senবিশেষ প্রতিনিধি, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: চীন না ভারত, কে হচ্ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) স্ট্রাটেজিক পার্টনার? এমন প্রশ্নে কাদা ছোড়াছুড়িতে অব্যাহত পতনে ভুগছে পুঁজিবাজার। কিন্তু পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠিত কমিটি বলছে, দরপত্রে অযুক্তি কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে উভয় জোট।

যা বাংলাদেশের আইনের পরিপন্থী। তাই তার ব্যাখ্যা চেয়ে পুনরায় স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি’র গঠিত কমিটি। আর এ অযুক্তি শর্ত থাকলে কেউই পাবে না ডিএসই’র অংশীদারিত্ব।

স্ট্রাটেজিক পার্টনারদের প্রস্তাব পর্যালোচনায় গঠিত কমিটির পর্যালোচনায় দেখা যায়, চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম (জোট) এমন কিছু শর্ত দিয়েছে, যা বাংলাদেশের চলমান আইনের পরিপন্থী এবং বিবেচনা করার সুযোগ নাই। এছাড়া ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই) নেতৃত্বাধীন ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সিকিউরিটিজ ডিলারস অটোমোটেড কোটেশন (নাসডাক) কনসোর্টিয়ামের (জোট) প্রস্তাব ডিমিউচ্যুয়্যালাইজেশন আইন পরিপন্থী।

জানা যায়, ডিএসই’র স্ট্রাটেজিক পার্টনারের প্রস্তাব যাচাইয়ে গত ২২ ফেব্রæয়ারি বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদ্য সচিব মাহবুবুল আলম। আর অন্য সদস্যরা হলেন ড. এটিএম তারিকুজ্জামান ও আনোয়ারুল ইসলাম। কমিটি গঠনের পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তাদের প্রতিবেদনে চীন ও ভারতের জোটের বিভিন্ন অযুক্তি শর্ত সামনে আসে।

ডিএসই’র সঙ্গে স্ট্রাটেজিক পার্টনার যুক্তি যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী করার শর্ত দিয়েছে চীনের কনসোর্টিয়াম। যা বাংলাদেশের আইনের পরিপন্থী। এছাড়া কোনো বিবাদ দেখা দিলে লন্ডনের আন্তর্জাতিক আরবিটেশন অনুযায়ী সমাধানের প্রস্তাব এবং নতুন কৌশলগত বিনিয়োগকারী অন্তর্ভূক্তির ক্ষেত্রে চীনের কনসোর্টিয়ামের লিখিত অনুমোদন লাগার শর্ত দিয়েছে। যা বাংলাদেশের আইনের পরিপন্থী বলে মনে করছে বিএসইসি’র পর্যালোচনা কমিটি।

সূত্র জানায়, চীনের জোটের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অযুক্তি শর্তজুড়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ডিএসই’র আইপিও সংক্রান্ত যে কোনো ইস্যু যেমন, শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ, স্পন্সর নির্ধারণ, অবলেখক নিয়োগ, প্রসপেক্টাস অনুমোদন ও ইস্যু মূল্য নির্ধারণের আগে চীনের জোট থেকে লিখিত অনুমোদন নিতে হবে। পরিচালকদের সংখ্যা পরিবর্তনের আগে তাদের অনুমোদন নিতে হবে। এছাড়াও ডিএসই’র আর্টিকেল অব ম্যামরেন্ডামে বেশ কিছু অংশে পরিবর্তন ও সংযোজন করতে হবে।

অপরদিকে, ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই) নেতৃত্বাধীন ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সিকিউরিটিজ ডিলারস অটোমোটেড কোটেশন (নাসডাক) কনসোর্টিয়াম (জোট) ৫ বছর পর যে কারোর কাছে শেয়ার বিক্রির সুযোগ চেয়েছে। যা ডিমিউচ্যুয়্যালাইজেশন আইনের পরিপন্থী।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, ডিএসই’র স্ট্রাটেজিক পার্টনার হতে চীনের দুই এক্সচেঞ্জ সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম (জোট) কারিগরি ও নগদসহ প্রায় ১ হাজার ২৯০ কোটি টাকার প্রস্তাব করেছে।

অন্যদিকে, ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই) নেতৃত্বাধীন ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সিকিউরিটিজ ডিলারস অটোমোটেড কোটেশন (নাসডাক) কনসোর্টিয়াম (জোট) ৬৭৫ কোটি টাকার প্রস্তাব করেছে। এনএসই জোটের পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি।

চীনের জোটের পক্ষ থেকে ডিএসই’র প্রতিটি শেয়ার ২২ টাকা দরে ক্রয়ের প্রস্তাব প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিএসই’র ২৫ শতাংশ শেয়ার অর্থাৎ ৪৫ কোটি শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৯৯০ কোটি টাকা। এছাড়াও কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ৩০০ কোটি টাকার (৩ কোটি ৭১ মার্কিন ডলার) বেশি ব্যয় করবে প্রতিষ্ঠানটি।

অপরদিকে এনএসই জোটের পক্ষ থেকে প্রতিটি শেয়ার ১৫ টাকা দরে প্রস্তাব করা হয়েছে। এনএসই সরাসরি নিজেরা শেয়ার না কিনে সহযোগী বা সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের নামে ২২ শতাংশ শেয়ার কেনার প্রস্তাব করেছে। ৩ শতাংশ শেয়ার কেনার প্রস্তাব করেছে ওই জোটের অংশীদার প্রতিষ্ঠান ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ।

আর কোনো শেয়ার না কিনেই জোটের সদস্য হয়ে ডিএসই’র অংশীদার হতে চায় নাসডাক। এদিকে, বিডিং মূল্যের দিক দিয়ে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশের জোট পিছিয়ে থাকলেও পর্ষদে ২টি পদ চেয়েছে তারা। কিন্তু চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ জোটে ১টি পরিচালক পদ দাবি করে।

বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও প্রস্তাব পর্যালোচনা কমিটির সদস্য সচিব মাহবুবুল আলম বলেন, স্ট্রাটেজিক পার্টনার ইস্যুতে আমরা কিছু বিষয়ে ডিএসই’র ব্যাখ্যা চেয়েছি। আমরা ডিএসই’র ব্যাখ্যার অপেক্ষায় আছি।