dseদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নানামুখী বিরোধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত কৌশলগত মালিকানা ইস্যুতে সর্বোচ্চ দর হাঁকা শেনঝেন-সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামকেই চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ডিএসই এ ধরনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ৩২ লাখ বিনিয়োগকারী সহ ডিবিএ নেতারা।

কারন বেশ কিছু দিন ধরেই এ ইস্যুতে সরগরম ছিল ডিএসই। এ নিয়ে দফায় দফায় এক্সচেঞ্জটির সদস্য ও ম্যানেজমেন্টের মধ্যে আলোচনাও চলছে। কিন্তু কোনোভাবেই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সর্বনিম্ন দরপ্রস্তাবকারী ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়ার (এনএসই) কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত মালিকানা দিতে নারাজ তারা। সর্বশেষ শেনঝেন-সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামকেই চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত ডিএসই’র।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, ডিএসই স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার চীনা প্রতিষ্ঠান হলো বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন। তারা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াবো। পুঁজিবাজার দ্রুত বিকশিত হবে।

এদিকে আজ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেছেন, বিএসইসি বিগত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল ও আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করতে অনেক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

এর ফলে বিনিয়োগকারীসহ স্টেকহোল্ডাররা স্বার্থ রক্ষা সুদৃঢ় হয়েছে। আমার এই সাত বছরের দায়িত্ব পালনকালে চেষ্টা করেছি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে। কোনোভাবেই বিনিয়োগকারী এবং স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ বিসর্জন দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডিএসই’র মালিকানায় বিদেশি কোম্পানি এলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন। এতে ডিএসই কারিগরিভাবে শক্তিশালী হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিকভাবেও মর্যাদা পাবে। যা দেশের পুঁজিবাজারে নতুন দিগন্ত খুলবে। ডিমিউচ্যুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জের মূল উদ্দেশ্য ছিলো ডিএসই’র মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা আলাদা করা, বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ এবং কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে মালিকানা দেওয়া।

উল্লেখ্য গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় পর্ষদ সভার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে ডিএসই। তবে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে শেয়ারের সর্বোচ্চ দর এবং কারিগরি সহায়তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আর্থিক প্রস্তাব দেয়ায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ চীনের দুই প্রতিষ্ঠান সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন কনসোটিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্টক এক্সচেঞ্জ, শেয়ারহোল্ডার ও সামগ্রিকভাবে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নিয়মানুসারে সর্বোচ্চ দর হাঁকা কনসোর্টিয়ামকেই কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে ঐক্যবদ্ধ ডিএসইর সদস্যরা। তারা বলছেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে সর্বনিম্ন দরপ্রস্তাবকারীকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বেছে নিলে তা একটি খারাপ দৃষ্টান্ত হবে।

এতে ডিএসইর ২৫০ জন শেয়ারধারী সদস্য বঞ্চিত হবেন। আর্থিক, কারিগরি ও কৌশলগত দিক বিবেচনায় এনএসইর তুলনায় শেনঝেন-সাংহাই কনসোর্টিয়ামকেই এগিয়ে রাখছেন তারা। এনএসই কনসোর্টিয়ামের ২৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার কেনার প্রস্তাব ও ডিএসইর পর্ষদে দুজন পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের পরিপন্থী।

এনএসই সরাসরি শেয়ার কেনার বদলে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি এনএসই স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন লিমিটেডের নামে বিনিয়োগে একমত নন তারা। এনএসই কনসোর্টিয়ামে ইকুইটি পার্টনার হিসেবে থাকা ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স পরিচালিত প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ড ফ্রন্টিয়ার ফান্ড বাংলাদেশ এলএলপির বিনিয়োগের বিষয়টি অনিশ্চিত।

ফ্রন্টিয়ার ফান্ড তাদের জন্য নির্ধারিত ৩ শতাংশ শেয়ার কিনতে না পারলে এনএসই নিজে কিংবা ডিএসইর কাছে গ্রহণযোগ্য অন্য কোনো কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে সেটি বিক্রির কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে আসার পাঁচ বছরের মধ্যে আইপিওর মাধ্যমে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করার প্রস্তাবটি আইন পরিপন্থী।

কারণ ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর ডিএসইকে আইপিওতে আসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কৌশলগত বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রে শেয়ার বিক্রি করতে হলে অন্য কোনো কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছেই বিক্রি করতে হবে।