dseফাতিমা জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: যতই দিন যাচ্ছে ততই ভারসাম্য হারাচ্ছে পুঁজিবাজার। ফলে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে অস্থির বিনিয়োগকারীরা। বাজারে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই নিম্নমুখী হচ্ছে বাজার। সেই সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই কমছে বাজার মূলধন। বিষয়টি যেমন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভাবিয়ে তুলছে, ঠিক তেমনি বাজার সংশ্লিষ্টদের কাছে এর প্রকৃত কারণ অজানাই রয়ে গেছে।

আর এ কারনে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে বাজারের ভারসাম্য ধরে রাখতে ইনভেষ্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। পোর্টফলিও ম্যানেজারসহ বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী বর্তমানে সাইডলাইনে থেকে বাজার পর্যবেক্ষণে বেশি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া, বিনিয়োগকৃত অর্থের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পাওয়ায় নতুন করে বিনিয়োগে আসছেন না বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী। পরিণতিতে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না। এদিকে টানা দরপতনের মুখে সাত কার্যদিবসে বাজার থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা উদাও হয়ে গেছে। কৌশলগত অংশীদার ও ব্যাংকের এডিআর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ক্রমাগত নিম্নমুখী বাজার।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এডিআর কমানোয় পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়েছে। ব্যাংকগুলো বাড়তি অর্থ জোগাড়ে বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। এতে কেউ কেউ পুঁজিবাজার থেকে মূলধন তুলে নিচ্ছে। আর কৌশলগত অংশীদার নির্বাচনে টানাটানির খবরে বাজারে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, এডিআর কমালেও সমন্বয় করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে। আর কম দাম প্রস্তাব সত্তে¡ও ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বে ত্রিদেশীয় কনসোর্টিয়াম ডিএসইর অংশীদার হতে টানাটানি শুরু করে। বেশি দাম প্রস্তাব ও কারিগরিতে বড় অর্থ সহায়তা বিবেচনায় ডিএসই চীনা স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামকে বেছে নিয়ে চূড়ান্তের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু কিছুতেই দরপতন থামছে না।

ডিএসই সূত্র বলছে, কৌশলগত অংশীদার বাছাইকে কেন্দ্র করে বাজারে দরপতন হচ্ছে। যদিও এডিআর কমানোতেও প্রভাব পড়েছিল। সমন্বয়ে সময় বাড়ানোয় সেই আতঙ্ক কিছুটা কাটলেও আমানতে বেশি সুদ হওয়ায় অনেকে মূলধন তুলে নিচ্ছে। এতে বাজারে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।

বাজারের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, টানা সাত কার্যদিবস দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে সূচকে পতন ঘটছে। একই সঙ্গে কমছে লেনদেনের পরিমাণও। অর্থাৎ গত ১৫ ফেব্রæয়ারি থেকে একটানা নিম্নমুখী পুঁজিবাজারে সূচক কমেছে ৩২৭ পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন কমেছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। অপরবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচক ও লেনদেন ধারাবাহিকভাবেই কমছে।

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৫০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর সূচক কমেছে ৫৭ পয়েন্ট। আগের দিনও সূচকে বড় পতন হয়েছিল। রবিবার সূচক কমেছিল ৭৪ পয়েন্ট। আর লেনদেন হয়েছিল ৩৮৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। সেই হিসেবে সোমবার সূচক ও লেনদেন উভয়ই কমেছে। ৭৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম হ্রাস পেয়েছে। এদিকে সাত দিনে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৮ হাজার ৩৭১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

১৫ ফেব্রুয়ারী ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ১৭ হাজার ৭৮৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। গতকাল এই মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২ হাজার ২৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ পুঁজিবাজারের প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা মূলধন কমেছে। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে এই মূলধন উঠিয়েছে।