sharebazar lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন চমক আসছে। বর্তমান বাজার স্থিতিশীলতার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডি রেশিও) কমানো সংক্রান্ত সার্কুলারের কার্যকারিতা কিছু সময়ের জন্য স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)।

তাছাড়া পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা, এক্সপোজার রিপোর্টিং পদ্ধতি এবং আইসিবির ভূমিকা সংক্রান্ত বেশকিছু প্রস্তাব রেখেছে সংগঠনটি।  ডিবিএর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে এসব প্রস্তাব সংবলিত চিঠি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, অর্থমন্ত্রীর কাছে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা রিভিউয়ের প্রস্তাব করেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।

বাংলাদেশ ব্যাংক সুত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা রাখার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক নমনীয় হবে। তেমনি ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডি রেশিও) কমানো বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এ প্রস্তাব অর্থমন্ত্রনালয় বিবেচনা করলে বাজারের গতি ফিরে যাবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। ফলে বিনিয়োগকারীদের মাঝেও বাজার নিয়ে নতুন করে আশা জাগবে। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিবিএ প্রস্তাব বিবেচনা করবে। কারন বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজার বিষয় আন্তরিক সুতারাং বাজার তার নিজস্ব লক্ষ্যে পৌঁছবে। এখন সময়ের অপেক্ষা।

অন্যদিকে পুঁজিবাজারসহ আর্থিক খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে শিগগিরই সমন্বয় সভার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সভার কার্যপত্র ‘অগ্রাধিকার’ ট্যাগ লাগিয়ে ইতোমধ্যে গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশে ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, আর্থিক খাতের রেগুলেটরদের নিয়ে নিয়মিত সমন্বয় সভা হলেও এবারের বৈঠকের মূল ইস্যু হচ্ছে পুঁজিবাজার।

বৈঠকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেসি) এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক উদ্বেগ এবং অগ্রিম-আমানত হারে লাগাম টানার প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজারে গত কয়েক দিন ব্যাপক পতন দেখা দিয়েছে। ফলে এটিই থাকবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিশেষ করে পুঁজিবাজার যাতে স্থিতিশীল থাকে, সে ব্যাপারে করণীয় খুঁজে বের করা হবে।

এছাড়া নির্বাচনের বছরে আর্থিক খাতে যাতে কোনো বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়, সেটিও অগ্রাধিকার পাবে এবারের বৈঠকে। সমন্বয় সভায় আর্থিক খাতের জালিয়াতি ও অনিয়ম রোধ করার বিষয়টি আলোচ্য সূচিতে রাখা হতে পারে।

বিদায়ী বছরের শেষদিকে থেকে পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি নাজুক অবস্থার দিকে ধাবিত হয়। নতুন বছরেও যার রেশ কাটেনি। বরং নতুন বছরে বাজার পরিস্থিতি আরও বেশি নাজুক অবস্থার দিকে চলে গেছে। একদিকে সূচকের পতন ও অন্যদিকে শেয়ারের দর হ্রাস পাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

নতুন বছরে ডিএসইর প্রধান সূচকের পতন হয়েছে ৩৭৪ পয়েন্ট। গত বছরের শেষ দিনে ডিএসইর সূচক ছিল ছয় হাজার ২৪৪ পয়েন্ট। গত সোমবার যা স্থির হয়েছে পাঁচ হাজার ৮৬৯ পয়েন্টে। যা ছিল গত ছয় মাসের মধ্যে (১১৩ কার্যদিবস) সর্বনিম্ন।

যদিও বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভের মুখে সূচকের উন্নতির পাশাপাশি বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানই চাচ্ছে বাজার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল থাকুক।

অব্যাহত পতনে থাকা বাজার পরিস্থিতি দেখে নড়েচড়ে বসেছে সব প্রতিষ্ঠান। এর আলোকে বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে কয়েকটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। বাজার কীভাবে ভালো করা যায়-তা নিয়ে বৈঠক করেছেন মার্চেন্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজের মালিকরা। সূত্র জানিয়েছে মূলত পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি কীভাবে ভালো করা যায়, সে কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংক এই সভা ডেকেছে।

এদিকে বর্তমান পরিস্থিতে যেকোনো মূল্যে বাজার স্থিতিশীল রাখতে হবে বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ বাজারসংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, পুঁজিবাজারের পতন ঠেকানোর জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি)। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ডিএসই, সিএসই, আইসিবিসহ সব প্রতিষ্ঠানকেই নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তা না হলে বাজার পরিস্থিতি ভালো হবে না।