icsbদেশ প্রতিক্ষণ,ঢাকা: চতুর্থবারের মতো ন্যাশনাল করপোরেট গভর্ন্যান্স এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে দেশের চার্টার্ড সেক্রেটারিদের সংগঠন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি)। ২০১৬ সালে করপোরেট স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্নে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার রেগুলেশন পরিপালনে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা ২২টি কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাতে গতকাল এ পুরস্কার তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে হয়ে যাওয়া ‘আইসিএসবি চতুর্থ ন্যাশনাল করপোরেট গভর্ন্যান্স এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৬’ বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব সুভাশিষ বোস ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইসিএসবি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সানাউল্লাহ এফসিএস।

এ সময় আইসিএসবি ন্যাশনাল করপোরেট গভর্ন্যান্স এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডের জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলামসহ অনেক বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন।

আইসিএসবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত একটি জুরি বোর্ড দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট নানা দিক পর্যালোচনা করে আটটি ক্যাটাগরিতে মোট ২২টি কোম্পানিকে বাছাই করে। কোম্পানিগুলো ২০১৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধে তাদের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ব্যাংকিং ক্যাটাগরিতে করপোরেট সুশাসনের জন্য প্রথম পুরস্কার পেয়েছে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে যথাক্রমে সাউথইস্ট ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড।

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) ক্যাটাগরিতে করপোরেট স্বচ্ছতা ও সুশাসনে সবচেয়ে এগিয়ে থাকার স্বীকৃতি পেয়েছে আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেড। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড এবং তৃতীয় সেরা হিসেবে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড।

বীমা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়া তিনটি প্রতিষ্ঠানই নন-লাইফ খাতের কোম্পানি। তাদের মধ্যে এক নম্বরে ছিল গ্রীনডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, দ্বিতীয় প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধিরা তৃতীয় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।

ওষুধ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে ওষুধ কোম্পানি দ্য ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেরা প্রতিষ্ঠানের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে যথাক্রমে গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।

এদিকে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক ক্যাটাগরিতে করপোরেট সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মানদণ্ডে ২০১৬ সালে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেড। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল শাশা ডেনিমস লিমিটেড ও তৃতীয় স্কয়ার টেক্সটাইলস লিমিটেড।
তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ ও সেবা ক্যাটাগরিতে গ্রামীণফোন লিমিটেড প্রথম সেরা প্রতিষ্ঠান এবং ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড দ্বিতীয় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে। এ ক্যাটাগরিতে তৃতীয় পুরস্কারের জন্য কোনো কোম্পানিকে বেছে নেয়া হয়নি।
এছাড়া করপোরেট সুশাসনে প্রকৌশল, বিদ্যুত্ ও জ্বালানি ক্যাটাগরিতে সেরা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছে এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেড এবং দ্বিতীয় সেরা প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার পেয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড।

ম্যানুফ্যাকচারিং ও রসায়ন ক্যাটাগরিতে সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে আরএকে সিরামিকস বাংলাদেশ লিমিটেড। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেরা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছে যথাক্রমে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড এবং হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার করপোরেট খাতে সুশাসন ও একটি ফলপ্রসূ করপোরেট কালচার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে আসছে। দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা উন্নয়নে আইসিএসবি ও চার্টার্ড সেক্রেটারিদের ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি।

বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, কোম্পানির ব্যবসা, শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ ও করপোরেট সুশাসন দীর্ঘমেয়াদে একই সূত্রে গাঁথা। আইসিএসবির এ পুরস্কার দেশের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোয় সুশাসন উত্সাহিত করছে, যা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

সভাপতির বক্তব্যে আইসিএসবি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বলেন, দেশের করপোরেট খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও করপোরেট সুশাসন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মনোবল উন্নত করে, যা উত্পাদনশীলতা বাড়িয়ে ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়। এ সময় পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা ছাড়াও দেশের স্বনামধন্য চার্টার্ড সেক্রেটারিরা উপস্থিত ছিলেন।