bd seriveদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বিডি সার্ভিসেস লিমিটেড। ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি। আশ্চর্যের হলেও সত্য গেলো দুই বছরের বেশী সময় ধরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই কোম্পানিটির একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এই নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। যদি শেয়ার ছাড়ার উদ্দেশ্যই না থাকে, তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্দেশ্য কি এই কোম্পানির।

গত দুই বছরের হিসেব পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য গত দুই বছর ধরে ৫.৫০ টাকায় আটকে আছে! এবং লেনদেন হয়নি একটি শেয়ার। কোম্পানিটির প্রায় সমস্থ শেয়ারই সরকারের হাতে রয়েছে। খুব সামান্য পরিমাণ শেয়ার বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হোল্ড করছেন।

সরকারের হাতে থাকা শেয়ারের পরিমাণ ৯৯.৬৮ শতাংশ। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা হোল্ড করছেন ০.১৯ শতাংশ শেয়ার। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ০.১৩ শতাংশ শেয়ার। এই সামান্য পরিমাণ শেয়ারও কেউ লেনদেন করছে না। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এতে যরপনরাই আশ্চার্যান্বিত হচ্ছেন। একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী নিজের ফেসবুকের দেয়ালে দুদিন আগে লিখেছেন, “মাত্র একটি হলেও বিডি সার্ভিস কেউ কি ছাড়বে?”

বাজারে কোম্পানিটির ৯ কোটি ৭৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯১৩ টি শেয়ার আছে। কোম্পানিটি ২৫০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে এখন পর্যন্ত বাজার থেকে তুলেছে ৯৭ কোটি ৭৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ১৯৮৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এই কোম্পানিটির মালিকানায় রয়েছে কয়েক বছর ধরে সংস্কারাধীন হোটেল রুপসী বাংলা লিমিটেড।

হোটেলটি পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক হোটেল চেইন ইন্টারকন্টিনেন্টালের হাতে ছেড়ে দেয়া হবে। এর আগে শেরাটন গ্রুপের ব্যাবসা ছেড়ে দেবার পর বিডি সার্ভিস কয়েকবছর নিজেরাই এই হোটেল পরিচালনার পর আবারও পুরাতন অপারেটর ইন্টারকন্টিনেন্টালের হাতে হোটেলটি ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়।

৩১ জুলাই’ ২০১৭ সমাপ্ত অর্থবছরে এই কোম্পানিটি “নো ডিভিডেন্ড” ঘোষনা করেছে। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৪ সালে ১৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। সরেজমিন হোটেলটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, শ্রমিকরা সংস্কার কাজে ব্যস্ত। ফলে ভবনটিতে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, পুরো হোটেলটির সংস্কার কাজ তিনটি ধাপে ভাগ করে করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি দুই ধাপের কাজও একসঙ্গে চলছে। প্রথম ধাপে হোটেলের রুমগুলোর আকৃতি বড় করা হয়েছে। আগে অতিথিদের জন্য হোটেলে ছিল মোট ২৭০ ইউনিট বা রুম।

কিন্তু এখন প্রতি তিনটি রুম ভেঙে দুটি রুম তৈরি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে এখন মোট হোটেলের ইউনিট সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২২৬টি। আর দ্বিতীয় ধাপে বিভিন্ন মেশিন যেমন জেনারেটর, আইটি, শীতাতপ যন্ত্র ইত্যাদি লাগানো হচ্ছে। রুম ভেঙে দেয়াল ঠিক করার কাজ পুরোপুরি হয়ে গেছে। হোটেলের সম্মুখভাগে অতিথিদের জন্য যে রুমটি ছিল তার দেয়ালের গাঁথুনির কাজও হয়েছে।

আগে যেখানে সুইমিং পুল ছিল, এখন সেখানে রলরুম তৈরি হচ্ছে। আর সুইমিং পুল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হোটেলের ছাদে। এটি তৈরি হচ্ছে ঠিক বলরুমের ওপরে। আর আগের বলরুমের জায়গায় আরও বড় করে হোটেলের রান্নাঘর তৈরি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, হোটেলটি সংস্কারে প্রথমে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। যা বাংলাদেশি টাকায় ৪২০ কোটি টাকা।

চুক্তি অনুযায়ী এই ব্যয় বহন করছে বাংলাদেশ সার্ভিস লিমিটেড (বিএসএল)। রূপসী বাংলার বিপণন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপক সাহিদুস সাদিক বলেন, আমরা ২০১৭ এর মধ্যেই হোটেলের সংস্কার কাজ শেষ করতে পারব। হোটেলটি ৬০-এর দশকে তৈরি করা হয়েছিল তখন রুমগুলো ছোট ছিল। প্রতি রুমের আয়তন ছিল ২৬ বর্গমিটার। কিন্তু পাঁচ তারকা হোটেলে রুমের আয়তন আরও বড় হয়। বর্তমানে মান অনুযায়ী পাঁচ তারকা হোটেলের রুমের আয়তন কমপক্ষে ৩৮ বর্গমিটার।

আর আমাদের হোটেলে রুমের আয়তন কমপক্ষে ৪০ বর্গমিটার করে তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন হোটেলটি হচ্ছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। আগের থেকে নতুন হোটেলটি ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হচ্ছে। যেহেতু এটি ৫০ বছরের পুরনো একটি হোটেল এবং বর্তমানে ঢাকায় অনেক আধুনিক মানের হোটেল তৈরি হচ্ছে সে হিসেবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে হোটেলটিকে নতুন রূপ দেওয়ার দরকার হয়ে পড়েছিল। এ জন্য হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।

অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী ইন্টারকন্টিনেন্টালে যে ধরনের সুবিধা পাওয়া যায় এই হোটেলটিও সেভাবে অতিথিদের জন্য নতুন রূপে আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন সংস্থা বিএসএল বর্তমান হোটেলটির মালিক। ২০১০ সালের ১ মে বিএসএলকে শেরাটন কর্তৃপক্ষ হোটেলের ব্যবস্থাপনা দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়। সে সময় শেরাটন হয় রূপসী বাংলা

। আর ২০১২ সালের ১৯ ফেব্রæয়ারি বিএসএল-এর সঙ্গে ইন্টারকন্টিনেন্টালের চুক্তি হয়। আর সংস্কার কাজের জন্য ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিরতিতে যায় হোটেলটি। পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল হিসেবে ইন্টারকন্টিনেন্টাল-ঢাকা যাত্রা শুরু করে রমনা এলাকায়।

স্বাধীনতার পর ১৯৮৬ সালে হোটেল ইন্টারকনের মালিকানা গ্রহণ করে ঢাকা শেরাটন কর্তৃপক্ষ। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শেরাটন হোটেলের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালে হোটেলের মালিকানা হস্তান্তর হয় বিএসএল কর্তৃপক্ষের কাছে।