pmদেশ প্রতিক্ষণ,ঢাকা: সুষম উন্নয়নের লক্ষমাত্রা অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি পেয়েছে সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলের জনঘোষ্ঠী। এসব মেগা প্রকল্পে যেমন হবে কর্মসংস্থান তেমনি হবে ত্রিমাত্রিক উন্নয়ন। বদলে যাবে গোটা সমাজের প্রতিছ্চবি। বহুমাত্রিক সেসব প্রকল্প নিয়েইে এবারের নিবন্ধ: দক্ষিনাঞ্চল ঘিরে যত জাতীয় প্রজেক্ট।

পায়রা বন্দর- পায়রা বন্দর বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের তৃতীয় সামুদ্রিক বন্দর। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার রাবনাবাদ চ্যানেলসংলগ্ন আন্ধারমানিক নদীর পাড়ে ইটবাড়িয়ায় অবস্থিত। ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামে ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন।

১৩ আগস্ট ২০১৬, সমুদ্র বন্দরটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সাত হাজার একরের বেশি ভূমি জুড়ে নির্মিত হচ্ছে পায়রা বন্দর। ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা।  তবে জাহাজ ভেড়ার অবকাঠামো নির্মিত হয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে ভিড়তে শুরু করেছে জাহাজ।

২০২৩ সালে পূর্ণাঙ্গভাবে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হবে। তখন এ বন্দরে সাড়ে সাত হাজার কনটেইনারের স্থানসংকুলান হবে। ২০২৮ সাল নাগাদ এ বন্দর দিয়ে চার কোটি টন কয়লা খালাস হবে। এছাড়া এখানে ভবিষ্যতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

পায়রা বিদুৎকেন্দ্র: পায়রা সমুদ্র বন্দর পরিচালনাসহ আনুসঙ্গিক কাজের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে পটুয়াখালীর পায়রায় নির্মাণাধীন রয়েছে ১৩২০ মেগাওয়াট থারমাল পাওয়ার প্লান্টের (কয়লাভিত্তিক) প্রকল্প, যার ব্যয় হ্রাসে ইতোমধ্যে ৫৭১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার স্ট্যাম্প ফি মওকুফ করেছে সরকার।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড।  তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের ৮০ শতাংশ ঋণ দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও চায়না ডেভলপমেন্ট ব্যাংক বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকারের যোগান। প্রকল্প এলাকার ৩১ শতাংশ কাজ শেষ। আশা করা হচ্ছে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে দুটি ইউনিটের মধ্যে প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।

প্রকল্প এলাকায় হাজার একরের ওপর স্থানজুড়ে চলছে প্রকল্পটির বিশাল নির্মাণযজ্ঞ। পুরো এলাকা আগেই দেয়াল তুলে ঘিরে রাখা হয়েছে। চীন, ভারত, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার মানুষ এখানে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। পায়রা বন্দর নির্মাণের আগেই আমদানি করা কয়লা খালাসের জন্য এখানে একটি নিজস্ব জেটি নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আনা নির্মাণসামগ্রী অত্যাধুনিক ক্রেনের মাধ্যমে নামিয়ে ট্রাকযোগে প্রকল্প এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত নির্মিত হতে যাওয়া সবচেয়ে বড় পাওয়ার হাব এটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে পায়রায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের কথা চিন্তা করছেন।

কেননা, পদ্মা সেতু তৈরি হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। যার মধ্যে শুধু পায়রা থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ চলছে। তবে তা শুধু কয়লা দিয়ে নয়, এলএনজি থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের চিন্তাভাবনা চলছে।

ঢাকা-পায়রা রেল প্রকল্প: ২৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেললাইন স্থাপনের কাজ ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা। বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ব্রিটিশ কোম্পানি ডিপি রেল লিমিটেড ইউকে-র মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানটি নকশা প্রণয়ন, অর্থায়ন, লাইন নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে৷

এ কাজে সহযোগিতা করবে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশন৷ এই রেলপথের মাধ্যমে বছরে প্রায় ২০ লাখ ইউনিট কনটেনার পরিবহন সম্ভব হবে৷ দক্ষিণ অঞ্চলের জন্য এ রেললাইনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে বরিশাল বিভাগ প্রথমবারের মতো রেল সংযোগের আওতায় আসবে৷ এটি রেল খাতের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।

দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র হবে দক্ষিণাঞ্চলে: দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে তোলা হবে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র। এজন্য প্রাথমিকভাবে চর অঞ্চলের আটটি স্থানে সমীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। উপকূল অঞ্চলের পটুয়াখালীর পক্ষিয়ার চর, বরগুনা জেলার খোট্টার চর, নিদ্রার চর, টেংগার চর, আলিসার মোড়, খুলনা জেলার চর হালিয়া, নোয়াখালীর বয়রা চর ও ফেনী জেলার মুহুরীর চর প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা হয়েছে।

এসব অঞ্চলের পাঁচ কিলোমিটারের ব্যাসার্ধের জনসংখ্যা, সিসমিক স্ট্যাবিলিটি, ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থান, বৈদ্যুতিক অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার তথ্য সংগ্রহ করতে ‘বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান নির্বাচনের সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

সরকার ৩০ ভাগ বিদ্যুত্ পারমাণবিক শক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও আমদানির মাধ্যমে মেটানোর লক্ষ্য এই প্রকল্প নিয়েছে। লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২৪-২৫ সাল নাগাদ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রের দুইটি ইউনিটের মাধ্যমে ১৩শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করা হবে। অন্যদিকে ২০৪১ সালের মধ্যে দুই ধাপে আরো চারটি পারমাণবিক বিদ্যুত্ ইউনিট করার লক্ষ্য রয়েছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নৌঘাটি হবে দক্ষিণাঞ্চলে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চব্বিশ ডিসেম্বর রবিবার চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর এক অনুষ্ঠানে ঘোষনা দিয়েছেন যে বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীতে এভিয়েশন সুবিধাসহ দেশের সবচেয়ে বড় নৌঘাঁটি নির্মান করা হবে। এবং রাজধানীর খিলক্ষেতে বঙ্গবন্ধু নৌঘাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া কুতুবদিয়াতে সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণ করা হবে। তবে এসব প্রকল্পের ব্যয় ও সম্ভাব্য সময়সীমা নিয়ে এইমূহুর্তে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

৩১তম সেনানিবাস হচ্ছে বরিশালে: দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার পায়রা নদীর পাশে লেবুখালীতে একটি আধুনিক সেনানিবাস স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

প্রস্তাবিত সেনানিবাসটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নামকরণ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে। সাধারণত নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্ট কাজের জন্য সেনানিবাস স্থাপন করা হয়।

কিন্তু বাংলাদেশের সেনাবাহিনী শুধু দেশ রক্ষা ও নিরাপত্তা দেওয়ার কাজ করে না, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও দুর্যোগ দেখা দিলে তখন পরিস্থিতি উন্নয়নে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করা হয়। পদ্মার ওপারে উপকূলীয় অঞ্চলে কোনো সেনানিবাস নেই। ফলে উপকূলীয় ২১ জেলার প্রতিরক্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করা হয় প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরের যশোর সেনানিবাস থেকে। এ জন্য বরিশালে এ সেনানিবাস স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বরিশালে একটি সেনানিবাস দরকার এই ধারণা এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। সেনাবাহিনী এ ধারণা নিয়ে আসেনি। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব জেনে সেনাবাহিনী সেনানিবাসটির নামকরণ প্রধানমন্ত্রীর নামে করতে চেয়েছে।

বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার বাকেরগঞ্জ, দুমকী ও মির্জাগঞ্জে অবস্থিত এক হাজার ৫৩২ একর জমিতে এ সেনানিবাস স্থাপনে ব্যয় হবে এক হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। পুরো ব্যয় আসবে সরকারি তহবিল থেকে। ইতিমধ্যে রাজস্ব বাজেট থেকে ৫৬৭ একর জমি কেনা হয়েছে। বাকি ৯৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকল্প এলাকাটি মূলত চরাঞ্চল, বিশেষ জনবসতি নেই। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে সেনা সদরদফতর।

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে বরিশালে: বেপজার তালিকায় বরিশালের নাম রয়েছে তবে প্রকল্প সম্পর্কে একশটি ইকোনোমিক জোনের যে কাজ শুরু হয়েছে তার দ্বিতীয়ভাগে পরেছে বলে খবরে প্রকাশ। তাই এই মুহুর্তে ব্যয় ও সম্ভব্য সময়সীমা নিয়ে কোন তথ্য দেয়া যাচ্ছে না।

অন্যান্য প্রকল্প: বরিশাল কোষ্টাগার্ডের রিজিওনাল সদর দপ্তর স্থাপন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের পূর্ণাঙ্গ টিভি কেন্দ্র স্থাপন, বরিশাল বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তর স্থাপন, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ট্রাক টার্মিনাল স্থাপন, বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক), আইসিটি পার্ক (হাইটেক পার্ক) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, মানব কল্যান ও জনমুখী ভূমি সেবা জনগনের দোরগোড়ায় পৌছে দেয়ার লক্ষে অর্থ বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য প্রায় ৯৩৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে।