bnp khalada lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হচ্ছে বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির একটি মামলায় গত বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বিএনপির চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত দলের নেতারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমেই এগোচ্ছেন।

তাদের সামনে এখন লক্ষ্য দলের চেয়ারপারসনকে জেল থেকে মুক্ত করা এবং একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করা এবং তাতে অংশগ্রহণ করা।

আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করবে বলে প্রত্যাশা করেন তারা। তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে কোনোভাবেই সরবে না বিএনপি। নির্বাচনে অংশ নিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এখন অনড়। এই নির্বাচনে জনগণের রায়ের মাধ্যমে জয়ী হয়ে সরকারের সব ধরনের কর্মকাণ্ডের জবাব দিতে চায় দলটি।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় দলের নেতারা জানান, কোনোভাবেই নির্বাচনের পথ থেকে সরবে না বিএনপি। রায় ঘোষণার পরপরই দলীয় নেতাকর্মীদের ধৈর্যধারণ ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

উপস্থিত দলীয় আইনজীবীদের তিনি বলেন, এ রায় রাজনৈতিক ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রায়ে সরকারের চাপের প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণ এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে।

জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপিপ্রধান বলেন, কোনো ধরনের সংঘর্ষে না জড়িয়ে সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমার সঙ্গে যে অবিচার করা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে জনগণই তার সমুচিত জবাব দেবে। খালেদা জিয়ার তাৎক্ষণিক এ প্রতিক্রিয়ার কথা  আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার নিশ্চিত করেন।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় দলের নেতারা জানান, কোনোভাবেই নির্বাচনের পথ থেকে সরবে না বিএনপি। খালেদা জিয়া কোনো ধরনের সহিংসতা করতে নিষেধ করেছেন। মূলত, জনমতের কথা বিবেচনা করেই এই অবস্থান নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, যে কোনো মূল্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে দলটি। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা একাধিকবার অভিযোগ করে বলেছেন, নির্বাচনে যেন বিএনপি অংশ না নেয় এ কারণেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাজার ব্যবস্থা করেছে সরকার।

দলটির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে জেল দিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভুল করেছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এর মাশুল গুনতে হবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারকে জবাব দেবে বিএনপি। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাস করে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিম্ন আদালতে গেছি। আগামীতে উচ্চ আদালতেও যাব। আমরা আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করে আনব ইনশাল্লাহ। তিনি আরও বলেন, সরকার বিএনপিকে ভয় পায়, সরকার বিএনপি নেত্রীকে ভয় পায়।

এ জন্যই মিথ্যা মামলায় তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। বিএনপি রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়টিরও প্রতিবাদ করবে। আইনি পথেও মোকাবেলা করবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন থেকে বিএনপিকে দূরে রাখতেই দলের চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনের পথেই থাকবে।’

এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্যই মূলত, বিএনপি চেয়ারপারসনকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে নেত্রী জামিন পাবেন বলে তিনি আশা করেন।

আপিলের জন্য তারা ইতোমধ্যে প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন। বিএনপি নেত্রীর জনপ্রিয়তাকে সরকার ভয় পায়। তাই তাকে দণ্ড দিয়ে সরকার আটকে রাখার চেষ্টা করছে। এ অন্যায়ের জবাব নির্বাচনে এ দেশের মানুষ দেবে বলেও তিনি মনে করেন।

গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণা দেওয়ার পরে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের কথা উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৭ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনের পর আমরা যখন দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে কথা বলি, তখন আমরা জানতে চেয়েছিলাম, যদি রায় আপনার বিপক্ষে যায় তাহলে আমরা কী ধরনের কর্মসূচি দেব? জবাবে তিনি বলেছেন, কোনো সহিংস কর্মসূচি দেওয়া যাবে না।

গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেছেন, আমাকে আপনাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা হলেও বিশ্বাস করবেন, আমি আপনাদের সঙ্গেই আছি। আপনারা গণতন্ত্র, অধিকার প্রতিষ্ঠা, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ও জনগণের সরকার গঠনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

গত বৃহস্পতিবার বিকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়াকে ঠিক কী কারণে সাজা দেওয়া হলো সেটিই বিচারক আদালতে বলেননি। তার ভাষ্য, ৪০৯-এর অধীনে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা হলেও এই রায়ে বলা হয়নি কী কারণে খালেদা জিয়া দোষী সাব্যস্ত হলেন।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার অন্যায় যেটা করল এ জন্যই তাদের ভরাডুবি হবে। একটা সিটও পাবে না আগামী নির্বাচনে। বিএনপিপন্থী এই আইনজীবী বলেন, আমি মনে করি, এই রায় বিএনপিকে জনসমর্থন আরও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।