mostackদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম খন্দকার মোশতাক আহমদের ছবি স্থান পেয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায়। তাও আবার বঙ্গবন্ধুর ছবির সঙ্গেই!

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আয়োজনে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ প্যাভিলিয়নে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর আঁকা ২৬টি চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্বজিৎ গোস্বামীর আঁকা ২৩ নম্বর চিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল, মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের পাঁচ মন্ত্রীর শপথ গ্রহণের চিত্র।

আম বাগান, হাজারো জনতা ও মন্ত্রীদের শপথের সেই ছবির বড় একটা অংশ জুড়ে আছেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। তার সামনে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অংশ হিসেবে শপথ নেওয়া পাঁচ মন্ত্রী। সামনের সারিতে আছেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও খন্দকার মোশতাক আহমেদ।

বঙ্গবন্ধুর খুনের সাথে জড়িত খন্দকার মোশতাক আহমেদকে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে একই ফ্রেমে রাখায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দর্শনার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা বলেন, এই ছবিটা দেওয়া উচিত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর খুনিকে তার সঙ্গে একই ফ্রেমে দেখতে হলো। বিষয়টা দুঃখজনক।

স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মাহফুজ আল মমিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে ছবিটা দেখে ভেবেছিলাম তিনি বঙ্গবন্ধুর নিকটজন হবেন। কিন্তু নাম পড়ে মনে পড়লো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা যে বৈঠকে হয়েছিল তার উদ্যোক্তা ছিলেন এই মোশতাক। বঙ্গবন্ধুর রক্তের দাগ শুকানোর আগেই প্রেসিডেন্ট হিসেবেও শপথ নেন তিনি। তার আমলেই জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এমন খুনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে, মানা যায় না।

বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ২৬টি চিত্রে বঙ্গবন্ধু স্টলের কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বিষয়টা দুর্ভাগ্যজনক ও অনুচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ।তিনি বলেন, ‘আঁকা ছবি এভাবে প্রদর্শন খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা আগেও বলেছি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণের ছবি কোথাও যদি ছাপতে হয় তো ক্রস মার্ক দিয়ে লিখে দিতে হবে খন্দকার মোশতাক মুজিবনগর সরকারে ছিল এবং পরে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

‘মোশতাক শুধু ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এমনতো নয়। সে মুজিবনগর সরকারের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র করেছিল বলেই ১৯৭১ এর আগস্ট মাসে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’

শাহরিয়ার কবির আরো বলেন, ইতিহাসের কথা বলে। মোশতাকের ছবি জনসম্মুখে প্রদর্শন করলে তরুণ প্রজন্মের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। মোশতাকের প্রতি সহানুভূতি জন্মাবে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।

বঙ্গবন্ধু হত্যায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত খুনিদের একজন মেজর সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খন্দকার মোশতাক আহম্মদ এবং মেজর খন্দকার আব্দুর রশিদের মধ্যে পঁচাত্তরের ১৪ আগস্টের একটি বৈঠকের বর্ণনা দেয়।

সেখানে শাহরিয়ার রশিদ সেখানে বলেন, সেদিন বিকেলে মেজর রশিদ এবং মেজর নূর তাকে মন্ত্রী খন্দকার মুশতাকের আগামসি লেনের বাসায় নিয়ে যায়। যাবার পথে তারা গাড়ি রেখে যায় চানখারপুলে। তাদের মধ্যে এমন আলোচনা হয় যাতে পরদিন সকালে খন্দকার মোশতাক তার বাসায়ই অবস্থান করে।

আরেক খুনি মেজর ফারুকও তার জবানবন্দিতে স্বীকার করে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগের দিন খন্দকার মোশতাকের আগামসি লেনের বাসায় শেষ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই ঠিক হয়ে যায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাকই হবে রাষ্ট্রপতি।