bazar paints lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড দেশে নির্মাণ শিল্পের সব ধরনের উপকরণ উৎপাদন ও বাজারজাত করতে বড় ধরনের বিনিয়োগে যাচ্ছে। এজন্য যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ফসরক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগে যাচ্ছে।

নতুন কোম্পানি গঠন করে তাতে বিনিয়োগের পরিমাণ, কারখানা স্থাপন, বাজারজাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিগগিরই চুক্তি স্বাক্ষর করবে উভয় প্রতিষ্ঠান। নতুন কোম্পানিতে বার্জার পেইন্টসের ৫০ শতাংশ মালিকানা থাকবে বলে জানিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্মাণ শিল্পের সব ধরনের উপকরণের ব্যবসা শুরু করতে ফসরক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে চুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চুক্তির আগেই ‘বার্জার ফসরক লিমিটেড’ নামে একটি যৌথ কোম্পানি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে বার্জার ও ফসরকের সমানসংখ্যক শেয়ার থাকবে। যৌথ বিনিয়োগের কোম্পানিটি ফসরক ব্র্যান্ডের সব ধরনের নির্মাণসামগ্রী ও কেমিক্যালস উৎপাদন এবং বাজারজাত করবে। পাশাপাশি ফসরকের প্রযুক্তিও ব্যবহার করবে নতুন কোম্পানিটি।

বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী বলেন, বার্জার বর্তমানে দেশে পেইন্টসের বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। পেইন্টস নির্মাণকাজের সর্বশেষ উপকরণ। আমাদের পরিকল্পনা নির্মাণকাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব ধরনের উপকরণ উৎপাদন ও বাজারজাত করা। এজন্য ফসরকের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা শেষে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বার্জারের পরিচালনা পর্ষদ। এটি হলে দেশে নির্মাণ শিল্পে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবে বার্জার।

জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উভয় কোম্পানি। কোম্পানি গঠনের পর জমি অধিগ্রহণ করে ঢাকার ধামরাইয়ে বার্জার ফসরক লিমিটেডের কারখানা স্থাপন করা হবে।

page 1তবে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হওয়ায় বিনিয়োগের পরিমাণ ও বার্জারের ভবিষ্যৎ মুনাফা প্রবৃদ্ধি নিয়ে এখনই কথা বলতে নারাজ কোম্পানির কর্মকর্তারা। ফসরক ইন্টারন্যাশনালের প্রোফাইল থেকে জানা যায়, ৮০ বছরের বেশি সময় ধরে নির্মাণ শিল্পের ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ২০টি দেশে কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে সরাসরি পণ্য উৎপাদন করছে।

নিজেদের নির্মাণসামগ্রী ও কেমিক্যালস রফতানি করছে ৫০টিরও বেশি দেশে। কোম্পানিটি কংক্রিট, বিøন্ডিং, সিমেন্ট, এয়ারপোর্ট, রোড, রেইল, মেরিন, পাওয়ার, অয়েল-গ্যাস ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল খাত নিয়ে কাজ করছে। এডেসিভ, এডমিক্সার, সিমেন্ট এডিটিভ, কংক্রিট রি-ফেয়ার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্লোরিং, গ্রাউন্ড অ্যাংকর, সারফেস ট্রিটমেন্টসহ নির্মাণ খাতে বিভিন্ন সেবা দেয় তারা।

৩১ মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে সমাপ্ত ২০১৭ হিসাব বছরের জন্য ১৭৫ শতাংশ অন্তর্র্বতী লভ্যাংশের পর আরো ৪২৫ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে বার্জার পেইন্টস। সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত বার্জার পেইন্টসের ইপিএস হয়েছে ১০৯ টাকা, আগের ১৫ মাসে যা ছিল ৭৭ টাকা ২৩ পয়সা। ৩১ মার্চ কোম্পানির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ২৪৯ টাকা ৫১ পয়সায়।

বার্জার পেইন্টসের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে নিট বিক্রির ক্ষেত্রে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে বার্জার পেইন্টস। ২০১২ সালে ৭৬১ কোটি টাকার নিট বিক্রি থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধানে অর্থাৎ ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ সমাপ্ত হিসাব বছরে ১ হাজার ৮৬০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।

এর আগে কোম্পানিটি বিক্রয় প্রবৃদ্ধি বজায় রেখে ২০১৩ সালে ৮৭৯ কোটি, ২০১৪ সালে ১ হাজার ৮৮ কোটি ও ২০১৫ সালে ১ হাজার ২২৬ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। বিক্রির পাশাপাশি এ সময়ে মুনাফায়ও ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধিতে ছিল কোম্পানিটি। ২০১২ সালে বার্জার পেইন্টসের কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ৭৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা, ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে যা ২৩৯ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) বার্জারের নিট মুনাফা হয়েছে ৬৯ কোটি টাকা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৮৩ কোটি টাকা। এ সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৯ টাকা ৮৩ পয়সা, যা আগের একই সময়ে ছিল ৩৬ টাকা ১০ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর এর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৩৬ টাকা ৮৪ পয়সা।

দ্বিতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বার্জার পেইন্টসের নিট মুনাফা হয়েছে ২৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩১ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ইপিএস হয়েছে ১১ টাকা ৪৩ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১৩ টাকা ৫৮ পয়সা।

২০০৬ সালে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৪০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ২৩ কোটি ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। রিজার্ভে আছে ৫৪৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৯৫ শতাংশই এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, প্রতিষ্ঠান ২ দশমিক ৫৬, বিদেশী বিনিয়োগকারী ২ দশমিক শূন্য ৬ এবং বাকি দশমিক ৩৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।