Bangladesh-Bank-Logoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের ৬ ব্যাংক শীর্ষ ঋণ খেলাপির তালিকায় থাকায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীরা মুল পুঁজি নিয়ে দু:চিন্তায় রয়েছেন। দেশে খেলাপি ঋণের মধ্যে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের কাছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। এ ঋণ মোট খেলাপি ঋণের ৬৫ ভাগ। শীর্ষ ঋণ খেলাপি ব্যাংকের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৬ ব্যাংক রয়েছে। পুঁজিবাজারের ব্যাংকগুলো হলো-রূপালী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা ঋণের টাকা সৎব্যবহার করেননি। আবার কেউ কেউ লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন। এ কারণে তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য ঋণ নবায়ন করার জন্য ব্যবসায়ীদেরকে চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু ঋণ নবায়ন করার জন্য যে ন্যূনতম এককালীন অর্থ পরিশোধ করতে হয় (ডাউন পেমেন্ট) তা তারা করতে পারছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের এক ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে তা সৎব্যবহার করেননি। শিল্প কারখানার জন্য ঋণ নিয়েছেন, কিন্তু তা শিল্প কারখানায় ব্যবহার না করে জমি কিনেছেন। কেউবা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামের ব্যাংকিং খাত নিয়ে তারা রীতিমতো আতঙ্কে আছেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ব্যাংকের এমডি, না হয় ডিএমডি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা চট্টগ্রামে যাচ্ছেন। কিন্তু জমিতে বিনিয়োগ করায় তারা ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না।

আবার শুধু জমি বা পুঁজিবাজারেই নয়, কেউ বা বিশ্বাসের ভিত্তিতে (এলটিআর, লিম ইত্যাদি) ব্যাংকের ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু ওইসব ঋণ আর পরিশোধ করেননি। এসব ঋণের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জামানত নেয়া হয়নি। বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঋণ দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের বড় কয়েকটি ব্যবসায়ী উদ্যোক্তার কাছেই বড় অঙ্কের টাকা আটকে রয়েছে। সব মিলে ব্যাংকগুলো ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে অনেকটা নিরুপায় হয়ে পড়েছে। এতে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে চলছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের মধ্যে প্রথম ৫টিই সরকারি। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি। ব্যাংকটির সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের ১৫ ভাগ। এর পরেই রয়েছে জনতা ব্যাংক।

ব্যাংকটির আলোচ্য সময়ে খেলাপি ঋণ ছিল ৮ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ১০ দশমিক ২২ ভাগ। ৯ দশমিক ৬২ ভাগ নিয়ে বেসিক ব্যাংক রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। ব্যাংকটির সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ আগের ত্রৈমাসিকের ৭ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয় ৭ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা।

অগ্রণী ব্যাংকের ৬ দশমিক ৭৯ ভাগ এবং রূপালী ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫৫ ভাগ। বেসরকারি ৫ ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ২৭ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৩ দশমিক ৭৮ ভাগ। এর পরেই রয়েছে পূবালী ব্যাংক ১ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা,

যা মোট খেলাপি ঋণের ২ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ১ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। প্রাইম ব্যাংকের ১ হাজার সাড়ে ৬ শ’কোটি টাকা এবং সিটি ব্যাংকের ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

এ দিকে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কেবল বেড়েই যাচ্ছে না, কিছু কিছু ব্যাংক খেলাপি ঋণ অবলোপনও করছে সমান তালে। ঋণ অবলোপনের দিক থেকে সরকারি ব্যাংকের চেয়ে পিছিয়ে নেই বেসরকারি ব্যাংকও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সমগ্র ব্যাংকিং খাতে পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণ ছিল প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের ঘাড়েই রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা, যা মোট অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণের ৬৯ শতাংশ। খেলাপি ঋণ অবলোপন করা শীর্ষ ১০ ব্যাংকের মধ্যে ৪টি সরকারি ব্যাংক এবং বাকি ৬টি বেসরকারি।

বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ অবলোপন করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটি ঋণ অবলোপন করেছে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা মোট অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণের প্রায় ৫ ভাগ।

এর পরেই রয়েছে প্রাইম ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার সাড়ে ৬ শ’ কোটি টাকা, যা মোট অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণের ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। দি সিটি ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা মোট অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণের সাড়ে ৪ ভাগ।