otc-marketআমিনুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সুবিধাভোগী ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ। শেয়ারবাজারে দুর্বল কোম্পানি ওটিসি মার্কেটে লেনদেন করে। অনিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেয়ায় এসব কোম্পানিকে ওটিসিতে পাঠানো হয়েছিল।

আর সাম্প্রতিক সময়ে কারসাজির নতুন হাতিয়ার হল ওটিসি মার্কেট দুর্বল কোম্পানিকে থেকে মূল মার্কেট নিয়ে আসার প্রক্রিয়া। ২০১৪ সালে ওটিসি থেকে মূল বাজারে আসা ওয়াটা কেমিক্যালস লিমিটেডের পর এবার মূল বাজারে এল আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে ওয়াটা কেমিক্যাল দিয়ে অপারেশন চালানো হয়েছে। ইতিমধ্যে বিষয়টিতে তারা সফলও হয়েছে।

এরপর আট বছর পর ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেট (ওটিসি) থেকে মূল বাজারে ফিরে চমক দেখিয়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১৩০ টাকায় শুরু হয়ে ১৪৩ টাকায় লেনদেন হয় কোম্পানিটির শেয়ার।

এদিকে লেনদেন শুরুর পর চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করেছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এর শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬৫ পয়সা; আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৫৬ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর এর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য দাঁড়ায় ২৪ টাকা ৭৮ পয়সায়।

সর্বশেষ ২০১৪ সালে ওটিসি থেকে মূল বাজারে আসা ওয়াটা কেমিক্যালস লিমিটেডের পর এবার মূল বাজারে আসছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। অবশ্য নাম পরিবর্তনের আগে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ সজিব নিটওয়্যার নামে পরিচিত ছিল। ২০০৯ সালে সজিব নিটওয়্যার মূল বাজার থেকে ওটিসিতে চলে যায়। ওটিসিতে যাওয়ার এক বছর পরেই ২০১০ সালে আলিফ গ্রæপ সজিব নিটওয়্যারের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছ থেকে শেয়ার কিনে কোম্পানিটির মালিকানায় আসে।

এরই ধারাবাহিকতায় সজিব নিটওয়্যার আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজে পরিণত হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ওটিসি থেকে মূল বাজারে আসা ওয়াটা কেমিক্যালস লিমিটেডের পর এবার মূল বাজারে আসছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। অবশ্য নাম পরিবর্তনের আগে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ সজিব নিটওয়্যার নামে পরিচিত ছিল। ২০০৯ সালে সজিব নিটওয়্যার মূল বাজার থেকে ওটিসিতে চলে যায়। ওটিসিতে যাওয়ার এক বছর পরেই ২০১০ সালে আলিফ গ্রæপ সজিব নিটওয়্যারের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছ থেকে শেয়ার কিনে কোম্পানিটির মালিকানায় আসে। এরই ধারাবাহিকতায় সজিব নিটওয়্যার আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজে পরিণত হয়।

দীর্ঘদিন লোকসানে থাকা, নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা ও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারাসহ নানা অনিয়মের কারণে ‘জেড’ ক্যাটাগরির ৫১টি কোম্পানিকে নিয়ে ২০০৯ সালে ১ অক্টোবর ওটিসি মার্কেট চালু করে ডিএসই। পরে ১০ অক্টোবর আরো ২৯টি কোম্পানিকে ওটিসিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে আর্থিক অবস্থা পরিবর্তন ও সিকিউরিটিজ আইন পরিপালনের প্রতিবেদন জমা দেয়ায় ২০১১ সালের জুনে ১০টি ও পরবর্তীতে আরো দুটি কোম্পানিকে মূল বাজারে ফিরিয়ে আনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সূত্র জানায়, ওটিসি মার্কেটে বেশিরভাগ কোম্পানিই শুধু নামে আছে। নিজেদের মধ্যে শেয়ার লেনদেনের মধ্যদিয়ে বাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে নতুন বিনিয়োগে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নামসর্বস্ব ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) মার্কেটের দুর্বল কোম্পানিতে হঠাৎ করে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। বিদায়ী বছরে এ খাতে ৭২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে যা ১৭ গুণ বেশি। আবার কিছু কোম্পানির মূল মার্কেটে আসার তৎপরতা শুরু হয়েছে।
২০১৪ সালে ওয়াটা কেমিক্যাল মূল মার্কেটে এসেছে। ওই সময়ে প্রথম দিনেই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ৭১০ শতাংশ বেড়েছিল।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে আবারও কারসাজি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। এদিকে টানা ১০ বছর পর্যন্ত ওসিটি মার্কেটের ২৫ কোম্পানির কোনো লেনদেন হয় না। আর ১১ কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে ওটিসি মার্কেটে ৩৩ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজারমূল্য ছিল ৪ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৭ সালে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এসময়ে বাজারে মোট ১০ কোটি ৮ লাখ ৮৫ হাজার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ছিল ৭২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে বিদায়ী বছরে ওটিসি মার্কেটে লেনদেন ১৭ গুণ বেড়েছে।

page 1 (9)যেসব কোম্পানির কোনো লেনদেন হয় না : ২০০৯ সাল থেকে বাজারে ২৫ কোম্পানির কোনো লেনদেন হয় না। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে আমাম সি ফুড, আজাদী প্রিন্টার্স, বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজ, বিডি হোটেল, বিডি প্লান্টস, বিএলটিসি, ডাইনামিক টেক্সটাইল, ঈগল স্টার, জামার্ন বাংলা ফুড, হিল প্লান্টস, ম্যাক এন্টারপ্রাইজ, মেটালেক্স কর্পোরেশন, মডার্ন ডাইং, পেট্রো সিনথেটিক, ফিনিক্স লেদার, থেরাপিটিকস বাংলাদেশ, টিউলিপ ডেইরি ফুড। কোম্পানিগুলোতে দীর্ঘদিন থেকে বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকা আটকে রয়েছে। আর টাকা ফেরত দেয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।

অস্তিত্বহীন কোম্পানি : ১১ কোম্পানি তালিকাভুক্ত থাকলেও সেসব কোম্পানির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে রয়েছে বেমকো, চিক চেক্সটাইল, এম হোসাইন গার্মেন্ট, ফার্মাকো ইন্ডাস্ট্রিজ, রাসপিট ইনকো, রাসপিট ডাটা ম্যানেজমেন্ট এবং সালেহ কার্পেট।

এ বিষয় তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, পুঁজিবাজারে কারসাজি চক্র সবসময় সক্রিয় থাকে। যারা কারসাজি করে তারাই সবসময় ছোট মূলধনের কোম্পানিকে বেছে নেয়। এ ব্যাপারে বিএসইসিকে সজাগ থাকতে হবে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এদের আইন লঙ্ঘনকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তারমতে, পুঁজি নয়, বাজারে বর্তমানে আস্থার সংকট বেশি। এ সংকট কাটাতে পারলে শেয়ারবাজার শিল্পায়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বেশকিছু কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের টাকা দীর্ঘদিন থেকে আটকে রেখেছে। এসব কোম্পানিতে প্রশাসক বসিয়ে পুনর্গঠন করা উচিত। প্রয়োজনে কোম্পানি ভেঙে শেয়ারহোল্ডারদের টাকা ফেরত দিতে হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ড. বাকী খলীলী বলেন, বিষয়টি উদ্বেগের। কারণ এ ধরনের দুর্বল কোম্পানি আবারও বাজারে এলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারমতে, কোনো মতেই এসব কোম্পানিকে বাজারে আসতে দেয়া উচিত নয়।