dragon-lagoমোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি ড্রাগণ সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিংয়ের ব্যবস্থাপনার অনিয়মের কারনে শেয়ারহোল্ডাররা শাস্তি পাচ্ছে। অনিয়ম করছে কোম্পানির আর শাস্তি পাচ্ছে শেয়ারহোল্ডাররা এ কেমন আইন এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আলোচনার শেষ নেই।

কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) উত্তোলিত ফান্ড ব্যবহারে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা (ম্যানেজম্যান্ট) অনিয়মের জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানিটিকে জরিমানা করেছে। যা স্বাভাবিকভাবেই শেয়ারহোল্ডারদেরকে বহন করতে হবে। বিএসইসির এমন শাস্তি কোনভাবেই ন্যায়সঙ্গত নয় বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। গত মঙ্গলবার বিএসইসির ৬২৩তম কমিশন সভায় এই জরিমানা করা হয়েছে।

কোম্পানিটি আইপিও’তে উত্তোলিত অর্থের ৫৩.৬২ শতাংশ নগদে ব্যয় করেছে। এবং এই ব্যয়কে আর্থিক হিসাবে না দেখানোর মাধ্যমে আইপিও সম্মতি পত্র নং-এসইসি/সিআই/আইপিও-১৮১/২০১২/৬২১ এর পার্ট সি এর প্যারা ৭ লংঘন করেছে। আর বুকস অব অ্যাকাউন্টস সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করার মাধ্যমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর সেকশন লংঘন করা হয়েছে।

এছাড়া প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত ঘোষণা মোতাবেক যন্ত্রপাতি ক্রয় না করা ও যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার মাধ্যমে আইপিও সম্মতি পত্র নং-এসইসি/সিআই/আইপিও-১৮১/২০১২/৬২১ এর পার্ট সি এর প্যারা ৮ লংঘন করা হয়েছে। এইসব অনিয়মের কারনে ড্রাগণ সোয়েটারকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জরিমানার টাকা কোম্পানির ব্যয় হিসেবে দেখানো হয়। এতে করে শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু ভুল বা অনিয়ম করেও ব্যবস্থাপনায় জড়িত কর্মকর্তারা রেহাই পান।

page 1এমতাবস্থায় অন্যান্য কোম্পানির মতো এ কোম্পানির বেলায়ও যেন এমনটা না হয় সে ব্যাপারে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা। ড্রাগণ সোয়েটারের আইপিও ফান্ড ব্যবহারের দায়িত্ব পালন করেছে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা, সচিবসহ অন্যান্যরা।

এক্ষেত্রে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের অবহেলা থাকতে পারে। কিন্তু এই ফান্ড ব্যবহারের দায়িত্ব কোম্পানিটির সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের ছিল না। তারপরেও ব্যবস্থাপনা বা পর্ষদকে জরিমানা করা হয়নি। এক্ষেত্রে কোম্পানিকে জরিমানা করা হয়েছে। যা কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডারদের কাধে পড়বে।

এদিকে বুকস অব অ্যাকউন্টসে অনিয়মের জন্য কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও), সচিব ও অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দায়বদ্ধ। কিন্তু তাদেরকে কোন শাস্তি দেওয়া হয়নি। যাতে ভুল বা অনিয়ম করেও শাস্তির আওতায় আসতে হচ্ছে না।

কোন বে আইনি সিদ্ধান্তের কারণে যদি শাস্তি দিতে হয় তাহলে জড়িত ব্যক্তিদের দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তার মতে, যখন পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের কারণে শাস্তি দেওয়া হবে তখন পরিচালকদের শাস্তি দেওয়া দরকার।

কোম্পানির নামে শেয়ারহোল্ডারদের শাস্তি দেওয়া উচিত নয়। ফারুক আহমেদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তার মতে, এ ধরনের অন্যায় কাজের জন্য কোম্পানি নয়, বরং সব সময় পরিচালকদের শাস্তি দেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, কোম্পানিকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তা কমিশনের সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অনেকে ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবরও ব্যবস্থাপনার অনিয়মের জন্য বিএসইসি আরগন ডেনিমসকে ৩০ লাখ টাকা ও সালভো কেমিক্যালসকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। একইসঙ্গে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনে ৩ বছর এ দুই কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

ব্যবসা সম্প্রসারণ ও আংশিক লোন পরিশোধের কথা বলে শেয়ারবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করেছে আরগন ডেনিমস লিমিটেড। কোম্পানিটি প্রসপেক্টাসে (বিবরণী) উল্লিখিত শর্ত অনুযায়ী ওয়ান ব্যাংকের স্বল্প মেয়াদি ঋণের অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করে।

তবে এর বাইরে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কাছ থেকে ব্রিজ ফাইন্যান্সের (টাইম লোন) মাধ্যমে নেওয়া ঋণের অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ এবং লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের কাছ থেকে নেওয়া স্বল্প মেয়াদী ঋণের ৩ কোটি টাকা পরিশোধ করে। যা প্রসপেক্টাসে উল্লেখ ছিল না।

কোম্পানিটি ব্যাংকিং চ্যানেল ছাড়া বিভিন্ন ঠিকাদারের নির্মাণ সামগ্রী কেনা বাবদ ২৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা নগদে পরিশোধ করে এবং নির্মাণ সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের তদারকির জন্য এভরিওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং নামক প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করে। বিভিন্ন ধাপের কাজ শেষে শ্রমিক সরবরাহকারী ঠিকাদারের দাখিল করা বিল এভরিওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চেক ও ভেরিফাই শেষে আরগন ডেনিমস লিমিটেড টাকা পরিশোধ করে।

আইপিওর জন্য অনুমোদিত প্রসপেক্টাস এবং কনসেন্ট লেটারের পার্ট-বি, শর্ত-৭ যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ২সিসি এর মাধ্যমে আরোপিত হয়েছে তার লঙ্ঘন এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৮ এর লঙ্ঘন। এ সব অনিয়মের কারণে কোম্পানিকে জরিমানা করা হয়।

আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত ২৬ কোটি টাকার স্থলে ২৪ কোটি টাকা খরচ করে সালভো কেমিক্যাল। কিন্তু কমিশনে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে কোম্পানিটি ২৬ কোটি টাকা খরচ দেখায়। এ ছাড়া কোম্পানি ২ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ব্যয় না করে নগদে ব্যয় করে। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ২ সিসি ও সেকশন ১৮ লঙ্ঘন।