risk shareদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কোম্পানি সম্পর্কে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান।

রকিবুর রহমান আরো বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বাজারে বিনিয়োগের আগে কোম্পানির মৌলভিত্তি দেখেই বিনিয়োগ করতে হবে। ধার-দেনা করে, বোনের গয়না বেচে, বাড়ির গরু বেচে বিনিয়োগের দরকার নেই। খরচের অতিরিক্ত টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পরামর্শও দেন তিনি।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সুসময় চলছে। বিভিন্ন উৎস থেকে আসা টাকা পুঁজিবাজারে স্রোতের মতো ঢুকছে। এতে দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে বাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে অনেক কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগে উপযোগী। আবার কিছুকিছু কোম্পানির শেয়ার ঝুঁকিপূর্ন তালিকায় রয়েছে। কারণ বাজারের সার্বিক পিই রেশিও এখন অতীতের তুলনায় কম।

তারপরও বর্তমান বাজারে কিছু কোম্পানির পিই রেশিও বেশি, যে কারণে কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাই উচ্চ পিই সম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কোনো কোম্পানির পিই রেশিও ২০ ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবেও ৪০ পর্যন্ত পিইধারী শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে মনে করে বিএসইসি।

তাই স্রোতে গা ভাসিয়ে অর্থাৎ চোখ কান বন্ধ করে বিনিয়োগ করলে রয়েছে চোরা স্রোতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। আর পঁচা শামুকে যাতে পা না কাটে তাই জেনে বুঝে অর্থাৎ ঝুঁকি এড়িয়ে বিনিয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।

এমন কি শেয়ার বাজার না বোঝা আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বুঝেশুনেও শেয়ার কিনতে বলেছেন। তিনি এও বলেছেন, না বুঝে শেয়ার কিনে লোকসান করলে তার দায় অর্থমন্ত্রী আর সরকারের নয় আপনার নিজের। দেশ প্রতিক্ষণ ডটকমের এক সপ্তাহের গবেষণালব্ধ তথ্য কিছু ঝুঁকিপুর্ণ কোম্পানি আমাদের তালিকায় রয়েছে।

যদিও দায়িত্বশীল মহল থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, সূচকের এ গতি কিছুই না। এটা মাত্র শুরু। বাজার আরো বাড়বে। কিন্তু কীসের উপর ভর করে বাজার বাড়বে? এমন প্রশ্ন তাদেরকে অনেকবারই করা হয়েছে। এর জবাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের(বিএসইসি) প্রধানকর্তা বলেন, অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় বর্তমান বাজার অনেক সুরক্ষিত।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, ধস পরবর্তী পুঁজিবাজারে অনেক সংস্কার হয়েছে এটা সত্যি। আরো কাজ হচ্ছে। এতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সক্ষমতাও বেড়েছে। তাছাড়া এতোদিন বিনিয়োগকারীদের জ্ঞানের অভাবের যে অভিযোগ ছিল তা দূর করার জন্যও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এসব পদক্ষেপ বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে তিনি বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বলেন, বর্তমান বাজারে ভাল কোম্পানির শেয়ারদর যেমন বেড়েছে খারাপ কোম্পানির শেয়ারদর আরো বেশি বেড়েছে। তাই কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ শেয়ার সেটা বুঝে বিনিয়োগ করা উচিত। অতিমূল্যায়িত শেয়ার থেকে দূরে থাকার জন্য বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দেন তিনি।

এখন প্রশ্ন আসে, অতিমূল্যায়িত শেয়ার চেনার প্রধান উপায় কী? এ প্রসঙ্গে ব্রোকারেজ হাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্তা ব্যাক্তিরা বলেন, কোন শেয়ার অতিমূল্যায়িত আর কোন শেয়ার অবমূল্যায়িত তা বোঝার সবচেয়ে ভাল উপায় হলো মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও)।

তারা আরো বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে পিই রেশিও ৪০ ঊর্ধ্ব কোম্পানিগুলো অতি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এ সব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে যে কোনো সময় লোকসানের সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া গানিতিক হিসাবে বিনিয়োগ ফেরত পেতেও পিই’র সমপরিমাণ সময় লাগে।

পিই রেশিও বেশি হওয়া মানে কোম্পানির আয় কম হওয়া সত্ত্বেও শেয়ার দর বেশি হওয়া। আর যে সব কোম্পানির পিই ঋণাত্মক সেগুলো লোকসানে রয়েছে। তাই এ সব কোম্পানিতে দেখেশুনে বিনিয়োগ করা উত্তম। কারণ, অতিমূল্যায়িত এ ধরনের শেয়ারগুলোর দর কখন অস্বাভাবিকহারে কমে যাবে তা গাণিতিক হিসাব করে বের করা কঠিন। তাই এ সব শেয়ারে সব সময় ঝুঁকি থাকে। এ জন্য আমাদের দেশে ঝুঁকিপূর্ণ পিই রেশিওর শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে মার্জিন লোন দেওয়া হয় না।

