teacherদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের নেতাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে চলে গেলেন সাধারণ শিক্ষকরা। শিক্ষকদের আপত্তি একটাই- মন্ত্রী কেন বললেন, আন্দোলন যৌক্তিক কি না তা বৈঠকের মাধ্যমে দেখা হবে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে বেতন বৈষম্য দূর করতে মহাজোট নেতারা গত শনিবার সকাল ১০টা থেকে আমরণ অনশনের ডাক দেন।

কিন্তু তাদের এই দাবি পূরণ না করে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষকদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। আর সেই ঘোষণাকে সমর্থন করেন শিক্ষক নেতারা। যা সাধারণ শিক্ষকরা মানতে পারছেন না।

সোমবার বিকেলে মন্ত্রী শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের দাবি যৌক্তিক কি না- এটা আলোচনার মধ্যমে দেখা হবে। এ কথার প্রেক্ষিতে উপস্থিত শিক্ষকরা তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন।

এ সময় উপস্থিত মহাজোটের নেত্রী নাসরিন সুলতানা সাধারণ শিক্ষকদের বলেন, আমাদের উপর আস্থা রাখুন, আমরা দালালি করছি না। দাবি পূরণ হবে। আমাদের অভিভাবকদের সাথে কথা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বৈঠকে বসে এই সমস্যা সমাধান করবেন। এ সময় উপস্থিত সাধারণ শিক্ষকরা হাত তুলে বলেন, না না না… এখানেই সমাধান করতে হবে।

এসময় পাশে থাকা মন্ত্রী মাইকে বলছিলেন, আপনারা কথা শুনুন। আন্দোলন করে সমাধান হবে না। টেবিলে বৈঠকে বসেন সমাধান হয়ে যাবে। মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কোনো দাবি আদায় হবে না। উপস্থিত শিক্ষকরা মন্ত্রীর উপর ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। সেই সাথে শিক্ষক নেতাদের দালাল বলে স্লোগান ধরেন।

তখন ১০টি সংগঠনের শিক্ষক নেতারা সাধারণ শিক্ষকদের চুপ থাকার নির্দেশ দেন। তবে সাধারণ শিক্ষকরা নেতাদের কথায় থেমে যাননি। এর মধ্যে শহীদ মিনারে উপস্থিত শিক্ষক নেতা নাসরিন সুলতানাকে পানি খাওয়ায়ে স্থান ত্যাগ করেন মন্ত্রী। সাথে শিক্ষক নেতারাও স্থান ত্যাগ করেন।

এদিকে সাধারণ শিক্ষকরা স্লোগান দিতে থাকেন দালাল নেতাদের মানি না। এসময় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেক শিক্ষক উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, কেমন মন্ত্রী শুধু একজনকে পানি খাওয়াইয়ে চলে গেলেন। আর নেতারা কি আমাদের পুতুল বানিয়ে পালিয়ে গেলেন।

হাতিয়া থেকে আসা শিক্ষক নূর ইসলাম বলেন, ৩ বছর আগে একই কথা বলেছিলেন। এবারও একই কথা বলছেন। যা আমরা মানি না, মানব না। তবে বিকেলে শিক্ষক নেতারা বারবার বলছিলেন, দাবি পূরণ না হলে আমাদের মারবেন। তবুও মন্ত্রী, সচিবদের অপমান করবেন না।

গত তিন দিন টানা অনশন করার পরও দাবি আদায় না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষকরা ক্ষোভ নিয়ে চলে যান। তারা নেতাদের ডাকে আর আন্দোলনে আসবেন না বলেও জানান।

বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের আহ্বানে কর্মসূচিতে অংশ নেয় বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ, জাতীয় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশন, সহকারী শিক্ষক ফ্রন্টসহ ১০টি সংগঠনের অধীনে কয়েক হাজার শিক্ষক।

জানা যায়, ২০১৫ সালে ঘোষিত অষ্টম জাতীয় পে-স্কেল অনুযায়ী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা (২য় শ্রেণি) ১১তম গ্রেড অর্থাৎ ১২ হাজার ৫০০ টাকা এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া প্রধান শিক্ষকরা ১২তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন ১১ হাজার ৫০০ টাকা।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে অর্থাৎ ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন পাচ্ছেন আর প্রশিক্ষণ ছাড়া সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১৫তম গ্রেডে ৯ হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে নতুন স্কেলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেড এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া প্রধান শিক্ষকরা পাবেন ১১তম গ্রেডে, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। সহকারী শিক্ষক, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও প্রশিক্ষণ ছাড়া প্রধান শিক্ষকরা যে বেতন পাবেন, তার পরের ধাপে তারা বেতন চান। অর্থাৎ প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে বেতন চান সহকারী শিক্ষকরা।

অনশনে অংশ নেওয়ার আগে শিক্ষকরা জানান, তাদের এই দাবি পূরণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা উপ-পরিচালকদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

তারা আরো জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনসহ সারাদেশে জেলা পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।