DSE_lg20160127095835আমিনুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িত লাখে বিনিয়োগকারী সাত বছর পর একটি মন্দের ভালোর বছর পার করতে যাচ্ছে। তারা ২০১৭ সালে থেকে বিনিয়োগকারীরা নতুন আশায় বুক বেঁধেছে। কারণ ২০১০ সাল থেকে বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো না থাকলেও চলতি বছর বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও লোকসান পোষাতে পেরেছে।

পুরনো ব্যথা ভুলে নতুন বছরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এই বছরটি তাদের জন্য ভালো যাবে এমন প্রত্যাশা লাখো বিনিয়োগকারীর। সকলের প্রত্যাশা এই বছরটি হবে তাদের মুনাফার বছর।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বিনিয়োগকারীরা জানান, প্রতি বছরই আমরা স্বপ্নে বিভোর থাকি বাজার ভালো হবে এই ভেবে। কিন্তু প্রতি বছরই আমাদের সেই প্রত্যাশা বিবর্ণ স্বপ্নে পরিণত হয়। আশা করি এ বছরটি তেমন যাবে না। তারা আরো বলেন, আর অস্থিরতা নয়, নতুন বছরে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের প্রত্যাশা করছেন তারা। বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষও একই প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছে।

front page (3)পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত বছর পুঁজিবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করলেও ২০১৭ সালে এসে কিছুটা হলেও পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা বিরাজ ছিল। তবে ডিসেম্বর মাসে হযবরল থাকলেও নতুন বছরে স্থিতিশীল পুঁজিবাজার প্রত্যাশা করছেন বিনিয়োগকারীরা। সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সংস্কারের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। কিছু ইতিবাচক উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে অবশ্যই পুঁজিবাজারে এর ভালো প্রভাব পড়বে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত উল্লাহ ফিরোজ বলেন, অতীতের সব কষ্ট, বেদনা ভুলে নতুন বছরে নতুন কিছুই করছি। আমাদের প্রত্যাশা একটি স্থিতিশীল বাজার। তিনি বলেন, ‘আমরা গত বছরের মতো দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে ব্যবসা করতে চাই না। আমাদের স্বপ্ন একটি স্থিতিশীল ও শক্তিশালী বাজার। আমার বিশ্বাস, নতুন বছরে আমাদের এই প্রত্যাশা পূরণ ও স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।’

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাবেক সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ বলেন, ‘নতুন বছরে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার প্রত্যাশা করি।’ এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (এসইসি) যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে বাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

শাকিল রিজভী ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগোলে ভবিষ্যৎ ভালো যাবে বলা যায়। তিনি বলেন, সামনের দিনে নতুন নতুন ভলো প্রতিষ্ঠান বাজারে আসবে। এতে বিনিয়োগকারীরা আশান্বিত হবেন। সুতরাং হতাশ হওয়ার কিছু নেই, চড়াই-উতরাইয়ের পর অবশ্যই সম্ভাবনা আসবে।

শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. মুসা বলেন, ‘আজকের বাজারের যে ইঙ্গিত, তা দেখে মনে হয়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় রয়েছেন। এটি একটি ভালো লক্ষণ।’ এ অবস্থা বিরাজ করলে বাজারে ভালো প্রভাব পড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট আহসানুল হক টিটু বলেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকারসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। যার প্রতিফলন দেখতে শুরু করছে বিনিয়োগকারীরা। আশা করি নতুন বছর বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন বার্তা নিয়ে আসবে।

page 7এদিকে বিএসইসি, ডিএসই, বাংলাদেশ ব্যাংক, সর্বোপরি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার পক্ষ থেকে এসেছে বিভিন্ন প্রণোদনা। হয়েছে একাধিক আইনের পরিবর্তন। এ সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন। বিএসইসি উন্নীত হয়েছে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে। হয়েছে আরও কয়েকটি সংস্কার। আর এ কারণে নতুন বছর তাদের জন্য নতুন বার্তা বয়ে আনবে এমন প্রত্যাশা করছেন বিনিয়োগকারীসহ অনেকে।

বরিশালের বিনিয়োগকারী কাজী হোসাইন আলী বলেন বলেন, সদ্য বিদায়ী বছরে পুঁজিবাজার ভালো কেটেছে। বছরের প্রথম কয়েক মাস বাজারে ভাল অবস্থায় ছিল। তবে শেষের হযবরল অবস্থা থাকলেও নতুন বছরে বাজারে ভাল বার্তা নিয়ে আসবে। কারন সামনের বছর নির্বাচনী হাওয়া। সরকার যে কোন মুল্যে বাজার ভাল রাখবে। এ প্রত্যাশা আমাদের। বরিশালের প্রায় লক্ষাধিক বেশি বিনিয়োগকারী রয়েছে। নতুন বছরে নতুন স্বপ্নের জাল বুনছেন তারা।

খুলনার বিনিয়োগকারী আতাউর রহমান বলেন, নতুন বছরের শুরু থেকেই চিন্তা-ভাবনা করে বিনিয়োগ করতে চাই। বিদায়ী বছরের শেষে বাজার গতিশীল ধারায় ফিরেছে, তাই নতুন বছরে বাজার ভালো যাবে- এমনটাই প্রত্যাশা করছি।

আব্দুল্লাহ নামের বিনিয়োগকারী বলেন, নতুন বছরে মৌল ভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বাড়বে আশা করছি। এতে বাজার আরও ভালো হবে। বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবেন।

রাজশাহীর বিনিয়োগকারী আব্দুস সামাদ বলেন, ২০১০ সালের ধস পরবর্তী সময় থেকে আমরা ভালো পুঁজিবাজারের অপেক্ষায় আছি। কিন্তু এখনও আমাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তাই নতুন স্বপ্ন দেখতে ভয় পাই। তবু নতুন বছরে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের স্বপ্ন দেখি। আশা করছি, ২০১৮ সাল আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে।

এম সিকিউরিটিজের কর্মকর্তা রহমান বলেন, নতুন বছরে পুঁজিবাজার নিয়ে ব্যাপক প্রত্যাশা পোষণ করছেন আমাদের বিনিয়োগকারীরা। সর্বস্তরের বিনিয়োগকারীই নতুন করে বিনিয়োগের ছক কষছেন।