bsec-dse lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত অংশীদার হিসেবে শেনঝেন-সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ব্যাখ্যা চেয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পাঠানো চিঠির জবাব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ডিএসই। আগামী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস অর্থাৎ রোববার ডিএসইর পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে জবাব পাঠানো হবে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকালে ডিএসইর নিয়মিত পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কৌশলগত অংশীদারসংক্রান্ত কোনো এজেন্ডা না থাকলেও এ বিষয়ে বিএসইসির ব্যাখ্যা তলবের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চিঠির জবাব দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এর আগে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ডিএসইর দেওয়া প্রস্তাবের ওপর বেশ কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি ইস্যু করেছিল। ডিএসইর প্রস্তাব পর্যালোচনা করতে গঠিত কমিটি গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়। যা চার কার্যদিবসের মধ্যে এই চিঠির জবাব দিতে বলা হয়।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির চিঠিতে চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবে কৌশলগত অংশীদারিত্বসংক্রান্ত চুক্তি যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী সম্পাদন ও যেকোনো ধরনের বিবাদ মীমাংসার ক্ষেত্রে লন্ডনের কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশনের শরণাপন্ন হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের আইন অনুসারে এটি সম্ভব কি না?

এ বিষয়ে ডিএসই বলছে, চীনা কনসোর্টিয়ামের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, এটি খসড়া মাত্র। বিএসইসি তাদেরকে বাছাইয়ের জন্য অনুমোদন দিলে তখন দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই চুক্তি চূড়ান্ত করা হবে। তাই যেকোনো শর্ত সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবিত টেকনিক্যাল সাপোর্টের ভ্যালুয়েশনের ভিত্তি, শেয়ার ক্রয়ের শর্তাবলি, নতুন কৌশলগত বিনিয়োগকারীর অন্তর্ভুক্তি, অংশীদারিত্বপরবর্তী পর্ষদে দুপক্ষের অবস্থান ও এখতিয়ার, নতুন বিনিয়োগ, চুক্তি সম্পাদন, পরিচালন কর্মকাণ্ড, প্রযুক্তি বা অন্য কোনো বিষয়ে মেধাস্বত্ব অর্জন, স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানির আইপিও প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি,

সম্পদমূল্যের ১৫ শতাংশের বেশি স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ, ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ গ্রহণ বা বিনিয়োগ, ১০ কোটি টাকার বেশি আর্থিক মূল্যের কোনো চুক্তি সম্পাদন, নিরীক্ষক নিয়োগ ও কৌশলগত বিনিয়োগকারীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য যেকোনো ইস্যুর বিষয়ে শেনঝেন-সাংহাই কনসোর্টিয়ামের লিখিত অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বিএসইসি বলছে, এতে ডিএসইর পক্ষে কৌশলগত অংশীদারের সম্মতি ছাড়া স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ক্ষুণ্ন হবে।

এ বিষয়ে ডিএসইর বক্তব্য হচ্ছে, পর্ষদে থাকা যেকোনো সদস্যেরই এসব বিষয়ে নিজেদের মত প্রদানের সুযোগ রয়েছে। তাই কৌশলগত অংশীদারের কাছ থেকে লিখিত অনুমোদনের কারণে ডিএসইর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ক্ষণ্ন হবে না। এছাড়া প্রয়োজনবোধে এক্ষেত্রেও শর্ত পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।

সার্বিকভাবে ডিএসই মনে করছে, চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে যেসব ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে, সেগুলোর কোনোটিই চূড়ান্ত নয়। তাই এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। আগামী রোববার ডিএসইর জবাব কমিশনের কাছে পাঠানো হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে যদি কমিশনের অধিকতর কোনো তথ্য কিংবা ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রেও ডিএসই সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

বিএসইসির উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, সার্বিকভাবে যে প্রক্রিয়ায় ডিএসই কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনা কনসোর্টিয়ামকে বাছাই করেছে, তাতে বেশকিছু বিষয়ে স্পষ্টতা বা অন্যান্য ঘাটতি কমিশনের কাছে পরিলক্ষিত হয়েছে। এ কারণেই তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তাদের জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব গ্রহণ করা না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তক্রমে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে শেনঝেন-সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বেছে নেয়ার লিখিত প্রস্তাব বিএসইসিতে জমা দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এ প্রস্তাবের খুঁটিনাটি পর্যালোচনার জন্য নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে কমিশন।

ওই কমিটিতে আরো রয়েছেন নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ড. এটিএম তারিকুজ্জামান ও মো. মাহবুুবুল আলম। মো. মাহবুবুল আলম কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। কমিটি কাজ শুরু করার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনকে তাদের রিপোর্ট জমা দেবে।