dse-dorpotonআলমগীর হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার উন্নয়নে সব মহলের আন্তরিকতা প্রয়োজন। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর সমন্বয় প্রয়োজন। রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর সমন্বয় না থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঘোষনার পর থেকে বাজারে দরপতন শুরু হয়। তেমনি পুঁজিবাজার টালমাতাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এডি রেশিও কমিয়ে আনার বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণায় পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে লেনদেন ৩ শত কোটি টাকার ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে।

প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য এই সীমা ৮৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য ৯০ থেকে ৮৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে বলে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছেন। এর পরের দিন থেকে বাজারে টানা পতন শুরু হয়েছে।

এডি রেশিও ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ তুলে নেওয়ায় পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে টাকা তুলে নিয়েছে, যার ফলে তারল্য সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে।

আর বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ এ ধরনের সিদ্ধান্তে রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর সমন্বয় ছিল না। যদি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকে তাহলে পুঁজিবাজার উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদও তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা আছে, পুঁজিবাজার সম্পৃক্ত কোনো নির্দেশনা দিতে হলে বিএসইসির সঙ্গে আলাপ করে দেওয়ার কথা। কিন্তু, বাংলাদেশ ব্যাংক, আইডিআরএ ও এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নেন। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হন। অনেক সময় বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে না এ বাজারে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ আর্থিক খাতের সবগুলো সূচক প্রতিবেশি দেশের তুলনায় ভালো। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাড়াতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। আর বিনিয়োগ আসার প্রধান মাধ্যম হলো পুঁজিবাজার। আমাদের দেশের সিকিউরিটিজ আইন বেশ শক্তিশালী। তাই এখানে কোম্পনীর তালিকাভুক্ত হওয়া এবং নতুন বিনিয়োগকারী আসার উপযুক্ত সময়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, পুঁজিবাজার স্থীতিশীল রাখার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ে ব্রোক্রার ও স্টেকহোল্ডারদের ভুমিকা বেশি। বাজার উঠা-নামা করবে এটা স্বাভাবিক নিয়ম। এক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ে স্টেকহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীদের ভুমিকাই মুখ্য।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন এক নেতা বলেন, পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। উভয়পক্ষ মনে করে, দেশের বাজারে নেতিবাচক কোনো বিষয় নেই। ফলে বিনিয়োগের বিকল্প খুঁজছে সবাই। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আরও বাড়তে পারে। নির্বাচনী বছরে পুঁজিবাজারে সুবাতাস আসতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, আইসিবির নেতৃত্বে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা খুব শিগগির বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে বসবে। সেখানে বাজারের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে বাজারকে আরও গতিশীল করতে কীভাবে উদ্যোগ নেওয়া যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও নমনীয় এবং পুঁজিবাজারবান্ধব হতে হবে। কারন বর্তমান বাজার খারাপ হওয়ার মতো কোন পরিস্থিতি নেই। বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকলে পুঁজিবাজারের দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব। এক্ষেত্রে আমি বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও নমনীয় এবং পুঁজিবাজারবান্ধব হতে পরামর্শ দেব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক এক সিকিউরিটিজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু ব্যাংকিং খাত নয়, পুরো আর্থিক খাতের অভিভাবক। মুদ্রাবাজারের মতো পুঁজিবাজারও আর্থিক খাতের অংশ। তাই মুদ্রাবাজার ও পুঁজিবাজার নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। একটির ভালো-মন্দের প্রভাব অন্যটির উপরে পড়তে বাধ্য।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোশতাক আহমেদ সাদেক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক হলো মানি মার্কেটের রেগুলেটর। পুঁজিবাজারে মানি মার্কেটর অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। কিছু হলেই তারা একটি সার্কুলার দিয়ে দেয়। যার নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারেও পড়ে। কোন প্রকার আলোচনা ছাড়া সার্কুলার যাতে বাংলাদেশ ব্যাংক না দেয়, সেই অনুরোধ আমরা করছি।পাশাপাশি পুঁজিবাজার উন্নয়নে রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। আশা করি খুব দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোর কিছু ফান্ড থাকে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর কাছে। ওই ফান্ডগুলো তারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সালে এসব ফান্ডের অংশবিশেষ তুলে নেওয়ার বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে। কিন্তু এতো দিন এই সার্কুলার বাস্তবায়নে তারা কিছু বলেনি।

এখন হঠাৎ বিষয়টি নিয়ে তারা নড়েচড়ে বসেছে। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আইসিবিকে নিয়মিত শেয়ার বিক্রি করতে হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়ছে। এরই মধ্যে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার শেয়ার আইসিবি বিক্রি করেছে। তবে সামনের দিকে আর বিক্রি হবে না বলেও জানান তিনি।