BSEC_logo_banglanews2420170228221542দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কৌশলগত মালিকানা বাছাইয়ে অবৈধ হস্তক্ষেপ টিআইবি‘র উদ্বেগ: জড়িতদের জবাবদিহি ও সংশ্লিষ্ট দরদাতাকে কালো তালিকাভুক্তর আহবান” গনমাধ্যমে প্রকাশিত এমন শিরোনামের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিএসইসি‘র নিবার্হী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমানের সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞতির মাধ্যমে এ প্রতিবাদ জানান।

প্রেস বিজ্ঞতিতে জানানো হয়েছে, “ডিএসই‘র কৌশলগত মালিকানা বাছাইয়ে অবৈধ হস্তক্ষেপ টিআইবির উদ্বেগ: জড়িতদের জবাবদিহি ও সংশ্লিষ্ট দরদাতাকে কালো তালিকাভুক্তর আহবান” শিরোনামে গত শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কর্তৃক প্রদত্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কয়েকটি সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়টি বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নজরে এসেছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির বক্তব্য নিম্নরুপ- প্রথমত : ডিএসইতে কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিয়োগ সংক্রান্ত কোন প্রস্তাব বিএসইসি এখনও পায়নি। ফলে প্রস্তাবসমূহ কিরুপ, তার শর্তসমূহ কি কি এবং দরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় কি, তা না জেনে বিএসইসির পক্ষে প্রস্তাবসমূহের সুবিধা অসুবিধা বিশ্লেষণ করা এখনও সম্ভব হয় না।

তবে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এবং ডিএসইর সাথে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিএসইসি জানতে পেরেছে যে, উক্ত কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্বাচনে দুটি কনসোর্টিয়াম আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

উল্লেখ্য, ডিএসই কর্তৃপক্ষ এই দুইটি কনসোর্টিয়ামকে নিয়ে একাধিকবার বিএসইসির সাথে বাজার ও সংশ্লিষ্ট আইনের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছে। বিএসইসি এই বিষয়ে অত্যন্ত আনন্দিত যে, ডিএসইর শেয়ার ক্রয়ে দুইটি বড় প্রতিবেশী দেশের দুই কনসোর্টিয়ামের আগ্রহ বাংলাদেশ পুঁজিবাজার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্দেশ করে। বিএসইসি বাংলাদেশ পুঁজিবাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে এতদিন যা বলে আসছিলো, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

টিআইবি শুধুমাত্র সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে যে বিবৃতি প্রকাশ করেছে তা অত্যন্ত দ:খজনক। এই বিবৃতি প্রকাশের আগে টিআইবি, বিএসইসির সাথে কোন রুপ যোগাযোগ করেনি বা বিএসইসির কোন বক্তব্য জানার চেষ্টা করেনি। টিআইবির মত একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনভাবেই বিএসইসি এটি আশা করে না।

বিএসইসি এই ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে এক্সচেঞ্জেস ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন, ২০১৩ এর সংশ্লিষ্ট ধারা সবার জ্ঞাতার্থে নিম্নে উল্লেখ্য করছে: “১২। শেয়ার হোল্ডিং এর সীমা, ইত্যাদি।

(১) ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন এক্সচেঞ্জ এর ক্ষেত্রে – (ক)……… (খ) কোন কৌশলগত বিনিয়োগকারী, কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে, উহার মোট ইস্যুকৃত শেয়ারের ২৫ শতাংশ পষর্ন্ত ধারন করিতে পারবে। (গ)…………

অতএব, এই বিষয়টি স্পষ্ট যে, যখন বিএসইসি, ডিএসই থেকে সব তথ্যসহ সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাবে, তখন বিএসইসির পক্ষে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন সম্ভব হবে। কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনের আগেই টিআইবি যেভাবে তার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএসইসির বিরুদ্ধে অবৈধ হস্তক্ষেপ ও অবৈধ চাপ প্রয়োগের অভিযোগ এনেছে তাতে বিএসইসি অত্যন্ত মর্মাহত। বিএসইসির সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ ব্যতীত টিআইবির মত প্রতিষ্ঠান যে ভিত্তিহীন মন্তব্য করেছে, তা অত্যন্ত আপত্তিকর।

টিআইবি কিভাবে জানলো যে বিএসইসি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজসে বা প্রভাবন্বিত হয়ে অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেছে। এ ধরনের প্রমান টিআইবির কাছে থাকলে তা জনসমক্ষে প্রকাশের জন্য বিএসইসি টিআইবিকে অনুরোধ করছে।

টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞতিতে এও বলা হয় যে, “দর প্রস্তাব মূল্যায়নে প্রায় অর্ধেক পিছিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের এই ধরনের তদবির ও চাপ প্রয়োগ যেমন নজিরবিহীন ও আইনবিরুদ্ধ, বিএসইসি কর্তৃক তাতে প্রভাবিত হয়ে বাছাই প্রক্রিয়াকে কলূষিত করে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে ইন্ধন যোগানো তেমনি বেআইনী ও অগ্রহনযোগ্য “ সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই না করে এ ধরনের চূড়ান্ত মন্তব্য টিআইবির গ্রহনযোগ্যতা প্রশ্নবিদ করে।

