nbr lagoফাতিমা জাহান ও মোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১১টি বেসরকারী ও সরকারি মালিকাধীন কোম্পানি রাজস্ব সংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবি আরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট, মূসক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গ্রামীনফোন লিমিটেড, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট লিমিটেড, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাটা সু কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড, রেনেটা লিমিটেড, ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড, লিবরা ইনফিউশন লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড।

এসব প্রতিষ্ঠান নানা কৌশলে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবি আর)। ইতোমধ্যে আলোচিত বড় প্রতিষ্ঠানকে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই তালিকায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রয়েছে বেশকিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামও। এনবিআর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সম্প্রতি এনবি আরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) বিভাগ এমন অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে একটি তালিকা তৈরি করেছে। তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইতোমধ্যে বিশেষ নিরীক্ষাও চালাচ্ছে এলটিইউ। এর মধ্যে পুঁজিবাজারের ১১ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এনবি আর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘যারা কর বা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিশেষ করে সরকারের দেওয়া বিভিন্ন ধরনের সুবিধা নিয়ে যারা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে, তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকবে এনবি আর।’

অবশ্য এনবি আর চেয়ারম্যান সংস্থাটিতে যোগ দেওয়ার দিনই দেশের যেসব ধনী কর দেন না, তাদের খুঁজে বের করতে এনবি আরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তার যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এনবি আর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা অনেক বড় বড় ব্যবসায়ীর নাম শুনি, তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি জানি। কিন্তু কর দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা সবার পেছনে থাকেন। আমরা তাদের খুঁজে বের করে সম্মান জানাতে চাই।’

সূত্র জানায়, তালিকায় থাকা প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আমদানি-রফতানি, স্থানীয় ক্রয়-সংক্রান্ত হিসাবের কাগজপত্র, প্রাসঙ্গিক দলিল, আয়কর বিভাগসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আড়াআড়িভাবে যাচাইপূর্বক সম্ভাব্য ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক পরিহার করে বছরভিত্তিক ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করা হচ্ছে। এ জন্য এনবি আরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) থেকে আমদানি-রফতানির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এনবি আর সূত্র জানায়, ভ্যাট ফাঁকি বিষয়ে খতিয়ে দেখতে দু’জন সহকারী কমিশনার ও চারজন উপ-কমিশনারের নেতৃত্বে ৬টি টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এটি তত্ত¡াবধান করছেন এলটিইউ’র একজন অতিরিক্ত কমিশনার।

এদিকে গত পাঁচ বছর কী পরিমাণ ভ্যাট দিয়েছে ও কোন কোন উৎস থেকে দিয়েছে, তাও নিরীক্ষা করে দেখছে এনবি আর। এর আগে উৎপাদন প্রক্রিয়া, মজুদ পণ্য ও সেবা, উপকরণ পরিদর্শন, মূসক পুস্তক, বাণিজ্যিক দলিল, হিসাব ও নথিপত্র, ব্যাংক লেনদেন, অডিট রিপোর্ট জমা দিতে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এলটিইউ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

নজরদারিতে থাকা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে দাবি নামার চিঠিও পাঠানো হয়েছে বলেও এনবি আর সূত্র জানায়। এরই অংশ হিসাবে সম্প্রতি গ্রামীণফোনের কাছে স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে যথাযথভাবে ভ্যাট পরিশোধ না করায় ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা ফাঁকি অভিযোগে চিঠি এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট।

জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশনস সৈয়দ তালাত কামাল বলেন, ‘আমরা এনবিআরের নোটিশ পেয়েছি। বর্তমানে আমরা নোটিশটি পর্যালোচনা করছি, তাই এই মুহূর্তে এ সম্পর্কে আমাদের পক্ষে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।’ এর আগে গ্রামীণ ফোনের কাছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকির দাবিনামা জারি করে এনবি আর।

এর মধ্যে পাওনা ২ হাজার ১৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা আদায়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ চেয়ে সম্প্রতি একটি চিঠি দিয়েছে এনবিআর। যদিও এনবিআরের সব দাবির বিরুদ্ধে গ্রামীণফোন মামলা করায় রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি ঝুলে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করা গেলে ফাঁকি বন্ধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে এনবি আরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সজাগ ও সর্তক থাকতে হবে।’ তার মতে, ‘যে পদ্ধতিতে ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে, সেটি আগে বন্ধ করতে হবে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘কর ফাঁকি ধরলেই হবে না, আইনানুগ ব্যবস্থাও নিতে হবে। তাহলেই কেবল কর ফাঁকি দেওয়া বন্ধ হবে।’

প্রসঙ্গত, বৃহৎ রাজস্ব প্রদানকারী অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকিরও অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েকবছর থেকেই এ বিষয়ে নজরদারি বাড়িয়েছে এনবিআর। এর ফলে গ্রামীণ ফোনসহ চারটি মোবাইল ফোন কোম্পানির বিশাল অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন হয়েছে। বেশকিছু ইস্যু বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।