dse-up-dowenদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: চলতি বছরের শুরু থেকে পুঁজিবাজারের সূচক ও লেনদেনে মন্দা অব্যাহত রয়েছে। লেনদেন ও সূচকের টানা দর পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে ভীতির সৃষ্টি হচ্ছে। এই দরপতনে কোনো কারসাজি রয়েছে কিনা, তা অনুসন্ধানে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।এই নির্দেশের পরও থামছে না দরপতন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে জানা যায়, বাজারের অব্যাহত পতনে বিনিয়োগকারীদের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থাও চিন্তিত। তাই বাজারে কোনো কারসাজি, অনিয়ম রয়েছে কিনা, তা জানতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তাছাড়া পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সূচকের পতন নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে লেনদেন। কমছে বাজার মূলধন।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চলছে নীরব কান্না। আতাহার আলী নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, মনে হচ্ছে দেশের শেয়ারবাজারের অভিভাবক নেই। স্টক এক্সচেঞ্জ, ডিবিএ, বিএমবিএ এবং বিএসইসির কোনো মাথাব্যথা নেই বাজারের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে। তিনি আরও বলেন, বাজারে তারল্য সংকট চলছে, কিন্তু সমাধানে কোনো সংস্থাই উদ্যোগ নিচ্ছেন না। প্রতিদিনই আমাদের পুঁজি চলে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বাজারের বর্তমান অবস্থা ১৯৯৬ সালের চেয়েও ভয়াবহ। ১৯৯৬ সালের বাজারে ঋণের কোনো বিষয় ছিল না। তখনকার বাজারে বিনিয়োগকারীদের পুরোটাই ছিল তাদের নিজস্ব বিনিয়োগ। তাই তখন যারা শেয়ার নিজের নামে হস্তান্তর করে অপেক্ষা করেছিলেন, তারা দীর্ঘ সময় পর হলেও মুনাফা পেয়েছেন।

কিন্তু এবার টানা দরপতনের কারণে ইতোমধ্যে অনেকেই তাদের নিজস্ব বিনিয়োগের পুরোটাই হারিয়েছেন। এমনকি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ঋণেরও পুরোটাই প্রায় যায় যায় অবস্থায় রয়েছে। এ জন্য বিনিয়োগকারীর চেয়ে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোই এখন ঝুঁঁকিতে রয়েছে।

ডিবিএর সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, আর্থিকবাজারেই তারল্য সংকট রয়েছে। ফলে এর প্রভাব পুঁজিবাজারেও লেগেছে। তিনি বলেন, ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার ডলার কিনেছে।

এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রে গেছে বিপুল পরিমাণ টাকা। আর ব্যাংকগুলোতে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকার কুঋণ রয়েছে। এসব কুঋণের পেছনে আরও প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা চ্যানেলের বাইরে রয়েছে। এ ছাড়া এডিআর রেশিও কমানোর ফলে ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত আমানত সংগ্রহে মনোযোগ দিতে হচ্ছে। ফলে সুদের হার বাড়ছে।

পাশাপাশি ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহে অ্যাগ্রেসিভ ভূমিকা নিয়েছে। ফলে মুদ্রাবাজারে ব্যাপক চাপ রয়েছে। অন্যদিকে মুদ্রানীতিতে অর্থের প্রবাহ কমানো হয়েছে। ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক. ড. মিজানুর রহমান বলেন, আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা, কুঋণ এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা (বিশেষ করে ব্যালেন্স সিটের দুর্বল কোয়ালিটি), সুদের হার বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।