bsec-dse lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিয়ে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিরোধ দেখা দিয়েছে। টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে শেয়ারের সর্বোচ্চ দর এবং কারিগরি সহায়তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আর্থিক প্রস্তাব দেয়ায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ চীনের দুই প্রতিষ্ঠান সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন কনসোটিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ডিএসইর এ সিদ্ধান্তে বাধ সেধেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

জানা যায়, ডিএসইর পর্ষদকে পরপর দু’দিন (রোববার ও সোমবার) ডেকে নিয়ে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি রীতিমতো শাসিয়েছে। সেই সঙ্গে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করা অপর কনসোর্টিয়ামকে (ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফন্ট ইয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক) কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে চাপ দিয়েছে বিএসইসি। এ কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে বলেও ডিএসইর পর্ষদকে জানিয়েছে বিএসইর শীর্ষ কর্মকর্তারা।

আরও জানা যায়, কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ডিএসইর শেয়ার কিনতে কনসোর্টিয়াম দু’টি টেন্ডারে অংশ নেয়। এর মধ্যে একটি হলো সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন কনসোর্টিয়াম এবং অন্যটি হলো ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফন্ট ইয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ সভায় এ টেন্ডার উন্মুক্ত করা হয়।

টেন্ডারে সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন কনসোর্টিয়াম ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। এজন্য কনসোর্টিয়ামটি ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের দাম দিতে চেয়েছে ২২ টাকা। এর পাশাপাশি ডিএসইকে ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কারিগরি সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

আর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফন্ট ইয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক কনসোর্টিয়াম ডিএসইর ২৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। এজন্য কনসোর্টিয়ামটি ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের দাম দিতে চেয়েছে ১৫ টাকা। পাশাপাশি কারিগরি সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

তবে কী পরিমাণ কারিগরি সহায়তা দেবে, সে সংক্রান্ত কোন তথ্য উল্লেখ করেনি। টেন্ডারে অংশ নেয়া দুই কনসোর্টেয়ামের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে ডিএসইর পর্ষদ মঙ্গলবারের সভায়, সর্বোচ্চ দরদাতা এবং কারিগরি সহায়তার আর্থিক তথ্য সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করায় সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ডিএসইর পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর নড়েচড়ে বসে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম। রোববার ভারত থেকে বাংলাদেশে উড়ে আসেন ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিক্রম মুকুন্দ লিময়ে। ঢাকায় এসে বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনির্ধারিত এক বৈঠকে বসেন।

এরপর ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেএএম মাজেদুর রহমানকে ডেকে নিয়ে যায় বিএসইসি। ওই বৈঠকে বিএসইসি চেয়ারম্যান ও সিংহভাগ কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএসইসির এক কমিশনার ডিএসইর এমডি ও চেয়ারম্যানকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে চাপ দেন।

ডিএসইর প্রতিনিধি দল রাজি না হলে ওই কমিশনার তাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সোমবার ডিএসইর আর একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএসইসি। ওই বৈঠকে ডিএসই প্রতিনিধিদের বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে।

এ সময় ডিএসইর প্রতিনিধিরা বিএসইসি চেয়ারম্যানকে বলেন, এটি করা হলে ডিএসইর ট্রেকহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ট্রেকহোল্ডারা ক্ষতিগ্রস্ত হন এমন কোন সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারবেন না।

এছাড়া কমিশন রোববারের বৈঠকে যে আচরণ করেছে, ভবিষ্যতে এমন আচরণ করলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে দূরত্ব আরও বাড়বে। এ বিষয়ে ডিএসইর পর্ষদের এক সদস্য জানান, রাজনৈতিক চাপের কারণ দেখিয়ে বিএসইসি ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ নতুন বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে।