Bangladesh-Bank-Logoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) সীমা পুনর্নির্ধারণ করলেও নতুন নির্দেশনা মানার জন্য ব্যাংকগুলোকে এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে নগদ অর্থের সংকট দেখা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এর আগে ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী ব্যাংকিং থামাতে গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ-আমানত অনুপাত সীমা পুনর্নির্ধারণ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাধারণ ধারার ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করলে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা ঋণ দিতে পারবে। আর ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারবে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা পর্যন্ত।

চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মূদ্রানীতি ঘোষণার সময় ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত বা এডিআর যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তবে এই অনুপাত কমিয়ে আনার জন্য তখন ব্যাংকগুলোকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় দেওয়ার ঘোষণা দেন গভর্নর।

আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সার্কুলারে জানানো হয়েছে, এডিআর কমিয়ে আনার জন্য আরও বেশি সময় পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এডিআর অনুপাত কমিয়ে আনতে জুনের পরিবর্তে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত প্রচলিত ধারার ব্যাংকের জন্য অগ্রিম-আমানত হার সর্বোচ্চ ৮৩.৫০ শতাংশ এবং ইসলামী শরীয়াহ্ ভিত্তিক ব্যাংক এবং প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য বিনিয়োগ-আমানত হার সর্বোচ্চ ৮৯.০

শতাংশতে নির্ধারণপূর্বক যে সব ব্যাংকের অগ্রিম-আমানত হার/বিনিয়োগ-আমানত হার বর্ণিত সীমার বেশি রয়েছে সে সব ব্যাংক-কে ৩০ জুনের মধ্যে ক্রমান্বয়ে তা নির্ধারিত মাত্রায় আবশ্যিকভাবে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

এই নির্দেশনার আংশিক পরিবর্তনক্রমে পরিপালনের সময়সীমা ৩০ জুনের পরিবর্তে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুনঃনির্ধারণ করা হলো।

মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় গর্ভনর ফজলে কবির বলেছিলেন, আমরা ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত বা এডি রেশিও যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের জন্য একটি গাইড লাইন মেনে করি।এবারও সেই গাইড লাইন মেনে এই রেশিও নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থা, এনপিএলসহ (নন পারফরমিং লোন) বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তা নির্ধারণ করা হবে।

তিনি বলেছিলেন, ইতোমধ্যে ২০টি প্রচলিত ধারার ব্যাংক তাদের ঋণ-আমানত অনুপাত বা এডিআর এর সীমা অতিক্রম করেছে। আমরা তাদের সীমার মধ্যে আসার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। যাতে আগামী ৬ মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক অবস্থানে আসতে পারে।

তার মতে, ব্যাংকগুলো আমানত বাড়ানোর মাধ্যমে এটি করবে বলে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। সে সময় ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেছিলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত বা এডিআর অনেক কম। কারণ তারা কোয়ালিটি ঋণের দিকে যাচ্ছে। তবে এসব ব্যাংক এডিআর হার বাড়াবে বলে মনে করেন তিনি।

মূলত ব্যাংকগুলো গ্রাহকের আমানত নিয়েই ঋণ বিতরণ করে। এতে সাধারণ ধারার ব্যাংক ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করলে; তার সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পারে। এক্ষেত্রে ইসলামী ধারার ব্যাংক আরও ৫ টাকা বাড়িয়ে ৯০ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। তবে সম্প্রতি বেশিভাগ বেসরকারি ব্যাংকেরই এডিআর সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এতে ওই সব ব্যাংক ১০০ টাকার মধ্যে ৯০ টাকাই ঋণ বিরতণ করছে। এতেই সৃষ্টি হয়েছে তারল্য বা নগদ টাকার সংকট।