এ বিষয়ে দেশ প্রতিক্ষণের গবেষণা সেল গত এক সপ্তাহ ধরে ডিএসইতে তালিকাভূক্ত মোট ৯টি কোম্পানিকে নিয়ে এর ঝুকিপূর্ন কোম্পানিগুলোকে সনাক্তকরনের গবেষণা কাজ সম্পন্ন করেছে। গবেষণা সেল দেখতে পেয়েছে এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে শেয়ারদর অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।  উল্লেখিত কোম্পানির বার্ষিক এবং প্রান্তিক হিসাবে লোকসানে রয়েছে। অর্থাৎ এদের পিই রেশিও ঋণাত্মক। অথচ কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর গত চার মাসে ব্যাপকহারে বেড়েছে।

তবে আগের সপ্তাহের ন্যায় গত সপ্তাহেও ৮ কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ার দর বৃদ্ধির কারন অনুসন্ধানে কোন যৌক্তিকতা খুজে পায়নি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। যাতে ডিএসইর নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিনিয়োগকারীদের জন্য সচেতনতামূলক তথ্য প্রকাশ করা হয়। যার আলোকে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর কমতে শুরু করেছে।

অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলো হলো: সমতা লেদার কমপ্লেক্স, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, জিলবাংলা সুগার মিলস, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, বিডি ওয়েল্ডিং, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক ও নর্দার্ন জুট।

সমতা লেদার কমপ্লেক্স : লোকসানি এ কোম্পানিটির শেয়ার গত ২১ নভেম্বর ছিল ৫০.৯০ টাকায়। যা ৩০ নভেম্বর রয়েছে ৫৬.৯০ টাকায়। অর্থাৎ এই ৭ কার্যদিবসে শেয়ার দর বেড়েছে ৬ টাকা বা ১২ শতাংশ।

প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল : গত ১৯ নভেম্বরের পর থেকে টানা উত্থানে রয়েছে এ কোম্পানির শেয়ার দর। এর আলোকে ওইদিনের ৩২.৩০ টাকার শেয়ার দর যা ৩০ নভেম্বর বেড়ে দাড়িয়েছে ৪৩.১০ টাকায়। এ হিসাবে ৯ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১০.৮০ টাকা বা ৩৩ শতাংশ।

রেনউইক যজ্ঞেশ্বর : কোম্পানিটির গত ২২ নভেম্বরের ৫৫২.১০ টাকার শেয়ার দর এখন ৬২৬.১০ টাকায় রয়েছে। এক্ষেত্রে ৬ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৭৪ টাকা বা ১৩ শতাংশ।

জিলবাংলা সুগার মিলস : লোকসানি এ কোম্পানিটির শেয়ার দর গত ১৪ নভেম্বর থেকে ধারাবাহিক উত্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে ১৩ নভেম্বরের ৫৬.৩০ টাকার শেয়ার দর যা ৩০ নভেম্বর  বেড়ে দাড়িয়েছে ৭১.১০ টাকায়। এ হিসাবে দর বেড়েছে ১৪.৮০ টাকা বা ২৬ শতাংশ।

প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স : গত ২২ নভেম্বর এ কোম্পানির শেয়ার দর ছিল ১৯.৫০ টাকা। যা যা ৩০ নভেম্বর রয়েছে ২০.৯০ টাকায়। অর্থাৎ দর বেড়েছে ১.৪০ টাকা বা ৭ শতাংশ।

বিডি ওয়েল্ডিং : ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে লোকসান কাটিয়ে মুনাফা অর্জন করা কোম্পানিটির শেয়ার দর গত ২২ নভেম্বর ছিল ২০.৮০ টাকা। যা যা ৩০ নভেম্বর দাড়িয়েছে ২৫.১০ টাকায়। অর্থাৎ দর বেড়েছে ৪.৩০ টাকা বা ২১ শতাংশ।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক : এক মাসে আগে ব্যাংকটির শেয়ার দর ছিল ২৬.৭০ টাকা। যা বর্তমানে ৩২ টাকায় রয়েছে। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে দর বেড়েছে ৫.৩০ টাকা বা ২০ শতাংশ।

ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক : লোকসানি এ কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৬ নভেম্বর ছিল ২২.২০ টাকায়। যা যা ৩০ নভেম্বর রয়েছে ২৩ টাকায়। এ হিসাবে দর বেড়েছে ০.৮০ টাকা বা ৪ শতাংশ।

নর্দার্ন জুট: লোকসানি এ কোম্পানিটির শেয়ার দর ৬ নভেম্বর ছিল ৪০৪.৬০ টাকায়। যা ৩০ নভেম্বর রয়েছে ৫৩৫ টাকায়। এ হিসাবে দর বেড়েছে ১৩০.৪০ টাকা।