bsec-dse lagoআলমগীর হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিএসইসির বিভিন্ন সিদ্ধান্তে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায়কে ঘিরে বৃহস্পতিবার সব পর্যায়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে।

আতঙ্কের কারণে আজ রাজধানীতে অঘোষিত হরতাল দেখা যায়। কিন্তু সবখানে আতঙ্ক বিরাজ করলেও পুঁজিবাজারে এর ছিটেফোঁটাও ছিল না। লেনদেনে ছিল না কোনো নেতিবাচক প্রভাব। বরং পতনের ধারা কাটিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ছিল উভয় পুঁজিবাজার। এর কারণ ছিলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চাপে বাই মুডে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অবস্থানে ছিলেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছুদিন আগেও ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীদের সরব উপস্থিতি ছিল। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার মামলায় রায়কে ঘিরে সৃষ্ট জটিলতার কারণে পুরাতন বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি নতুনদেরও বাজারের প্রতি আগ্রহে কিছুটা ভাটা পড়েছে। ফলে আজ ব্রোকারেজ হাউজগুলোয় বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা অনেকটা কম ছিল। যারাও বা এসেছিল তাদের সবার চোঁখ ছিল টেলিভিশনের পর্দায়।

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোথায় যায় এনিয়ে বিনিয়োগকারীরা অনেকটা উদ্বিগ্ন ছিল। কারণ আমাদের দেশের বেশীরভাগ বিনিয়োগকারীরই রুটি-রুজির খোরাক জোগায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ। আর রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল থাকলেই সুস্থ থাকে বাজার। তাই বাজারে সুষ্ঠু পরিবেশ বাজায় রাখার জন্য আজ সরকারের পক্ষ থেকে ক্রয় চাপ বাড়ানো হয়েছে।

তাই ইতিবাচক ছিল বাজার। তবে রায়কে ঘিয়ে এখনো কোন অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি। কাজেই সরকারে কঠোর অবস্থানে পরবর্তীতে বাজারে কোন অঘটন ঘটবে না বলেও প্রত্যাশা করছেন ওই বিশ্লেষকরা।

একাধিক ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বৃধবার ও বৃহস্পতিবার বিএসইসি শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে শেয়ার বিক্রি না করার জন্য এবং বাই মুডে থাকার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানায়। এ দুদিন বিএসইসি বড় বড় ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কেনা-বেচা কড়া নজরদারিতে রাখে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপের কারণে তারা একদিকে শেয়ার বিক্রি থেকে বিরত থাকে এবং অন্যদিকে, বাই মুডের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

জানা যায়, অর্থমন্ত্রনালয়ের নানামুখী চাপে বিএসইসি সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে শেয়ার ক্রয়ের চাপে রাখছেন। সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা রাখতে বিএসইসির উপর চাপ দিচ্ছে। ফলে বিএসইসি আইসিবি সহ বড় হাউজগুলোকে শেয়ার ক্রয়ের প্রেসার দিচ্ছেন।

আইসিবি’র শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, বিএসইসি’র বাজার স্থিতিশীলতার স্বার্থে ক্রয়ের চাপে রাখছেন। তারা সরকারের নীতি নির্ধারকী পর্যায়ে  পুঁজিবাজার নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফলে সরকার যে কোন মুল্যে পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা রাখতে চায়।

নাম প্রকাশে অনিশ্চিত অর্থমন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, পুঁজিবাজার ইস্যুতে সরকার উদ্বিগ্ন। সরকারের শেষ সময় যে কোন মুল্যে পুঁজিবাজার চাঙ্গা রাখতে চায়। এই জন্য দুই মন্ত্রীতে পুঁজিবাজারের দেখা শেনার দায়িত্ব দিয়েছেন। সম্প্রতি পুঁজিবাজারে টানা দরপতন ঘটায় তারা এ বিষয় উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছেন। তেমনি বিএসইসি’কে চাপে রাখছেন পুঁজিবাজারকে যে কোন মুল্যে স্থিতিশীল রাখতে হবে।

এদিকে পুঁজিবাজা‌রের বর্তমান সংকটাবস্থা কা‌টি‌য়ে উঠ‌তে হঠাৎ স‌ক্রিয় অবস্থা‌নে র‌য়ে‌ছে প্রা‌তিষ্ঠা‌নিক বি‌নি‌য়োগকারীরা। যে কারনে আজ রাজনৈ‌তিক প্রভাব পুঁজিবাজারে প‌ড়ে‌নি। আজ সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শেষ হয়েছে।

এইদিন শুরু থেকে উত্থান-পতন থাকলেও শেষ ভাগে ক্রয় প্রেসারে ঘুঁড়ে দাঁড়ায় বাজার। বৃহস্পতিবার সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। আজ দিন শেষে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি সরকারও পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় কাজ করছে। বর্তমান বাজার স্থিতিশীলতার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডি রেশিও) কমানো সংক্রান্ত সার্কুলারের কার্যকারিতা কিছু সময়ের জন্য স্থগিত রাখার দাবি জানানো হয়েছে। আশা করি বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারের স্বার্থে বিবেচনা করবে।

তাছাড়া পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা, এক্সপোজার রিপোর্টিং পদ্ধতি এবং আইসিবির ভূমিকা সংক্রান্ত বেশকিছু প্রস্তাব রেখেছে সংগঠনটি। ডিবিএর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে এসব প্রস্তাব সংবলিত চিঠি দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, অর্থমন্ত্রীর কাছে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা রিভিউয়ের প্রস্তাব করেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। সব মিলিয়ে আশা করি পুঁজিবাজার ইতিবাচক অবস্থায় ফিরবে। তেমনি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আস্থা ফিরে আসবে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান বাজার বিনিয়োগ উপযোগীবাজার উল্লেখ করে বিনিয়োগকারীদের কোম্পানি দেখে বুঝে শুনে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান তিনি।