iu-vcমহিম সরকার, ইবি, দেশ প্রতিক্ষণ: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারীর ওপর হামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাত পৌনে চারটার দিকে ঝিনাইদহের গড়াগঞ্জ উপজেলার বড়দাহ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে কে বা কারা হামলা করেছে তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পরে পুলিশের সহায়তায় তিনি ক্যাম্পাসে আসেন। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে বাঁচলেও তার মানিব্যাগ ও মোবাইল হারিয়ে গেছে বলে জানা যায়। বর্তমানে তিনি ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন।

ভিসির ভাষ্য মতে, ঢাকায় প্রগ্রাম শেষে রাত সোয়া ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। আমি সাধারণত পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ ফেরি ঘাট দিয়ে পার হয়ে রাজবাড়ি-কুষ্টিয়া রুটে ক্যাম্পাসে আসি।

তবে আমার সাথে ব্যক্তিগত সহকারী রেজাউল করিম থাকায় তাকে বাসায় নামিয়ে দেয়ার জন্য এবং অপ্রতিকর ঘটনা এ রাতে নিজের যাতায়াতের সাধারণ রুট পরিবর্তন নতুন রুট ঝিনাইদহ দিয়ে প্রবেশ ক্যাম্পাসে আসার সিদ্ধান্ত নেই। রেজাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমরা ক্যাম্পাসের দিকে আসতে থাকি।

গাড়াগঞ্জ পার হওয়ার পর হঠাৎ আমার গাড়ি সামনে একটি গাছের গুড়ি দেখতে পেয়ে গাড়ি থামিয়ে দেন চালক। বিপদ বুঝতে পরে ভাইপি হর্ণ (পুলিশের হর্ণ) দেয় এবং গাড়ি ঘুরিয়ে পিছন দিকে যাওয়ার চেষ্ট করে চালক। কিন্তু রাস্তায় টাক থাকায় গাড়ি ঘোরাতে ব্যর্থ হয়। ঠিক সেই মুহুর্তে গাড়ির বাম পাশের গ্লাসে আঘাত করতে থাকে কে বা কারা।

গাড়িতে হামলা হয়েছে বুঝতে পেরে চালক ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি টান দিয়ে গাছের গুড়ির একদম নিকটে নিয় যায় গাড়ি। গাছ টপকিয়ে আসতে চায়। কিন্তু গাছটি মোটা হওয়াতে তা সম্ভব হয় না। এতক্ষণে হামলাকরীরা বেশ খানিকটা পিছনে পরেগেছে। আমি ঠিক কি করব তা বুঝতে পারছিলাম না। এই ফাঁকে আমার চালক বলেন ‘স্যার আপনি গাড়ি থেকে বের হয়ে পালান।’

চালকের কথা শুনে আমার সম্বিত ফিরে আসে। আমি প্রাণ বাঁচাতে পাশের জঙ্গলে আশ্রয় নেই। কিন্তু হামলাকারীরা আমাকে খুঁজে পেয়ে যায়। তারা আমার দিকে শক্তিশালী টর্চলাইট ধরে এগুতে থাকে। এ সময় আমি তাদের হাতে রামদা দেখতে পাই। তখন আমি মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম। রামদা দেখে আমি শেষ বারের মতো আল্লাহর নাম নিলাম। তারা আমার কাছে এসে টাকা দাবি করে।

তখন আমি দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করে আশ্বস্থ হই। এরপর আমি তাদরে জানাই আমার গাড়িতে টাকা আছে। তারা আমাকে অস্ত্রের মুখে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে। কিন্তু তখন আমি গাড়ির ভেতর মানি ব্যাগ পাই না। আমার মনে হয় তারা আগেই আমার মানি ব্যাগ নিয়েছে। ‘মানি ব্যাগ পাচ্ছি না’ একথা শুনে তারা গালমন্দ করতে থাকে। প্রাণ বাঁচাতে ল্যাপ্টপ দিতে চাইলাম। কিন্তু তারা ল্যাপ্টপ নিল না। এতক্ষণে আমার গাড়ি পেছনে বেশ কিছু ট্রাক এসে জমেছে। অনেক গাড়ি হর্ণ বাজাচ্ছে।

হামলাকারীরা আমাকে গাড়ি পাশে রেখে বলে ‘এক পা নড়াচড়া করবি না’। এরপর তারা আমার গাড়ির পেছনে দিকে চলে যায়। আমি গাড়ি মধ্যে আবার উঠে বসি। আবার হামলা হতে পারে এই ভয়ে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ি সামনের দিকে দৌঁড় দেই। মিনিট খানেক দৌঁড়ানোর পর একটি বাড়ি দেখতে পাই। বাড়ি প্রবেশ করে ডাকা ডাকি করলে আমাকে তারা সাহায্য করে। পরে তারা কয়েক বাড়ি পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তার বাড়িতে নিয়ে যায়।

আমি ওই কর্মকর্তার বাড়িতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে খবর দিতে বলি। তারা প্রক্টরকে খরব দেয়। এই পুরো ঘটনাটি ঘটেছে প্রায় আধাঘণ্টার ধরে। ঘটনা শুরুর প্রায় ঘণ্টা খানেক পর ইবি থানা থেকে পুলিশ গিয়ে আমাকে নিয়ে আসে। ভোর চারটা ৫৪ মিনিটে আমি ক্যাম্পাসে পৌঁছি।’

সকালে ভিসির ব্যক্তিগত সহকারী জানান, ‘ভিসি স্যার বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় অংশ নিতে ঢাকায় গিয়েছিলন। ফেরার পথে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভিসি স্যার এখন ক্যাম্পাসে তার বাংলোতে অবস্থান করছেন।’

মাহমুদুল হাসান বাঁধন নামে এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘রাত তিনটা ৪৫ মিনিটের দিকে আমার এক ভাই এসে গেট নাড়া দিয়ে আমার আব্বুকে ডাকতে ডাকতে বলে যে, আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বিপদে পড়েছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠে দেখি ভিসি স্যার দাঁড়িয়ে আছেন।

স্যারকে ভিতরে নিয়ে আসার পর ওনার মুখে জানতে পারলাম, ঢাকা থেকে ফেরার পথে গাড়াগঞ্জ এলাকার বড়দাহ থেকে একদল ডাকাত রাস্থায় গাছ ফেলে স্যারের গাড়ি থামিয়ে হামলা করে। আল্লাহর অশেষ রহমতে স্যার পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। তারপর প্রক্টর স্যারকে জানানো হয়। থানার পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে স্যার কে নিয়ে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।’ মাহমুদুল হাসান তার এই পোস্ট টি ক্যাম্পাসের বেশ কয়েকজন শিক্ষক এবং সাংবাদিককে ট্যাগ করেছেন।

প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘আমি রাত তিনটা ৪৬ মিনিটে ভিসির গাড়ি চালক ফরহাদের মোবাইল থেকে একটি কল পাই। রিসিভ করে হামলার ঘটনা জানতে পারি। সাথে সাথে আমি ইবি থানা এবং শৈলকুপা থানায় যোগাযোগ করি। তবে ভিসি স্যারে ফোন বন্ধ থাকায় উনার অবস্থান জানতে পারি না।

কিছু সময় পর অপরিচিত একটি কল আসে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে জানায় ভিসি স্যার তার বাড়িতে নিরাপদে আছে। পরে ইবি থানার পুলিশ ভিসি স্যারকে নিরাপদে ক্যাম্পাসে নিয়ে আনে।