govt-lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে আবারও বাড়ছে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম। গ্যাসের দাম বাড়ার বিষয়ে আলোচনা করতে সোমবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) গিয়েছিলেন জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। কমিশনের একজন সদস্য বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় তিন মাসে ৫০০ কোটি টাক লোকসান করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এ কারণে আবারো জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।

গ্যাস: আগামী ২৫ এপ্রিল এক্সিলারেট এনার্জির নির্মাণ করা মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল উৎপাদনে আসার কথা। কাজেই এপ্রিল থেকেই গ্যাসের দাম বাড়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।তবে গ্যাস বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় এখনই এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে সম্মত হননি কেউ। বৈঠকটিতে বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম ও জ্বালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী ছাড়াও কমিশন সদস্য, জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গতবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। দুই ধাপে গড়ে ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়ায় বিইআরসি। প্রথম ধাপ ১ মার্চ এবং দ্বিতীয় ধাপ ১ জুন থেকে কার্যকর হয়।

প্রায় একই সময় এলএনজির দাম নির্ধারণে একটি কমিটি করে জ্বালানি বিভাগ। বিইআরসির সদস্য রহমান মুরশেদকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের কমিটিতে জ্বালানি বিভাগ, পেট্রোবাংলা, বুয়েট, আইবিএ এবং বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রতিনিধি ছিলেন।

ওই সময় কমিটির সুপারিশে বলা হয়, এলএনজি আমদানির জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। এই অর্থ সংস্থানের জন্য প্রতি বছর গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বাড়তি অর্থ দিয়ে তহবিল গঠন করা যেতে পারে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট মওকুফ করা দরকার।কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের বিক্রয়মূল্য পড়ে ২ ডলার ১৭ সেন্ট।

অন্যদিকে প্রতি হাজার ঘনফুট এলএনজির দাম ৮ মার্কিন ডলার ও গ্যাসে রূপান্তরের খরচ হবে ০ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার। এলএনজি আমদানি করতে আমদানি শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, টার্মিনাল চার্জ, সঞ্চালন চার্জ, বিতরণ চার্জ, সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাটসহ নানা ধরনের খরচ করতে হয়। এই খরচসহ এলএনজির বিক্রয় মূল্য গিয়ে দাঁড়াবে ২৩ ডলার ১১ সেন্টে। এসডি/ভ্যাট মওকুফ করা হলে এলএনজির দাম হবে ১০ ডলার ৪০ সেন্ট, যা দেশীয় গ্যাসের চেয়ে প্রায় ৮ ডলার বেশি।

এ অবস্থায় কমিটি দুই ধরনের জ্বালানি মিশিয়ে বিক্রির পরামর্শ দিয়েছে। এক্ষেত্রে এলএনজি ও দেশীয় গ্যাস মিশিয়ে বিক্রি করা হলে দাম হবে ৪ ডলার ৩৫ সেন্ট। এই হিসাবেই ওই সময়ই দেশীয় গ্যাসের দাম প্রতি বছর কমপক্ষে ২ শতাংশ হারে বাড়ানোর প্রস্তাব করে কমিটি।

জ্বালানি তেল: গতবছরের নভেম্বর থেকে এই বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত—তিন মাসে বিপিসি প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। প্রতিদিন ১০ কোটি টাকা লোকসান গুনছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগে তারা তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়।

বর্তমানে ডিজেল ও কেরোসিন ৬৫ টাকা এবং পেট্রোল ও অকটেন যথাক্রমে ৮৬ ও ৮৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিপিসি কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১১ টাকা, ডিজেলে ৭টাকা এবং ফার্নেস অয়েলে ১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।

বিপিসি জানায়, এখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ায় কেরোসিনে ১১ টাকা, ডিজেলে সাড়ে পাঁচ টাকা এবং ফার্নেস অয়েলে ১০ টাকা লোকসান করছে। চিঠিতে বলা হয়, সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৬ টাকা লিটারে ডিজেল বিক্রি হচ্ছে যা বিপিসির দরের তুলনায় ২৩ টাকা বেশি। এতে করে দেশ থেকে ডিজেল পাচার হচ্ছে বলে দাবি করছে বিপিসি।

এ অবস্থায় দাম বাড়ানো জরুরি বলে তারা মনে করছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি বিভাগে বিপিসি এই চিঠি দেয়। বিপিসি বলছে, তারা গত বছরের জুনে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ৪৭ ডলারে কিনেছিল, তা বেড়ে বর্তমানে ৭১ ডলার হয়েছে।