khaleda jia deshprotikhonদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মামলায় পাঁচ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাকে মুক্ত করতে দেশের বাইরে থেকে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এক্ষেত্রে দলটি দুইটি কৌশলে এগোচ্ছে- এক. শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি, দুই. আইনি লড়াই।

এ পর্যন্ত বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি বেশ শান্তিপূর্ণই ছিল। তাদের কর্মসূচি পালনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বাধা আসলেও তারা ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে। এদিকে, আইনি লড়াইয়েও তারা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। শুধু আদালত থেকে রায়ের সার্টিফাইড কপির অপেক্ষায় আছে।

এতিমদের সহায়তার উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে পাঠানো দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি বিশেষ আদালত।

রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। ওই দিনই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। আইন অনুযায়ী রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি (সার্টিফাইড কপি) পাওয়ার পর হাইকোর্টে আপিল করতে পারবেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এ জন্য ওকালতনামায় খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।

তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি না পাওয়ায় আপিল করা যাচ্ছে না। অবশ্য আইনজীবীদের প্রত্যাশা, আগামী রোববার অথবা সোমবার রায়ের কপি পাওয়া যাবে। কপি পেলে আপিল আবেদন করবেন তারা। সেই মোতাবেক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন আইনজীবীরা।

খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করার কৌশল কী- জানতে চাইলে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আদালতের যে সব প্রক্রিয়া রয়েছে আমাদের আইনজীবীরা সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন।

রাজনৈতিক কর্মসূচি: খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর এটি বিএনপির তৃতীয় দফা কর্মসূচি। এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি, ১০ ফেব্রুয়ারি থানা, উপজেলা, জেলা মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ, ১২ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন, ১৩ ফেব্রুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি ও ১৪ ফেব্রুয়ারি অনশন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির এই পাঁচদিনের কর্মসূচি পালন ছাড়াও বিদেশি কূটনৈতিক, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি, পেশাজীবী, আইনজীবী ২০ দলীয় জোটসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলের জ্যৈষ্ঠ নেতারা।

বিএনপির এসব কর্মসূচিগুলো ছিল শান্তিপূর্ণ। দলীয় একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, তারেক রহমানের পক্ষ থেকেও এমনটিই নির্দেশনা এসেছে। এমনকি, কারাবন্দি খালেদা জিয়াও তাকে দেখতে যাওয়া নেতাদের এমনটিই নির্দেশনা দিয়েছেন।

সম্প্রতি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণস্বাক্ষর অভিযানের উদ্বোধনী এক বক্তব্যেও বিএনপি মহাসচিব, সরকারি দলের যে কোনো ধরণের ‘উস্কানিতে’ দলের পা না বাড়ানো জন্য সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। সেই সাথে খালেদা জিয়াকে শান্তিপূর্ণ কমসূচি ও আইনি লাড়াইয়ের মাধ্যমে মুক্ত করার কথাও বলেন তিনি।

বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি সম্পর্কে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘এটা তো আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। দল প্রধানের মুক্তির পাশাপাশি সামনে নির্বাচন রয়েছে। এ কারণে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সভা-সমাবেশ করছি। রাজপথে যখন যেটা প্রয়োজন সেটা আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে পালনের চেষ্টা করছি।’

আইনি লড়াই: ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পরই রায়ের সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। কিন্তু তারা আজও তা হাতে পাননি। আর সেটা পেলেই তারা জামিনের জন্য আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন। সেজন্য আপিলের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তারা। তারা জানান, আপিলের ফাইল প্রস্তুত রয়েছে। রায়ের কপি পাওয়ার পর সেটি পর্যালোচনা করে আপিলের গ্রাউন্ড ঠিক করা হবে।

জামিনের জন্য যে সব যুক্তি থাকতে পারে সে বিষয়ে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন জামিন পাওয়ার যোগ্য। কেননা এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ কম। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। একজন নারী, তার বয়স ও স্বাস্থ্যগত বিষয়টি জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের বিবেচনার বিষয় হবে।

আইনজীবী এহসানুর রহমান জানান, বিএনপি নেতা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকনের চেম্বারে এ মামলার আপিল আবেদনের প্রস্তুতি রয়েছে। এসব বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও তার স্ত্রী।

তবে খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘ করতে সরকার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ আছে বিএনপির পক্ষ থেকে। ইতোমধ্যেই কুমিল্লার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তাকে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, বেগম জিয়ার মামলায় আগে আপিল করা হবে, না কি জামিন আবেদন করা হবে। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবদিন বলেন, প্রথমে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হবে। এর সঙ্গে জামিন আবেদন থাকবে।

জয়নুল আবদিনের মতে, ‘কয়েকটি মামলায় খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সরকার চাচ্ছে না কেবল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া জামিন পেয়ে বেরিয়ে যাক। রাষ্ট্রপক্ষ বিভিন্ন মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তার কারাবাস দীর্ঘ করতে পারে।’

এদিকে, রায়ের কপির জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি আবেদন করেন আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানও রায়ের কপি পেতে আবেদন করেন।