যে প্রস্তাব এখনো পায় নাই এবং প্রস্তাব সম্পর্কে এখনো কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করে নাই, সেক্ষেত্রে টিআইবি কি তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে এ মন্তব্য করেছে তা ব্যাখা করলে বিএসইসর পক্ষে জবাব দেওয়া সুবিধাজনক হতো।

বিএসইসি আশা করে টিআইবি ভবিষ্যতে এধরনের একতরফা ও ভূল তথ্যের উপর ভিত্তি করে ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে যোগাযোগ ব্যতিরেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও আস্থা ক্ষুন্ন করে পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকবে।

বিএসইসির উপর অর্পিত আইনানুগ দায়িত্বে আলোকে তার কর্মকান্ড স্বচ্ছতার সাথে পরিপালন করে এসছে। ভবিষ্যতেও বিনিয়োগকারী, পুঁজিবাজার তথা জাতীয় স্বার্থকে সবসময় সমুন্নত রাখবে।

এর আগে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ভারতীয় দরদাতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অবৈধ চাপ প্রয়োগ এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক ডিএসই’র ওপর অনৈতিক হস্তক্ষেপ ও চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

ওই বিবৃতিতে বিএসইসি কর্তৃক এ অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ করে বাছাই প্রক্রিয়ায় শীর্ষস্থানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করা ও অবৈধ চাপ সৃষ্টিকারী দরদাতাকে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। এছাড়া বিএসইসির এ ধরনের হীন প্রচেষ্টায় জড়িতদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, শেয়ারবাজারের উন্নতিতে নেয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ডিএসইর উন্নয়নে আধুনিক যন্ত্রপাতি, কারিগরি দক্ষতা ও উৎকর্ষতা অর্জনে অভিজ্ঞ ও দক্ষ কৌশলগত বিদেশি অংশীদার বাছাই প্রক্রিয়ায় বিএসইসির অনৈতিক প্রভাব সৃষ্টির প্রচেষ্টা দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। রক্ষক হয়ে বিএসইসি ভক্ষকের ভূমিকা পালন করতে পারে না; তাও দরদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজসে বা প্রভাবান্বিত হয়ে।

তিনি বলেন, দর প্রস্তাব মূল্যায়নে প্রায় অর্ধেক পিছিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের তদবির ও চাপ প্রয়োগ যেমন নজিরবিহীন ও আইনবিরুদ্ধ, বিএসইসি কর্তৃক তাতে প্রভাবিত হয়ে বাছাই প্রক্রিয়াকে কলুষিত করে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে ইন্ধন জোগানো তেমনই বেআইনি ও অগ্রহণযোগ্য।

তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিমিউচুয়ালাইজেশন উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় কৌশলগত মালিকানার বিদেশি অংশীদার বাছাই প্রক্রিয়ায় দর প্রস্তাবের নিয়ম অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও শুদ্ধতার ভিত্তিতে নির্বাচিত সর্বোচ্চ দরদাতা, সবচেয়ে যোগ্য ও সুখ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছেই শেয়ার বিক্রি করা হবে, যা স্বাভাবিক, প্রথাগত ও আইনসিদ্ধ।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় উপযুক্ত কারণ ছাড়া সর্বোচ্চ দরদাতাকে বাছাই না করে দ্বিতীয় দরদাতাকে বাছাই করলে তা হবে আইনের ব্যত্যয়। যা পুরো প্রক্রিয়াকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আইন অনুযায়ী ডিএসইর জন্য শুভ ও লাভজনক হবে- এমন সর্বোচ্চ দরদাতা, যোগ্য ও সুখ্যাতিসম্পন্ন কৌশলগত মালিকানার বিদেশি অংশীদার নির্বাচনে ডিএসইকে আইন অনুযায়ী চলতে দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টির দিকে সরকারেরও সচেষ্ট হওয়া উচিৎ বলে মনে করে টিআইবি।

সংবাদ মাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দর যাচাই শেষে আইনানুযায়ী ডিএসই বোর্ড কর্তৃক বাছাইকৃত বিজয়ী পক্ষকে নির্বাচিত করে অনুমোদনের চিঠি বিএসইসিকে না পাঠানোর মৌখিক নির্দেশনায় ডিএসইর শেয়ারধারীসহ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝেও এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।

টিআইবি মনে করে, এ ধরনের ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক আচরণ ও ধসের ধারাবাহিকতা রোধে নেয়া উদ্যোগ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছাবে। বাজার কারসাজি, যোগসাজশ ও কৃত্রিম হস্তক্ষেপের মাধ্যমে যে গোষ্ঠী বারবার বিনিয়োগকারীদের সর্বস্বান্ত করেছে, সে চক্র এ ধরনের অশুভ পাঁয়তারায় লিপ্ত কিনা, তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।

এছাড়া পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে যেন কোনো প্রকার চাপের কাছে নতিস্বীকার করতে না হয় ও ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সৎসাহস থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে টিআইবি।