dse-dorpotonফাতিমা জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট কোনভাবেই কাটছে না। আস্থা সঙ্কটের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিক্রয় চাপে তলানিতে পৌঁছেছে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর। এতে করে কোনভাবেই বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না। ফলে পতনের কবল থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার।

এসব কারণে প্রতিদিনই মূলধন হারাচ্ছে ক্ষুদ্র নিয়োগকারীরা। বিগত এক বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে দরপতন হয়েছে।

page 1 (2)বাজারের এ অবস্থা দূর করা সম্ভব না হলে বিনিয়োগে আস্থা হারাতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাছাড়া সাম্প্রতিক বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছেন ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। চলমান এ দরপতনে চরমভাবে আস্থা ও তারল্য সংকটে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতার পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো যাচ্ছে না। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোতে রয়েছে তারল্য সংকট।

এ সমস্যার পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিয়ে চীন ও ভারতের টানাটানিকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আস্থা সংকট তৈরি হয়েছে। ‘এখন বিনিয়োগ করলে লোকসান হবে’ এমন ভয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা হাতগুটিয়ে বসে আছেন। ফলে বাজারে নতুন করে তারল্য সংকট প্রবল আকারে দেখা দিয়েছে। সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার শঙ্কা বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে দরপতনের কারণ অনুসন্ধানে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশন (বিএসইসি) দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে গত সপ্তাহে চিঠি দিয়েছে। তবে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে কোনো জবাব মেলেনি।

বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, অর্থনীতির প্রাণ পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরাতে প্রধান ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের বাজারে ফিরানো। এ জন্য বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্তি¡ক স্তরকে আরো দৃঢ় ও বাজারকে বিনিয়োগবান্ধব করা জরুরি।

গত জানুয়ারী মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাজারে পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। নানা উদ্যোগ নিলে বাজার চাঙ্গা করতে ব্যর্থ হয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জে কমিশন (বিএসইসি)।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উত্থান-পতনের মধ্যে বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে মুনাফা সংগ্রহ করবে এটাই পুঁজিবাজারের ধর্ম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট বাড়ছে।

এতে করে ব্যাপক বিক্রয় চাপে বাজারের সার্বিক মূল্যসূচক নিম্নমুখী হওয়ার পাশাপাশি সার্বিক লেনদেন সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। যা পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য ভীতিকর। তাদের মতে, পুরাতন বিনিয়োগকারীরা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমে আসবে।

বিনিয়োগকারী কবির হোসেন বলেন, বাজার-বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, বাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ উত্তম। কিন্তু টানা দর পতনের বাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে আমাদের আবারো লোকসানে পড়তে হচ্ছে। যা বাজারের জন্য ইতিবাচক।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান বাজার বিনিয়োগের জন্য অনুপযোগী। কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় প্রত্যেক কার্যদিবসেই শেয়ার বিক্রয় করছে। আইসিবি নিস্কিয় ভুমিকা পালন করছে। টালমাতাল বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হতে চলছে।

তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ অনাস্থার কারণে বাজারের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার অবমূল্যায়িত হচ্ছে। বর্তমান বাজার নতুন বিনিয়োগের উপযোগী। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের হাতে পর্যাপ্ত তারল্য না থাকায় তারা বিনিয়োগ করছে না।

পুঁজিবাজারের সার্বিক বিষয়ে এ্যাঙ্কর সিকিউরিটিজের সিইও সাইফুল ওয়াদুদ বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন ‘গুমট’। আর্থিক খাতে চলছে চরম অনিয়ম। এই সময়ে নতুন করে যারা বিনিয়োগ করছেন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে কেউ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন না। আশা ছিলো নির্বাচনের বছর বাজার ভালো থাকবে।

কিন্তু হয়েছে তার উল্টো উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসবের ওপর নতুন করে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানতের অনুপাত (এডিরেশিও) কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ডিএসই’র স্ট্রাটেজিক পার্টনার ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় ঢুকে গেছে। এসবের ফলে বাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে।