uttor cityদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: রংপুর সিটি করপোরেশনে (রসিক) পরাজয়ের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচন নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। রসিকে বড় ব্যবধানের পরাজয়ে নেতাকর্মীদের মনোবলে কিছুটা চিড় ধরায় এ দ্বিধা দেখা দিয়েছে।

অবশ্য দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ থেমে নেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও রাজধানীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন,সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই চলছে। তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

গত ৩০ নভেম্বর আনিসুল হকের মৃত্যুতে ডিএনসিসির মেয়র পদ খালি হয়। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি এ পদে উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ৯ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণার কথা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো জানিয়েছে, রসিক নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বড় ব্যবধানে পরাজয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মনোবলে কিছুটা চিড় ধরিয়েছে। ডিএনসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে তাই দলের শীর্ষপর্যায়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

যদিও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারায় সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে দাবি করে পরাজয়ের বিষয়টি এড়িয়ে চলছে ক্ষমতাসীনরা। গত ২৩ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় রংপুরে নৌকার প্রার্থীর বড় ব্যবধানের পরাজয়কে অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করেছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।

অবশ্য দলের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ ও ফারুক খান। তারা বলেন, এই নির্বাচন নিয়ে দলের ভেতরে বিভিন্ন আলোচনা ও মতামত আছে। এগুলো নিয়ে বিচার বিশ্লেষণও চলছে। সবকিছুর সমাধান হবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডে।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, প্রায় প্রতিদিনই আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডিএনসিসি নির্বাচন নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনা হচ্ছে নেতাদের মধ্যে। সেখানে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের বিষয়টি ফুটে ওঠে।

এতে কেউ কেউ রসিকে বড় পরাজয়ের বিষয়টি তুলে আনেন। কেউ কেউ মন্তব্য করেন, ডিএনসিসিতেও বড় পরাজয় ঘটলে আওয়ামী লীগ ইমেজ সংকটে পড়বে। কোনও কোনও নেতা শক্তিশালী প্রার্থী দিলে জিতে আসা সম্ভব হবে বলে পরামর্শ দেন।

ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ বলছেন, রংপুর ঢাকার বাইরের সিটি করপোরেশন হওয়ায় বিরূপ প্রভাব এখনও বুঝতে পারছেন না অনেকেই। তবে ডিএনসিসি নির্বাচনে রসিক নির্বাচনের মতো পরাজয় হলে জাতীয় নির্বাচনের আগে এটি দলের নেতাকর্মীদের মনোবলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

ইমেজ সংকটেও পড়বে আওয়ামী লীগ। ফলে প্যানেল মেয়র দিয়ে বা প্রশাসক নিয়োগ করে ডিএনসিসির বাকি মেয়াদ পার করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে পরামর্শ দিয়েছেন অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। আবার,নির্বাচন না হওয়ার কোনও দায় নেওয়া যাবে না বলেও পরামর্শ দিয়েছেন শীর্ষপর্যায়ের অনেক নেতা। দলটির নেতাদের ঘরোয়া আলোচনায় ডিএনসিসি নির্বাচন নিয়ে এমন নানামুখী চিন্তাভাবনা উঠে এলেও এ সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে কোনও নেতা কথা বলতে রাজি নন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ডিএনসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে দলের ভেতর পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে। কারও কারও মতে, ঢাকা সিটির এই নির্বাচনে পরাজয় হলে জাতীয় নির্বাচনে নেতাকর্মীদের মনোবল ঠিক রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। ফলে এই নির্বাচনকে ‘রিস্ক’ হিসেবে দেখছেন তারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দু’জন সদস্য বলেন, সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। যেনতেনভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর বিজয় চায় না। তাই ডিএনসিসি নির্বাচন নিয়ে অনেক রকম ভাবনা কাজ করছে।