EMARELD1দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আসুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি এমারেল্ড অয়েলের গত এক বছরে ১৬৩ শতাংশ দরপতন হয়েছে। আর দুই বছরের মাথায় ৩৩২ শতাংশ দরপতন হয়েছে। টানা দরপতনের ফলে পুঁজি নিয়ে দু:চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

গত দুই বছর আগেও এ কোম্পানির শেয়ার ছিল ৭৭ টাকা ৮০ পয়সা। গত এক বছরে ৪৪.২০ টাকা থেকে দরপতন শরু হলে ১৬.৯০ টাকা মধ্যে নামে। তবে বর্তমানে ১৮ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এদিকে বছর শেষ হলেও কোম্পানিটি ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত কোন সভা করেনি। এমনকি কোম্পানিটির উৎপাদনের কোন হদিস নেই।

অন্যদিকে দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ। বেতন-ভাতা না পেয়ে চাকরি ছেড়েছেন অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রধান কার্যালয়ের অফিস ভাড়া বকেয়া পড়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাত্র প্রায় চার বছরের মাথায় এমন অবস্থায় উপনীত হয়েছে এমারেল্ড অয়েল। অথচ এ বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও দুই স্টক এক্সচেঞ্জ কিছুই জানে না।

এমারেল্ড অয়েলের শেরপুরের কারখানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারখানায় তেল উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ। গত বছরের এপ্রিল থেকেই উৎপাদন বন্ধ। বর্তমানে কারখানাটিতে একজন নিরাপত্তারক্ষী এবং একজন তত্ত্বাবধায়ক আছেন।

অথচ গত ২১ ডিসেম্বর ডিএসইর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় গত ২০ আগস্ট থেকে আবারও উপাদান শুরু করেছে এমারেল্ড অয়েল, যা ২৭ জুন থেকে বন্ধ ছিল। তবে অর্থের অভাবে রাজধানীর বিজয়নগরে ১০ তলার ইউনিটটি ছেড়ে দিয়েছে এবং ১৫ তলার ইউনিটটির ভাড়া বকেয়া রয়েছে। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় অন্য কর্মকর্তারা অন্যত্র চাকরি নিয়েছেন।

অন্যদিকে মহা-সংকটে রয়েছে এমারেল্ড অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ঋণ অনাদায়ী পড়ায় কোম্পানির বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনা আদায়ের চেষ্টা করছে কয়েকটি ব্যাংক। একই সঙ্গে মূলধন ঘাটতির কারণে বন্ধ ব্যবসায়িক কার্যক্রম। গত বছরে দ্বিতীয় দফায় চালু করা হলেও আবারো বন্ধ রয়েছে।

পাশাপাশি পরিচালনার জন্য নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ খুঁজছে এমারেল্ড অয়েল কর্তৃপক্ষ। কোম্পানিটি বর্তমানে চলতি মূলধন সংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় ব্যবসার পূর্বাবস্থায় ফেরার চেষ্টার কথা জানিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে স্পন্দন ব্র্যান্ডের রাইস ব্রান তেল উৎপাদনকারী কোম্পানিটির মূল উদ্যোক্তা ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিবুল গণি গালিব ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দুদকের মামলায় গ্রেফতারের পর সংকটের শুরু। কোম্পানির শেয়ার বিক্রি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। অন্যদিকে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ও বেতন অনিশ্চিত হওয়ায় চাকরি ছাড়ছেন অনেক কর্মচারী।

কোম্পানিটির বর্তমান নেতৃত্ব অবশ্য জানিয়েছে, সাবেক এমডির শেয়ার প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দায়দেনা শোধ করতে চেষ্টা করছেন তারা। এ নিয়ে সম্প্রতি দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। কিন্তু কোন বৈঠকে ফলপ্রুস হয়নি।

পাশাপাশি ঐ সময় আগামী এক মাসের মধ্যে কোম্পানির দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির পরিচালক স্বজন কুমার বসাক। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন অগ্রগতি হয়নি। এদিকে খেলাপি ঋণ আদায়ে গত বছরের ডিসেম্বরে কোম্পানির জমিসহ কারখানা বিক্রি করতে নিলাম ডেকেছে বেসিক ব্যাংক। তবে প্রথম দফায় নির্ধারিত সময়ে কেউ নিলামে অংশ নেয়নি।

অন্যদিকে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ক্যাপিটালও পাওনা আদায়ে কোম্পানিটির কয়েকটি পিকআপ ভ্যান জব্ধ করেছে। এ ছাড়া শেরপুরে কোম্পানিটির কারাখানা এলাকার কাঁচামাল সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরা পাওনা ১০ কোটি টাকা আদায়ে আইনি সহায়তা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।