alig-lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ৭ মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পোস্টার ও লিফলেট আগামী ৭ মার্চের জনসভাকে ঘিরে রাজধানীতে জনতার শক্তি দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বিশ্ব ঐহিত্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় দিনটিকে এবার ভিন্ন মাত্রায় স্মরণ করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি।

নির্বাচনি বছরে রাজধানীতে প্রথম এই জনসভায় নির্বাচনি আমেজও আনতে চায় তারা। পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বিশাল শোডাউন করে ঢাকার রাজপথে নিজেদের অবস্থানেরও জানান দিতে চায় সরকারি দল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো এ দিনটিতে আয়োজিত হতে যাচ্ছে জনসভা। ইউনেসকোর এ স্বীকৃতিকে বিশেষভাবে স্মরণ করতে তাই বড়সড় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। অবশ্য এর আগে গত বছরের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি বিশ্ব ঐহিত্যের স্বীকৃতি পাওয়ার পর ১৮ নভেম্বর নাগরিক সমাবেশ ও ২৫ নভেম্বর আনন্দ সমাবেশ করা হয়েছিল।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ, সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন এবং দলের ঢাকা মহানগরের উভয় অংশ ৭ মার্চের জনসভাকে সফল করতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে। জনসভার সময় যত এগিয়ে আসছে, প্রস্তুতি তত জোরালো হচ্ছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শুক্রবারও (২ মার্চ) ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার বিভিন্ন স্থানে কর্মীসভা হয়েছে। শনিবারও (৩ মার্চ) থাকছে প্রস্তুতিমূলক নানা কর্মকাণ্ড।

দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শনিবার সকালে নিউমার্কেট ও বিকালে মিরপুর এলাকায় লিফলেট বিতরণ করবেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে দুপুর ১২টায় ইসলামপুর ও বিকাল ৩টায় মুগদায় কর্মীসভা হবে। মহানগর উত্তরের একাধিক স্থানে থাকছে এ ধরনের কর্মীসভা। এই প্রস্তুতি সভা চলবে ৬ মার্চ পর্যন্ত।

আওয়ামী লীগ ছাড়াও সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন এবং ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে নেওয়া হচ্ছে একই ধরনের প্রস্তুতি। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন-প্রত্যাশীরাও নিজ নিজ সমর্থক-জনশক্তির জানান দিতে নিজেদের মতো করে নিচ্ছেন বাড়তি প্রস্তুতি।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত যৌথসভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান,৭ মার্চ স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা হবে। যৌথসভায় তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ঢাকা সিটিতে আমরা এত বড় জনসভা আর করতে পারবো না। তাই এ জনসভাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

সভায় ইউনিয়ন-ওয়ার্ডের নেতারা আসবেন, তারা নেত্রীর (শেখ হাসিনা) বক্তব্য থেকে আগামী একবছরের একটা গাইডলাইন পেয়ে যাবেন। সেটা মনে রেখেই সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে নিয়ে আসতে হবে।’

সূত্র জানায়, এ জনসভাকে কেন্দ্র করে সমাবেশস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ রাজধানীর বিশেষ কয়েকটি পয়েন্টে আলোকসজ্জা করা হবে। এছাড়া ৭ মার্চকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে গোটা রাজধানী ছাপিয়ে গেছে পোস্টার-ব্যানারে। রাজধানীর বড় বড় সড়কের ডিভাইডার ও আইল্যান্ডের লাইটপোস্টে ডিজিটাল ব্যানার লাগানো হয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা ছাড়া প্রত্যেকে জেলা-উপজেলায় দিনটি পালনের নির্দেশ দিয়ে ওবায়দুল কাদেরের সই করা চিঠি দেওয়া হয়েছে।

৭ মার্চের প্রস্তুতি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেসকোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর এই প্রথম দিনটি আসছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সঙ্গে দিনটি পালন করবে। এজন্য এবার আমরা দিনটিকে বিশেষভাবে স্মরণ করতে চাই। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে স্মরণকালের বড় সমাবেশ করতে চাই।’

এক প্রশ্নের জবাবে দলের শীর্ষস্থানীয় এই নেতা বলেন, ‘এই জনসভার সঙ্গে নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে যেহেতু নির্বাচনি বছর চলছে, এই হিসাবে নির্বাচনি আবহ তো সৃষ্টি হতেই পারে।’

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর এই প্রথম দিবসটি পালন করা হবে। এজন্য আমরা বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই। দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি এই সমাবেশে আমরা সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে চাই। তাছাড়া নির্বাচনের বিষয়টিও বিচেনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়ার সঙ্গে বড় ধরনের সমাবেশের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি জেলে না থাকলেও আমরা এবার বড় সমাবেশ করার চেষ্টাই করতাম।’

ঢাকা-৪ আসনের সাবেক ও বর্তমান সংরক্ষিত আসনের এমপি সানজিদা খানম বলেন, ‘৭ মার্চ উপলক্ষে এই সমাবেশ হলেও নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আমরা জনসভায় অংশ নেবো। আমি নিজে মনোনয়ন-প্রত্যাশী। সেই হিসেবে নিজের দিক থেকেও অনুষ্ঠানে সেভাবেই যোগ দেওয়ার একটি প্রস্তুতি থাকবে।’