joy

ড. আবুল হাসনাত্ মিল্টন: হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের মতো একসময়ের স্বল্পোন্নত দেশের প্রেক্ষিতে সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে। জয় মাঝেমধ্যেই জরিপের মাধ্যমে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মন্তব্য করেন। একবার এরকমই জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে বলেছিলেন, ‘আমার কাছে তথ্য আছে।’ জয়ের এসব কথা শুনে অনেকেই হাসাহাসি করেন, কটাক্ষ করেন। দূর থেকে এসব দেখে আমি বিস্মিত হই।

গত ১১ ডিসেম্বর, সোমবার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক বৈঠকে সজীব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। তার এই আশাবাদের ভিত্তি হলো বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে দেশব্যাপী পরিচালিত জরিপ। জয়ের এই বক্তব্যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-অনুসারীরা উজ্জীবিত হলেও অনেকেই আবার খোঁচাখুঁচি করেছেন।

অথচ সজীব ওয়াজেদ জয় যেটা করছেন, যার ভিত্তিতে বিভিন্ন আশাবাদ ব্যক্ত করছেন, সেটাই তো হওয়া উচিত। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতেই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পক্ষে বিপক্ষে জনসমর্থন পরিমাপের চেষ্টা করে। রাজপথে দাঁড়িয়ে বাস্তবতাবিহীন স্রেফ চাপাবাজির দিন অনেক আগেই শেষ, আধুনিক যুগে এই সত্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যত দ্রুত অনুধাবন করতে পারবে ততই মঙ্গল।

সজীব ওয়াজেদ জয় তা পেরেছেন, পারছেন। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী, প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার এই স্বপ্ন, কর্মকৌশলকে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেছে। আজ থেকে ৯ বছর আগে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ চালু হলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ অনেকেই এটা নিয়ে উপহাস করতেন। অথচ আজ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া।

অনলাইনে ঘরে বসে বিল প্রদান থেকে শুরু করে বড় বড় টেন্ডার কিংবা সরকারি অনেক কর্মকাণ্ড এখন ডিজিটাল করা হয়েছে। সম্প্রতি ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে, যা বর্তমান সরকারের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ডিজিটালাইজেশনের সুযোগ গ্রহণ করে আমাদের তরুণ প্রজন্ম দেশ-বিদেশে বিভিন্ন রকমের আউটসোর্সিংয়ের কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এককথায় বলা চলে, দেশে এখন ডিজিটালাইজেশনের বিপ্লব চলছে। আর এই মহাযজ্ঞের মূল কৃতিত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের।

তৃতীয় বিশ্বে ক্ষমতাসীন পরিবারের দুর্নীতি অনেকটা মামুলি বিষয়। পত্রিকার পাতা খুললেই বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবারের কিংবা পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের পরিবারের দুর্নীতির খবর চোখে পড়ে। মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা এরা আত্মসাত্ করে সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নামে-বেনামে বিনিয়োগ করেছে।

দেশ গড়ার চেয়ে দেশটাকে লুটেপুটে খাবার ব্যাপারেই যেন খালেদা জিয়া-নওয়াজ শরীফদের বেশি আগ্রহ ছিল। দেশের বিদ্যুত্ উত্পাদনকে শূন্যের কোঠায় রেখে তারেক রহমান-গিয়াসউদ্দিন মামুন গংদের ‘খাম্বা’ দুর্নীতির কথা আজ সর্বজনবিদিত। অথচ ক্ষমতার কেন্দ্রের খুব কাছাকাছি অবস্থান করেও সজীব ওয়াজেদ জয় দুর্নীতি থেকে অনেক দূরে, একনিষ্ঠভাবে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

জয় তার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করছেন। জামায়াত-বিএনপি যদিও সজীব ওয়াজেদ জয়ের শরীরে দুর্নীতের কলঙ্ক লেপনের জন্য দেশ-বিদেশে কম অপচেষ্টা করেনি। এমনকি বিএনপির এক নেতার সন্তান আমেরিকায় এফবিআই এজেন্টকে ঘুষ প্রদান করে জয়ের বিরুদ্ধে নানা তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করেছে। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে নিজের দোষ স্বীকার করে ওই ব্যক্তি আমেরিকার আদালতে স্বীকারোক্তিও প্রদান করেছে।

সজীব ওয়াজেদ জয় একটি মহান রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরাধিকার বহন করেন। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি ও বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র। এর জন্য তিনি গর্বিত, তার ভিতরে একধরনের অহংকার কাজ করে। চলনে-বলনে, কথাবার্তায় তিনি সবসময় এই উজ্জ্বল উত্তরাধিকারের কথা স্মরণে রাখেন। আর এমন রাজনৈতিক উত্তরাধিকার যার ধমনীতে বহমান, দুর্নীতি তার সঙ্গে যায় না।

পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করে তিনি নিজেকে আধুনিক বিশ্বের এক তরুণ উদ্ভাবনী নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশকে তার দূরদর্শিতা আর মেধার সমন্বয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন। দেশে ডিজিটালাইজেশনের যত অগ্রগতি হবে, সুশাসনের পথেও ততটা এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। জিয়া-এরশাদের দু-দুটো সামরিক শাসন ও পরবর্তীতে জামায়াত-বিএনপির সরকার দেশ পরিচালনার ফলে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও সুশাসনের ভিত্তিমূলে যে ধস নেমেছে, তা থেকে উত্তরণ খুব সহজ নয়।

সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, মানসিকতায় দুর্নীতির বসবাস। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ডিজিটালাইজেশনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়নও জরুরি।

গতানুগতিক অর্থে না হলেও সজীব ওয়াজেদ জয় বৃহত্তর পরিসরে রাজনীতিরই মানুষ। তাই তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই। তবে জয় যখন রাজনীতিতে আধুনিকতার সন্নিবেশ ঘটান, তখন তাকে নিয়ে সমালোচনার মানটাও উন্নত হওয়া উচিত। সজীব ওয়াজেদ জয় যখন বিভিন্ন জরিপের কথা বলেন, তখন ‘আমার কাছে তথ্য আছে’ বলে টিটকারি না মেরে বরং জরিপের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে।

তাকে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে জরিপে অংশগ্রহণকৃত মানুষের সংখ্যা কত? তাদের কোন পদ্ধতিতে জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে? জরিপে কী কী প্রশ্ন করা হয়েছিল এবং কীভাবে করা হয়েছিল? আশ্চর্যের বিষয়, জরিপের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ও মান নিয়ে আলোচনা করতে তেমন কাউকে দেখি না।

যুগের চাহিদা মেনে সজীব ওয়াজেদ জয় যখন তার সময়ের চেয়ে এগিয়ে, তখন তার সমালোচক কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আজো পড়ে আছে পিছনেই। লেখক :কবি ও চিকিত্সক, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনারত