rohingyaদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্রোত কমছে না। সম্প্রতি অক্সফাম সতর্ক করে বলেছে, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্বাস্থ্যকর এবং ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে এভাবে রোহিঙ্গারা আসতে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে চলমান পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবেলা করতে এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বের করতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘ এবং বিশ্ব নেতাদের কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে দাতা সংস্থা অক্সফাম।

রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার। তাদেরকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যা ৬ কোটি। দেশটিতে ১৩ লাখ রোহিঙ্গার বাস ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন থেকে পালিয়ে বাঁচতে অর্ধেকের বেশি রোহিঙ্গাই নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি চেক পোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। শুদ্ধি অভিযানের নামে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালায় সেনারা। তারা রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, নারীদের ধর্ষণ করেছে, নির্বিচারে বহু মানুষকে হত্যা করেছে।

সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে ৬ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেনাবাহিনীর হাতে ২৫ আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ৯ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।

রাখাইনে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক চাপে রয়েছে মিয়ানমার। আন্তর্জাতিক চাপ এবং রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতে মিয়ানমার সরকার অঙ্গীকার করেছিল যে তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে।

কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের তরফ থেকে শক্তিশালী কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না এবং সে ক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকারের সদিচ্ছারও অভাব রয়েছে, এছাড়া খুব কম সংখ্যক রোহিঙ্গাই বিশ্বাস করেন যে, মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নেবে। তারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো সমাধান খুঁজে বের করা এবং রোহিঙ্গাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দা জানিয়েছেন আয়ারল্যান্ডে অক্সফামের প্রধান নির্বাহী জিম ক্লারকেন।

বাংলাদেশের কক্সবাজারে অস্থায়ী শিবিরে বসবাসকারী দুই শতাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছে অক্সফাম। দাতা সংস্থাটি জানিয়েছে, এখানে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা বিশেষ করে নারীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তারা মিয়ানমারের যে পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে এসেছেন তা সত্যিই খুব ভয়াবহ।

এখানকার বেশির ভাগ নারীই মিয়ানমারের সেনাদের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেককেই গণধর্ষণও করা হয়েছে। তাদের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। অনেক নারীর চোখের সামনেই তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে।

এসব নির্যাতনের কথা ভেবে এখনও শিওরে ওঠে রোহিঙ্গারা। আর সে কারণেই অনেক রোহিঙ্গাই মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া চেয়ে বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলোতেই থাকতে চান।

রোহিঙ্গারা বলছেন, তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, অন্যান্য নাগরিকদের মতো সমান অধিকার, কাজের অনুমতি এবং চলাফেরার সুবিধা দেয়া হলেই তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন তার আগে নয়।

মিয়ানমার এখন ঘোষণায় জানিয়েছে, যেসব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে তারা নিজেদের বাড়ি-ঘরেই ফিরে যাওয়ার অনুমতি পাবে। কিন্তু বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, রোহিঙ্গাদের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে শরণার্থী ক্যাম্পে রাখা হবে।

রাখাইন রাজ্যের তাওংপিওয়ো লেটওয়ে গ্রামে একটি পুলিশ চেকপোস্টের পাশেই ইতোমধ্যে দু’টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে মিয়ানমার সরকার বলছে ফিরিয়ে নেয়া রোহিঙ্গাদের সাময়িকভাবে ওই ব্যারাকে রাখা হবে। এসব খবরে আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা। তারা মিয়ানমারে ফিরে আবারও নির্যাতনের মুখোমুখি হতে চান না।

ক্লারকেন বলেন, অনেক রোহিঙ্গাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তারা নিজেদের পরিবারের লোকজন বা প্রিয় মানুষদের চোখের সামনে ধর্ষণ হতে বা খুন হতে দেখেছেন। এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তারা দেশে ফিরে যাবেন না, প্রয়োজনে তারা আত্মহত্যা করবেন বলে জানিয়েছেন।

মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য জাতিসংঘ এবং বিশ্বনেতাদের এগিয়ে আসতে হবে বলে উল্লেখ করেন ক্লারকেন।