে এরই একটা প্রভাব পড়তে পারে বলেও ধারনা তাদের!

অবশ্য এর যথাযথ কোন ভিত্তি আমাদের প্রতিবেদক খুঁজে পায়নি। তবে আইসিবি ইসলামি ব্যাংকের পরপর দুদিন টানা হল্টেডের বিষয়টি উল্লেখ করে বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলেন, বাজার ওভারঅল ভালো হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা কম দামের শেয়ারগুলো বেছে বেছে কিনছেন।

আর এ কোম্পানিটির শেয়ার দর এক অংকে থাকায় বিনিয়োগকারীরা কম টাকায় অনেক বেশী শেয়ার ক্রয় করতে পারছেন। এমনও হতে পারে অনেক বিনিয়োগকারী তাদের বাড়তি কিছু টাকা যদি কিছু মুনাফা আসে এই আশায় এখানে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জনে মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রায় ২ বছর আগে একটি রোডম্যাপ দেয়া হয়েছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে পর্যায়ক্রমে সাড়ে ১২ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে।

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ, ২০১৮ সাল থেকে ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ২০১৯ সাল থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে ব্যাংকটিকে।

জানা গেছে, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, বছরের পর বছর কোনো ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি থাকতে পারবে না। আইন অনুযায়ী, একটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত মেনে নেয়া হবে।  ২ বছরের পর মূলধন ঘাটতি হলে ওই ব্যাংককে হয় মার্জার অর্থাৎ অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়ে যেতে হবে অথবা বন্ধ হয়ে যাবে।

এ কারণে কোনো ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হলে তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কিভাবে মূলধন ঘাটতি পূরণ করবে, এর পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সময় সময় সেটা মনিটরিং করবে। এভাবে ২ বছর পর আইনানুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু মার্জারের বিষয়টি সময় স্বাপেক্ষ বিধায় এ বিষয়ে তরিঘরি করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে, আজ রোববার আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের দর বেড়েছে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ বা ৫০ পয়সা। আর দিনভর প্রতিষ্ঠানটির ৫৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮৮টি শেয়ার মোট ৯০৮ বার হাতবদল হয়েছে। যার বাজার মূল্য ৩ কোটি ৫১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। আজ কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ছিল ৬ টাকা ১০ পয়সা। আর সর্বনিম্ন দর ৫ টাকা ৬০ পয়সা। যদিও আগের দিনও কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়ে ছিল ৫০ পয়সা।

উল্লেখ্য, পরিচালনায় অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সমস্যায় পড়া আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ১৯৮৭ সালের ২০ মে আল-বারাকা ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড নামে কার্যক্রম শুরু করে। ২০০২ সালে মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার পর ওরিয়েন্টাল ব্যাংক লিমিটেড নামে কার্যক্রম চালায় ব্যাংকটি। মালিকানা হস্তান্তরের পর পরই ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে শুরু হয় নজিরবিহীন লুটপাট। বাংলাদেশ ব্যাংক পরে এতে প্রশাসক বসায়।

কিন্তু তারল্য সংকটের কারণে ওই সময় ব্যাংকটি থেকে টাকা তুলতে পারছিলেন না আমানতকারীরা। সরকার এর পর আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে সাড়ে ছয় বছর সময় দিয়ে ২০০৭ সালে একটি স্কিম বা কর্মসূচি চালু করে। পরবর্তীতে ব্যাংকটির বেশির ভাগ শেয়ার বিক্রির জন্য নিলাম ডাকা হলে তা কিনে নেয় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ এজি।

এরপর ২০০৮ সালে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের সব সম্পত্তি ও দায় নিয়ে নতুন নামে যাত্রা করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। তারপরও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ব্যাংকটি। ধারাবাহিক লোকসানের মুখে থাকা আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ২০১৬ সালেও ২৭ কোটি টাকার লোকসান দিয়েছে।

এর আগে ২০১৫ সালে ব্যাংকটির নিট লোকসান ছিল ১৪ কোটি টাকা, ২০১৪ সালে ২৮ কোটি, ২০১৩ সালে ৬৮ কোটি, ২০১২ সালে ১০৬ কোটি ও ২০১১ সালে ১৭৯ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে বছর দুই আগে ব্যাংকটি বিক্রির গুঞ্জনও ওঠেছিলো একবার।

২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত, ব্যাংকটির ৫৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৪ দশমিক ৪২ শতাংশ, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১৫ দশমিক ৬৩ এবং সরকারের কাছে রয়েছে দশমিক ১৭ শতাংশ শেয়ার।