saver-আমিনুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের সাভার রিফ্যাক্টরিজ শেয়ার অতিমূল্যায়িত দরে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। আবার এ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) রয়েছে ঋণাত্মক। পাশাপাশি সার্বিক মূল্য-আয় অনুপাতও (পিই রেশিও) নেগেটিভ অবস্থান করছে। ফলে এ কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা নাই, পুরাতন মেশিনের কারণে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয় তাই ব্যবসা পরিচালনা করে লোকসান গুনছে সাভার রিফ্যাক্টরিজ। বছরের পর বছর লোকসানে থাকায় পুঞ্জিভূত লোকসান বাড়ছে। কিন্তু তবুও লাগামহীন পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ছেই। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন কাদের ইশরায় বাড়ছে এ কোম্পানি। এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্রুত তদন্ত প্রয়োজন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লোকসানে থাকলেও কোম্পানিগুলোর শেয়ার সংখ্যা সামান্য হওয়ায় কারসাজিতে সক্রিয় রয়েছে একটি চক্র। যার ধারাবাহিকতায় শেয়ার দর বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে শেয়ার দর বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করে বিনিয়োগকারীদের জানানো উচিত।

saver 1 yearতথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, পুঞ্জিভূত লোকসানী থাকা সাভার রিফ্যাক্টরিজ সম্প্রতি রেকর্ড দর অতিক্রম করেছে। এ কোম্পানির অস্তিত্ব নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে শঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। বছর শেষে প্রতিটি কোম্পানির কাছ থেকে ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ আশা করেন বিনিয়োগকারীরা। অথচ তালিকাভুক্ত পর থেকে এ কোম্পানি নানা ধরনের সমস্যা দেখিয়ে টানা বছরের পর বছর ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত করে আসছে বিনিয়োগকারীদের।

অথচ ডিভিডেন্ড বঞ্চিত করলেও কোন কারন ছাড়াই টানা বাড়ছে এ কোম্পানির শেয়ারের দর। ফলে এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে দু:চিন্তায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাও। টানা লোকসানে ঋণ ও দায়ের পরিমাণ সম্পদের তুলনায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায় দেউলিয়ার পথে রয়েছে কোম্পানিটি। এতে বিনিয়োগ হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে বিনিয়োগকারীরা।

সাভার রিফ্যাক্টরিজের বার্ষিক প্রতিবেদনে নিরীক্ষকদের মতামত থেকে জানা যায়, উৎপাদন ক্ষমতা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় ব্যবসা হারাচ্ছে কোম্পানিটি। অপরদিকে টানা লোকসানে কোম্পানিগুলোর সমন্বিত লোকসান লাগামহীনভাবে বাড়ছে। এর পাশাপাশি ঋণ ও দায়ের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে কোম্পানিগুলোর সম্পদমূল্যকেও ছাড়িয়েছে।

পরিণতিতে এ কোম্পানিগুলো দায় পরিশোধের ক্ষমতা হারিয়ে বর্তমানে ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। আর এ কোম্পানির মুনাফায় না আসতে পারলে ভবিষ্যতে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইন অনুযায়ী টানা লোকসান, উৎপাদন বন্ধ, অনিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ইত্যাদি সমস্যা সংকুল কোম্পানিগুলোকে মূল মার্কেট থেকে সরিয়ে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে পাঠানোর ক্ষমতা কমিশনের রয়েছে। এ ছাড়া যেসব কোম্পানি লোকসানের কারণে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিন ধরে ডিভিডেন্ড দিতে পারছে না সেসব কোম্পানির পর্ষদে প্রশাসক বা পর্যবেক্ষক বসানোর ক্ষমতাও কমিশনের রয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসইসর মুখপাত্র মো: সাইফুর রহমান বলেন, কমিশনে জনবলের ঘাটতি থাকায় আর্থিক ও ব্যবস্থাপনায় দুর্বল কোম্পানিগুলোতে প্রশাসক কিংবা পর্যবেক্ষক বসানো যাচ্ছে না। তবে কোম্পানিগুলোকে ওটিসেতে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। কিন্তু এসব দুর্বল কোম্পানির মধ্যে বেশকিছু সরকারি কোম্পানি থাকায় ওটিসিতে পাঠানোর ক্ষেত্রে বেশকিছু জটিলতা রয়েছে। তবে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া যায় এ বিষয়ে কমিশন কাজ করছে।

