dse dorpotonদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সদ্য সমাপ্ত বছরে ১০ কোম্পানির শেয়ারে ইতিহাস রেকর্ড করছে। ব্যবসায়িক দুরবস্থা অব্যাহত থাকলেও বছর জুড়ে দাপুটে অবস্থায় ছিল পুঁজিবাজারের ‘জেড’ ক্যাটাগরির তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো।

সদ্য সমাপ্ত বছরে (২৮ ডিসেম্বর সর্বশেষ লেনদেনের তথ্য অনুযায়ী) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বেড়েছে সর্বোচ্চ ২৯৪ শতাংশ। এসময় ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর ১৪টির শেয়ার দর বেড়েছে ১০০ শতাংশের বেশি। পরিবর্তন ডটকমের অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হওয়া ৩৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২২৬টির, দর কমেছে ১১৬টির।

এখানে ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭-তে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া শেয়ারের সর্বশেষ বাজার দর ও ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ সালের লেনদেনের সমাপনী দরকে উপাত্ত হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সর্বোচ্চ দর বাড়ার তালিকায় ছিল দুলামিয়া কটন, সাভার রিফ্যাক্টরিজ, নর্দান জুট, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, রূপালী ব্যাংক, মুন্নু সিরামিক, শ্যামপুর, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, আজিজ পাইপস, স্টান্ডার্ড সিরামিক, ইমাম বাটন ও সমতা লেদার।

দুলামিয়া কটন: ২০১৬ সালের সর্বশেষ কার্যদিবসে বস্ত্র খাতের দুলামিয়া কটনের সমাপনী বাজার দর ছিল ৮.২ টাকা। এদিকে, ২০১৭ সালের সর্বশেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির সমাপনী বাজার দর ২৬.৫ টাকায় স্থিতি পেয়েছে। সদ্য সমাপ্ত বছরে দুলামিয়া কটনের শেয়ার দর বেড়েছে ২২৩.১৭ শতাংশ বা ১৮.৩ টাকা। এসময় কোম্পানিটির সর্বোচ্চ শেয়ার দর ছিল ৩৪.৫ টাকা।

৩০ জুন ২০১৭ সমাপ্ত হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘নো’ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। এসময় কোম্পানিটির পুঞ্জিভূত লোকসান হয়েছে ২৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১.১২ টাকা।

সাভার রিফ্যাক্টরিজ: বিবিধ খাতের তালিকাভুক্ত সাভার রিফ্যাক্টরিজের শেয়ার দর বেড়েছে ১৯৩.৬৬ শতাংশ বা ৯৭.৮ টাকা। ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৫০.৫ টাকা, কিন্তু চলতি বছরের সর্বশেষ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর ছিল ১৪৮.৩ টাকা। ২০১৭ সালে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ শেয়ার দর ছিল ১৭২.৭ টাকা ও সর্বনিম্ন দর ছিল ৪৯.১ টাকা।

নর্দান জুট: এ’ ক্যাটাগরির আওতাভুক্ত হলেও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেই লোকসান করেছে নর্দান জুট মেনুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। কিন্তু টানা উত্থানে রেকর্ড গড়েছে কোম্পানিটি। বছরজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৫৩.২৫ শতাংশ বা ৩৩৫ টাকা।

২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ সালে কোম্পানিটির সমাপনী বাজার দর ছিল ২১৮.৬ টাকা। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৫৫৩.৬ টাকায় স্থিতি পেয়েছে। এদিকে, ২০১৭ সালে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বোচ্চ ৭১৮.৮ টাকা ও সর্বনিম্ন ২১৮ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

লিগ্যাসি ফুটওয়্যার: উৎপাদন বন্ধের খবরেও চলতি বছরের অধিকাংশ সময়েও লাগামহীন ছিল লিগ্যাসি ফুটওয়্যার। বছরান্তে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৪৩.৯১ শতাংশ বা ৩৩.১ টাকা।

২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ কোম্পানিটির সমাপনী বাজার দর ছিল ২৩ টাকা, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৫৬.১ টাকা। এসময় কোম্পানিটির শেয়ার সর্বোচ্চ ৬৬ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

রূপালী ব্যাংক: সদ্য সমাপ্ত বছরে পুঁজিবাজারের ব্যাংকিং খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাপুটে অবস্থানে ছিল রূপালী ব্যাংক। ২০১৭-এর শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার ১৪১.৬১ টাকায় স্থিতি পেয়েছে। এসময় কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৪১.৬১ শতাংশ বা ৩৩.১ টাকা। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬-এ কোম্পানিটির সমাপনী বাজার দর ছিল ২৭.৪ টাকা।

এছাড়া মুন্নু সিরামিকের ১২২.৫৮ শতাংশ, শ্যামপুর সুগারের ১২২.৩৮ টাকা, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের ১১৭.৩৩ শতাংশ, আজিজ পাইপসের ১১২.৮৬ শতাংশ, স্টান্ডার্ড সিরামিকের ১১২.৭৯ শতাংশ, ইমাম বাটনের ১০৮.১৯ শতাংশ ও সমতা লেদারের ১০০.৯৫ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, লোকসানী কোম্পানিগুলোর এমন উত্থান অস্বাভাবিক। বড় মূলধনী ও মুনাফাধারী কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বেশি হওয়ায় কারসাজি চক্র কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে কারসাজি করতে পারে না। কিন্তু স্বল্পমূলধনী ও লোকসানি কোম্পানিগুলোর অধিকাংশেরই মূলধন ও শেয়ার কম।

তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেনে আরো নজরধারী বাড়ানো উচিত। এতে করে অস্বাভাবিক লেনদেন ও কারসাজি হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।