dse dorpotonআমিনুল ইসলাম ও ফাতিমা জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্য সামনে রেখে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিনিয়োগ এগিয়ে নেওয়ার উদ্দেশে মুদ্রানীতির কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে বলেও জানা যায়। মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে মুদ্রানীতি করতে যাচ্ছে। ফলে শেয়ার বাজারে লেনদেনে বড় ভূমিকা পালনকারী মার্চেন্ট ব্যাংক ও বড় মূলধনী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হাত গুটিয়ে বসে আছে।

তেমনি মুদ্রানীতিতে দ্য এডভান্সড টু ডিপোজিট রেশিও (আমানতের বিপরীতে ঋণ দেওয়ার অনুপাত) পাশাপাশি সামগ্রিক মুদ্রানীতিটিই কেমন হবে তা নিয়ে দোলাচলে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ এডিআর কমানো হলে অনেক সিকিউরিটিজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, অনেক লিজিং কোম্পানি ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ কম পাবে। এতে করে বাজারে তারল্য সংকট থাকবে বলে এক ধরনের পেনিক সৃষ্টি করা হচ্ছে।

যদিও নিয়ন্ত্রক সংশ্লিষ্ট অনেকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে মুদ্রানীতিতে এমন কিছু থাকবে না যাতে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তারপরও আস্থা রাখতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। কারণ বিগত অনেক মুদ্রানীতি ঘোষণার আগেও বাজারে পতন নেমে এসেছিল। এবারও তেমন কিছু হবে কি না সেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সেই শঙ্কা রয়েছে। যে কারণে লেনদেন না করে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। আর এর জের ধরে সূচকে টানা পতনের পাশাপাশি লেনদেনও ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে।

এদিকে মুদ্রানীতি ঘোষনার আগে ক্রমেই পতনের দিকে চলে যাচ্ছে পুঁজিবাজার। বাজার চিত্রে এমন অবস্থাই চলতি অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি হচ্ছে বিনিয়োগবান্ধব বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হারে লাগাম টানা, টাকার সর্বোত্তম ব্যবহার, কর্মসংস্থান বাড়ানোর দিকেও বিশেষ নজর দেয়া হবে।

এর সপক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দেয়া হবে। তবে গতানুগতিক ধারায় এবারও মুদ্রানীতিকে সংকোচনশীল বা সম্প্রসারণমুখী কোনোটিই বলা হবে না। চাহিদা অনুযায়ী টাকার প্রবাহ বাড়ানোর কথা বলা হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে এক একটি ইস্যুকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে। কারণ বিগত দিনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যে কারণে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট যে কোনো কিছু হলেই তারা আতঙ্কিত থাকেন। প্রত্যক্ষভাবে পুঁজিবাজারের সঙ্গে মুদ্রানীতি জড়িত না থাকলেও পরোক্ষভাবে কিছুটা আছে।

পুঁজিবাজার হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগের একটি জায়গা। আর মুদ্রানীতির কাজ স্বল্প মেয়াদি যে কর্মকান্ড গুলো আছে সেখানে। তবে পরোক্ষভাবে কিছুটা জড়িত। যেমন মুদ্রানীতিতে যদি সুদের হার কমানো বা বাড়ানো হবে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয় সেক্ষেত্রে পুঁজিবাজার পরোক্ষভাবে সুবিধা পাবে। আমানতের সুদের হার কমানো হয়, সেক্ষেত্রে মানুষ ব্যাংকে টাকা না রেখে পুঁজিবাজারে আসার চেষ্টা করবে।

অন্যথায় আমানতের সুদের হার বাড়ানো হলে মানুষ ব্যাংকের দিকে আগ্রহী বেশি হবে। কাজেই সরাসরি মুদ্রানীতি পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই। তারপরও বিনিয়োগকারীরা ১৯৯৬, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারের বড় দুর্ঘটনার কারণে সব সময় ভীত থাকে। ফলে বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে রেখে মানুষ বাজারে বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকতে চায়।

এ বিষয়ে ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, প্রতিবছর মুদ্রানীতির সময় এলেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করে। তারা ভাবেন মুদ্রানীতি বিনিয়োগবান্ধব হবে না। এবারও তারা এমনটিই ভাবছেন। সে কারণে লেনদেন কমে গেছে। তবে আমি মনে করি মুদ্রানীতি বিনিয়োগবান্ধব হবে। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভয়ের কিছু নেই।

page 1 (6)বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এক গভর্নর বলেন, যে মুদ্রানীতি আসছে তা বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জই হবে। বর্তমানে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় নেতিবাচক ধারায় থাকায় চ্যালেঞ্জটা বেশিই হবে বলে মনে করেন তিনি। মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ। এছাড়া যে হারে কর্মসংস্থান হওয়ার কথা ছিল সে হারে হচ্ছে না। তাই কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী প্রভাষক কাজী হোসাইন আলী বলেন, মুদ্রানীতিতে যদি নেতিবাচক কিছু থাকে তবে তা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো হবে না। কারণ মুদ্রানীতির সঙ্গে ক্যাপিটাল মার্কেটের গভীর সংযোগ আছে এবং দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক আছে। মুদ্রানীতির মাধ্যমে সাধারণত সুদের হারকে প্রভাবিত করা হয়।

২০১৩-১৪ সাল পর্যন্ত উচ্চ সুদের হার ছিল। এখন তা ব্যাপকভাবে হাস পেয়েছে। আমরা আশা করবো আসন্ন মুদ্রানীতি এর আগের ছয় মাসে সুদের হার ও মূল্যস্ফীতি যে প্রাক্কলন করেছিল সে ধারা অব্যাহত থাকবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘গত দুই কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে যে পতন হয়েছে, তা স্বাভাবিক কারেকশন (মূল্য সংশোধন) নয়। এত বড় পতনের কারণ কী হতে পারে, তা আমার জানা নেই তবে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো বলতে পারে। মুদ্রানীতির নেতিবাচক প্রভাবও বাজারে পড়তে পারে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এব সিকিউরিটিজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অতীতের সকল ঘোষণা পুঁজিবাজারকে নেতিবাচক ধারায় নিয়ে গেছে। ফলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নতুন করে শেয়ারে বিনিয়োগ করছে না। এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিষ্ক্রিয় থাকায় স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন তিনশত কোটি টাকার মধ্যে থাকছে।

মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তা জানান, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানতে গিয়ে অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। বিনিয়োগসীমা অতিক্রম করা ব্যাংকগুলো সমন্বয় করতে প্রতিমাসেই শেয়ার বিক্রি করছে। ফলে বাজারের মূল্য সূচক কমছে। এছাড়াও কোনো ব্যাংক যাতে পুজিঁবাজারে সীমার চেয়ে বেশি বিনিয়োগ না করতে পারে সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ সেল করে কঠোর নজরদারি করছে। প্রতিদিন ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে হিসাব নিচ্ছে এই সেল।