এদিকে ডিএসইতে দেখা যায়, লোকসানি হওয়া সত্তেও এ সকল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি চক্র থেমে নেই। দেখা যায়, প্রায়ই শেয়ার দর হঠাৎ করেই বাড়তে থাকে। তেমনি সাভার রিফ্যাক্টরিজ বাড়ছে তিন গুন। এ বিষয়ে ডিএসইর পক্ষ থেকে দর বাড়ার কারন জানতে চাওয়া হলে জবাবে কোম্পানিগুলো খুব সহজ উত্তর দিয়ে থাকে “দর বাড়ার পেছনে কোন মুল্য সংবেদনশীল নেই”।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লোকসানে থাকলেও কোম্পানিগুলোর শেয়ার সংখ্যা সামান্য হওয়ায় কারসাজিতে সক্রিয় রয়েছে একটি চক্র। যার ধারাবাহিকতায় শেয়ার দর বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে শেয়ার দর বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করে বিনিয়োগকারীদের জানানো উচিত।

১ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূলধনধারী সাভার রিফ্যাক্টরিজের পুঞ্জিভূত লোকসান ৫২ লাখ টাকা। চলতি হিসাব বছরের (২০১৭-১৮) প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০.২১ টাকা। এদিকে, সদ্য সমাপ্ত বছরে (২০১৬-১৭) শেয়ার প্রতি ০. ১৭ টাকা লোকসান হওয়ায় ‘নো’ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। কিন্তু তবুও বাড়ছে শেয়ার দর। গত সোমবার ১৫৮ টাকা থেকে ১৪৮ টাকার মধ্যে লেনদেন হয়। যা বিগত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে।

ডিএসই অনুযায়ি, গত এক বছরে সাভার রিফ্যাক্টরিজের শেয়ার দর বেড়েছে ২২৯ শতাংশ। সেখানে আজ লেনদেন শেষে শেয়ারটির দর দাড়িয়েছে ১৪৮.১০ টাকা। আবার কোম্পানিটির সার্বিক মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) নেগেটিভ অবস্থানে রয়েছে। শেয়ারটি সম্পদ যেখানে ঋণাত্মক, পিই হিসাবে নেগেটিভ তাই বিনিয়োগও রয়েছে ঝুঁকিতে, সেখানে কোম্পানিটির শেয়ার এতো উচ্চমূল্যে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানির পিই ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিই রেশিওধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানান বিএসইসি।

সাভার রিফ্যাক্টরিজের পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা। অনুমোদিত মূলধন ১ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তাই শেয়ারটি ক্রয়-বিক্রয় ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা প্রয়োজন কোম্পানিটি মৌলভিত্তিক কোম্পানি কি না। যদি মৌলভিত্তিক কোম্পানি না হয় তবে কেন দর উচ্চমূল্যে সেটাই চিন্তার বিষয়।

২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদ হয়েছে ঋণাত্মক। প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০.২১ টাকা। একইসঙ্গে কোম্পানির নগদ প্রবাহ রয়েছে ঋণাত্মকে। তার ওপরে বছরের পর বছর ধরে কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। এ কারণে কোম্পানিটি জেড ক্যাটাগরিতে রয়েছে।

এক কথায় কোম্পানিতে কোনো উন্নয়নের ধারা নেই। আগামীতে কোম্পানটির মুনাফা বাড়বে সেটার সম্ভাবনারও খবর নেই। এ ধরনের কোম্পানির শেয়ার উচ্চমূল্যে ক্রয়-বিক্রয় বিনিয়োগ কতটা নিরাপদ সেটাও বিবেচনায় আনতে হবে বিনিয়োগকারীদের। এসব বিষয়ে জানতে কোম্পানির তেজগাঁও অফিসে গেলে কোম্পানির অফিস কর্তৃপক্ষের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।